সংস্কারের পরে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
একটি পথদুর্ঘটনা এবং এক অভিনেতার মৃত্যু! তার পরেই কার্যত বদলে যেতে শুরু করেছে একটি সড়ক পথে মানুষের নিত্য দিনের হয়রানি
আর আতঙ্কের ছবিটা। তীব্র যানজটের কারণে যে পথ পেরোতে সময় লাগত প্রায় ১ ঘণ্টা, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫-২০ মিনিট। অন্তত এমনটাই দাবি পুলিশের। আর এই ছবিটা পাল্টাতে সময় লেগেছে মাত্র ৬ মাস। খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকা।
যে সড়কপথে এই ‘পরিবর্তন’ তার নাম কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। ১১৭ নম্বর এই রাজ্য জাতীয় সড়কে পথ-দুর্ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু গত ২০ অক্টোবর এই রাস্তায় দুর্ঘটনার জেরে অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ঘটনা টলিয়ে দিয়েছিল নবান্নকেও। এই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে সাঁতরাগাছি রেলসেতুতে একটি লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংর্ঘষে গুরুতর আহত হন অভিনেতা। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই চার-চারবার ওই সেতু পরিদর্শনে যান। সেতুতে দাঁড়িয়ে তিনি হাওড়ার পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও যানজট সমস্যা মেটাতে কোনা এক্সপ্রেসের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে। এ জন্য যা খরচ হবে তা দেবে রাজ্য সরকার।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) সুমিত কুমার জানান, দু’দফায় মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ আধুনিকীকরণ হয়েছে। যানবাহনের গতি বাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। পাশাপাশি, পূর্ত দফতর সাঁতরাগাছি রেল সেতু
সারিয়ে এবং কোনা এক্সপ্রেসওয়েকে নতুন করে পিচ দিয়ে মুড়ে দেওয়ায় যানের গতি বেড়েছে।
কী ভাবে এল এই সাফল্য?
হাওড়া সিটি পুলিশের বক্তব্য, বিদ্যাসাগর সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার লম্বা এই এক্সপ্রেসওয়েতে সাম্প্রতিক কালে যানবাহনের সংখ্যা মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে। আগে যেখানে মেরেকেটে ৩০-৪০ হাজার গাড়ি চলত, এখন দিনে চলে প্রায় দেড় লক্ষ। হাওড়া পুলিশের মতে, হাওড়া স্টেশনের চাপ কমাতে শালিমার ও সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনকে বহু দূরপাল্লার ট্রেনের প্রান্তিক স্টেশন করে দেওয়ায় এবং কলকাতায় ঢোকা ও বেরোনোর জন্য অধিকাংশ যান ওই রাস্তা ব্যবহার শুরু করাতেই এই অবস্থা।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের যানজট কমাতে ধাপে ধাপে যে ব্যবস্থাগুলি নেওয়া হয় তা এ রকম— প্রথমত, কলকাতার দিক থেকে হাওড়ায় ঢোকার সময়ে এবং জাতীয় সড়ক থেকে কোনা এক্সপ্রেসে ঢোকার সময়ে গাড়িগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হয়। দ্বিতীয়ত, দিনে-রাতে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্যবাহী যানবাহন যেমন লরি, ট্রাক, ট্রলার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তৃতীয়ত, রাস্তায় গাড়ি খারাপ হলে তা সরিয়ে রাখার জন্য নির্দিষ্ট
জায়গার ব্যবস্থা হয়। যেমন নিবড়া, কোনা ট্রাক টার্মিনাস, কেসিবিটি
সার্ভিস রোড ইত্যদি। চতুর্থত, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও ট্রান্সমিটার কেনা হয়, যা দিয়ে অনেক দূরে বসেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন পদস্থেরা। পঞ্চমত, একটি লেনকে তিনটি লেন করার ব্যবস্থা করা হয়। যেমন নিবড়া থেকে আসার সময়ে গার্ড লেন বসিয়ে তিনটি লেন করা হয়। ব্যবস্থা করা হয় ১৬টি ট্রাফিক সিগন্যালের। ষষ্ঠত, রাস্তার মাঝে থেমে যাতে বাসগুলি যাত্রী না নামায়, তাই অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছে বাস-বে। সপ্তমত, পুরো কোনা এক্সপ্রেসওয়েকে ২১৫টি সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। যা থেকে ছবি ৬ কিলোমিটার দূরে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে বসে এলসিডি টিভিতে দেখতে পাওয়া যায়। যাতে পদস্থ পুলিশ কর্তারা অফিসে বসেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
হাওড়ার ডিসি ট্রাফিকের দাবি, ‘‘এটি আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। আগে যেখানে দ্বিতীয় সেতু পেরিয়ে শেখ পাড়া থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত নিবড়া মোড় যেতে এক ঘণ্টা লাগত, এখন লাগছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট। হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে এই সাফল্যের একটি সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে যা কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ দফতরে পাঠানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy