Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

ভিটামিন ছাড়া নেই কোনও ঘাটতি, হাসপাতাল ছাড়লেন মদন

কেন হাসপাতালে ভর্তি হলেন, কেনই বা হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেন মদন মিত্র, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। সোমবার সকালে থেকে তাঁকে ছুটি দিতে পেরে কার্যত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ১২:২৯
Share: Save:

কেন হাসপাতালে ভর্তি হলেন, কেনই বা হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেন মদন মিত্র, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। সোমবার সকালে থেকে তাঁকে ছুটি দিতে পেরে কার্যত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার মতো কোনও অসুস্থতা এই মুহূর্তে মদনবাবুর নেই।

স্বাভাবিকভাবেই এর পরে প্রশ্ন উঠেছে, জামিন পাওয়ার পরে তড়িঘড়ি এসএসকেএম থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি যাওয়া এবং সিবিআই জামিনের বিরোধিতা করার পরে তড়িঘড়ি অন্য এক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মধ্যে কি তা হলে কোনও স্পষ্ট যোগসূত্র রয়েছে?

আলিপুরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নের উত্তরে নীরব ছিলেন। তবে হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘শারীরিক সমস্যা নিয়ে কেউ হাসপাতালে এলে তাঁকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়াটা জরুরি। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। উনি দীর্ঘদিন ডায়াবিটিসে ভুগছেন। রক্তচাপও বেশি। এই অবস্থায় যদি এসে বলেন বুক ধড়ফড় করছে, ঘাম হচ্ছে, তা হলে আমরা তো ওঁকে ভর্তি না করে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি নিতে পারি না।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, মদন মিত্রের হার্টে তেমন কোনও জটিলতা এই মুহূর্তে নেই। সামগ্রিকভাবে উনি স্থিতিশীল।

এর আগে মধ্য কলকাতার এক ক্লিনিকে তাঁর ভর্তি থাকাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন তুলেছিল সিবিআই। তখন সেই ক্লিনিকের ডাক্তাররা তড়িঘড়ি তাঁকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বেঁকে বসেছিলেন খোদ ‘রোগী’ মদনই। তখন অবশ্য তিনি জামিন পাননি। এ দিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে মদন কোনও আপত্তি করেননি। এ দিন সকালে তাঁর ছেলে এবং কিছু দলীয় সমর্থক তাঁকে নিতে হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল থেকে সোজা বাড়ি ফেরেন তিনি।

আপাতত কোনও অসুস্থতাই কি নেই তাঁর? আলিপুরের হাসপাতালে মদনবাবুর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা হৃদরোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওর ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি খুবই বেশি। প্রতি মিলিলিটারে ২০ ন্যানোগ্রামের কম হলেই সেটা ঘাটতি হিসেবে ধরা হয়, সেখানে ওঁর রয়েছে ৮ ন্যানোগ্রাম। এ ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিসের ভয় রয়েছে। হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই চিকিৎসার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’’ আর হার্ট? তিনি বলেন, ‘‘হার্টের এমআরআই করানো হবে কিছু দিন পর। তখনই বোঝা যাবে।’’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, টানা এক বছর কখনও জেল, কখনও হাসপাতালে কাটিয়েছেন তিনি। তাই শরীরে সূর্যের আলো লাগেনি। সেই কারণেই ভিটামিন ডি-র ঘাটতি রয়েছে। সেই সংক্রান্ত চিকিৎসা জরুরি। এ ছাড়া হৃৎস্পন্দনজনিত কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে তা খুব গুরুতর কিছু নয়। এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ওঁর যে সমস্যাগুলি রয়েছে, পরীক্ষা করলে তা আরও অনেকের মধ্যেই পাওয়া .যাবে। তাঁরা কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি থাকছেন না। নিয়মিত ওষুধ খেলে সবটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শুধু শুধু ওঁকে ভর্তি রেখে আইনি জটিলতার মধ্যে না পড়াই শ্রেয়।’’

দশ মাসের বেশি জেল হেফাজতে থাকার পরে গত ৩১ অক্টোবর আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতে জামিন পান সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত মদনবাবু। এর পরই গত ৪ নভেম্বর সকালে মদন মিত্রের জামিনের বিরোধিতা করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ঠিক সে দিনই হাসপাতালে ভর্তি হন মদন মিত্র। তাঁর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, বিচারবিভাগীয় হেফাজতে এসএসকেএমে ভর্তি থাকার সময়েই ‘প্যানিক অ্যাটাক’ এবং ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র (ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস আটকে যাওয়া) সমস্যা ছিল মন্ত্রীর। স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ার পাশাপাশি অনিয়মিত ঘুমের সমস্যা বাড়ার কথা জানিয়েছিলেন তাঁরা। জানিয়েছিলেন সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যের সমস্যার কথাও। এ দিন আলিপুরের হাসপাতাল স্পষ্টই জানিয়েছে, শরীরের কোনও সমস্যাই এই মুহূর্তে তেমন জটিল নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vitamin-D madan mitra hospitalisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE