ক্যালিফোর্নিয়াতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুক্রবার রাত পর্যন্ত জানতে পারেননি মৈনাক সরকারের দিদি সৌমি সরকার। সৌমির পরিবারের তরফে অন্তত এদিন সে রকমই দাবি করা হয়েছে।
প্রথমে প্রাক্তন স্ত্রী ও পরে নিজের রিসার্চ গাইডকে গুলি করে আত্মঘাতী হয়েছেন দুর্গাপুরের ছেলে মৈনাক। তাঁর বাবা-মা দু’জনে আগেই প্রয়াত। পারিবারিক সূত্রের খবর, সৌমি কলকাতায় নেই। সপরিবার বেড়াতে গিয়েছেন তিনি। সৌমির শাশুড়ি নুপূর রায়চৌধুরী এ দিন ফোনে বলেন, মার্কিন পুলিশ এখনও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সৌমিরা আমেরিকায় যাবেন কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি।
মৈনাক ও তাঁর দিদি সৌমি বড় হয়েছেন দুর্গাপুরে। তাঁদের বাবা সত্যেন সরকার বেসরকারি সংস্থা এবিএল-এ চাকরি করতেন। স্কুলজীবনের শেষে দুই ভাই-বোন চলে আসেন কলকাতায়। মৈনাক এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তেন খড়্গপুর আইআইটি-তে। সৌমি যাদবপুরে কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। ভাইয়ের মতো তিনিও পরে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলেন। পরে কলকাতায় ফিরে বেসরকারি সংস্থার চাকুরিজীবী চিরদীপ রায়চৌধুরীকে বিয়ে করেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে এখন কলকাতারই দু’টি আলাদা সংস্থায় চাকরি করেন। তাঁদের একটি ছোট মেয়ে রয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলে-মেয়ে কলকাতায় চলে আসার কয়েক বছর পরে সত্যেনবাবু তাঁর স্ত্রী ইরাদেবীকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। সেই বছরই আইআইটি থেকে পাশ করে বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতে যান মৈনাক। ২০০৪ সালে মারা যান ইরাদেবী। সে বছরই দুর্গাপুরে ফিরে গিয়ে বিধাননগরে সেখানকার ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দেন সত্যেনবাবু। পরে তিনিও মারা যান। ফলে মৈনাকের নিকটাত্মীয় বলতে থেকে যান সৌমিই।
জানা গিয়েছে, যাদবপুরের কাছে কাটজুনগরের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন সৌমিরা। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায় ফ্ল্যাটটি তালাবন্ধ। প্রতিবেশীরা জানান, ওই ফ্ল্যাটে ২০০৯-’১০ সালে থাকতেন সৌমিরা। তার পরে ফ্ল্যাটটি ছেড়ে দিয়ে গড়িয়ায় চলে যান। গড়িয়ার ঠিকানা পড়শিরা বলতে পারেননি। তবে কাটজুনগরেই চিরদীপের মা নুপূরদেবী থাকেন বলে জানা গিয়েছে। সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে অবশ্য দেখা যায় সেটিও তালাবন্ধ। প্রতিবেশীদের কাছে মোবাইল নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করলে নুপূরদেবী বলেন, ‘‘ওরা পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছে। সৌমি এখনও আমেরিকার ঘটনার কথা জানে না। আমি কাঁকুড়গাছিতে বোনের কাছে রয়েছি।’’ চিরদীপের অফিসে যোগাযোগ করেও জানা যায়, তিনি দিন কয়েক ধরে ছুটিতে রয়েছেন। এ দিন দুর্গাপুরে মৈনাকের শিক্ষক, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা মৈনাকের ছবি দেখে চিনতে পারেন। প্রত্যেকেই বলেন, ছোটবেলা থেকে পড়াশোনাই ছিল মৈনাকের জগৎ। অঙ্ক ছিল প্রিয় বিষয়। ‘শান্ত, মার্জিত’ বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই মৈনাক কী ভাবে দু’দু’টো খুন করে ফেললেন, যুক্তি দিয়ে তার ব্যাখ্যা পাচ্ছেন না কেউই। মৈনাকরা যে আবাসনে থাকতেন, সেটির একতলায় থাকেন ঝন্টু মাইতি। বয়সে মৈনাকের থেকে বছর দুয়েকের ছোট। এভিবি হাইস্কুলের পড়ুয়া ঝন্টুর খেলার সঙ্গী ছিলেন মৈনাক। আবাসনের সামনের ছোট মাঠে বল নিয়ে খেলতেন দু’জনে। শুক্রবার সেই স্মৃতিচারণ করছিলেন ঝন্টু। বললেন, ‘‘একসঙ্গে কত খেলেছি। বয়সে একটু বড় হলেও নাম ধরেই ডাকতাম। শান্তশিষ্ট মৈনাক কী করে এমন কাজ করতে পারে, ভাবতেই পারছি না!’’
রাজ্য কারা দফতরের অফিসার দেবদীপ দত্তও দুর্গাপুরের স্কুলে মৈনাকের সঙ্গে নার্সারি থেকে একসঙ্গে পড়েছেন। তাঁরও একটাই কথা, ‘‘এত চুপচাপ, ভাল ছেলে কী করে এমন কাণ্ড করল, মাথাতেই আসছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy