Advertisement
E-Paper

দুধে সিদ্ধ হয় মহাষ্টমীর পোলাও

কবে কেটে গিয়েছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাল। তারপর তিনশো বছরে জলঙ্গি দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। কিন্তু পুজো এলেই নদিয়া রাজবাড়ি এখনও ফিরে যেতে চায় সেই কৃষ্ণচন্দ্রের কালে। রাজরাজেশ্বরী দেবীর ভোগ থেকে পুজোর উপাচার, আয়োজন সব যেন আগের মতো। সপ্তমীতে সাতভাজা, অষ্টমীতে আটভাজা, নবমীতে নয় রকম ভাজা ভোগে দেওয়ার রীতি চলে আসছে। একই ভাবে মহাষ্টমীর ভোগে এখনও দেওয়া হয় রাজবাড়ির নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি মিষ্টি পোলাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৫৬

কবে কেটে গিয়েছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাল। তারপর তিনশো বছরে জলঙ্গি দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। কিন্তু পুজো এলেই নদিয়া রাজবাড়ি এখনও ফিরে যেতে চায় সেই কৃষ্ণচন্দ্রের কালে। রাজরাজেশ্বরী দেবীর ভোগ থেকে পুজোর উপাচার, আয়োজন সব যেন আগের মতো। সপ্তমীতে সাতভাজা, অষ্টমীতে আটভাজা, নবমীতে নয় রকম ভাজা ভোগে দেওয়ার রীতি চলে আসছে। একই ভাবে মহাষ্টমীর ভোগে এখনও দেওয়া হয় রাজবাড়ির নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি মিষ্টি পোলাও।

নবমীতে কিন্তু থাকে আমিষ ভোগ। রাজপরিবারে প্রচলিত একটি কাহিনী বলে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নাকি এক মহানবমীর দিনে দেখেছিলেন এক কিশোরীকে। এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে ভোগ খেয়ে হাত চাটতে চাটতে সেই কিশোরী বলেছিলেন, ‘যাও আজ খুব ভাল ভোগ হয়েছে। খিচুড়ি, থোড়, ইলিশমাছ।’ সেই ব্রাহ্মণের বাড়ি গিয়ে রাজা দেখেন, তিনি সবেমাত্র দেবীকে ভোগ নিবেদন করে পুজোর ঘরের দরজা বন্ধ করেছেন। চতুর্দিকে খোঁজ করেও সেই কিশোরীর দেখা না পেয়ে রাজা বুঝেছিলেন, তিনি স্বয়ং দেবী দুর্গা। সেদিন থেকে নদিয়া রাজবাড়ির পুজোয় মহানবমীতে আঁশ ভোগের প্রচলন করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারে সেরা মাছের পদ নবমীর ভোগে দেওয়া হয়। তাতে ইলিশ মাছ থাকবেই।

নদিয়ারাজ পরিবারের অন্তঃপুরের প্রধান রানী নিজের হাতে রান্না করতেন মহাষ্টমীর ওই বিশেষ পদগুলি। এখন এই দায়িত্ব বর্তেছে রাজ পরিবারের বধূ অমৃতা রায়ের উপর। তিনি জানালেন, নদিয়া রাজবাড়ি স্পেশাল ‘মিষ্টি পোলাও’ তৈরির পদ্ধতির কথা। বাসমতী চাল, গাওয়া ঘি, গরম মশলা, কাজু, কিশমিশ, পেস্তা, চিনি, দুধ, খোয়া ক্ষীর, গোলাপজল এবং এক বিশেষ ধরনের হলুদ রঙ ছাড়া মিষ্টি পোলাও হয় না। অমৃতা দেবী বলেন, প্রথমে বাসমতী চাল কিছুক্ষণ গোলাপজলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কাজুবাদাম, কিশমিশ, পেস্তা টুকরো করে রাখতে হবে। এরপর সাধারণ জলে ওই বাসমতী অর্ধসিদ্ধ হওয়ার পরে, একটু একটু করে দুধ মেশাতে হবে। দুধ মেশানো শেষ হলে অল্প আঁচে ওই চাল ফুটবে, আর তাতে মিশানো হবে চিনি, তেজপাতা এবং পরিমাণ মতো নুন। পুরো প্রক্রিয়াটা চলার সময় মিশ্রণটি পিতলের খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। শেষ পর্বে তাতে মেশানো হবে কাজু-কিশমিশ, পেস্তা এবং খোয়া ক্ষীর। পোলাও তৈরি হয়ে গেলে নামানোর আগে মিশিয়ে দিতে হবে গাওয়া ঘি।

অমৃতা দেবী বলেন, “মাঝে কিছু দিন এই মিষ্টি পোলাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বছর বিশেক হল আমি আবার তাকে ভোগের তালিকায় ফিরিয়ে এনেছি। এখন নিজেই ওই পোলাও রান্না করি ভোগের জন্য।”

নবমীর রাতে লুচির সঙ্গে দেওয়া হয় ক্ষীরমোহন ভোগ। সুজি, চিনি, দুধ, ঘি, কিশমিশ, কাজু এবং এলাচের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ওই বিশেষ পদটিও নিজের হাতে তৈরি করেন অমৃতা দেবী। ঘি এবং তেজপাতা দিয়ে হাল্কা বাদামী করে ভাজা সুজিকে দুধে সিদ্ধ করা হয়। মেশানো হবে কিশমিশ। এরপর ক্রমাগত নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে মিশ্রণটি ঝরঝরে হয়। নামানোর আগে কাজু, এলাচ গুঁড়ো মেশাতে হবে। শেষে ঘি ছড়িয়ে নামাতে হবে।

nadia rajbari krishananagar rajbari durga ma mahastami pulao pulao milk pulao
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy