Advertisement
E-Paper

জল ধরতে গভীরতা বাড়ছে মাইথনে

বাঁধ না লোকালয়— সুরক্ষার প্রশ্নে অগ্রাধিকার কার, তা নিয়ে বিতর্ক-বিরোধ দীর্ঘকালের। রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেটা মাথাচাড়া দেয়। এ বারেও দিয়েছে।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০

বাঁধ না লোকালয়— সুরক্ষার প্রশ্নে অগ্রাধিকার কার, তা নিয়ে বিতর্ক-বিরোধ দীর্ঘকালের। রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেটা মাথাচাড়া দেয়। এ বারেও দিয়েছে।

রাজ্য সরকারের বরাবরের অভিযোগ, ডিভিসি অতিরিক্ত জল ছাড়ায় রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। পাল্টা জবাবে ডিভিসি বলে, ভারী বৃষ্টি হলে কত জল ছাড়া হবে, সেটা ঠিক করে একটি কমিটি। সেই কমিটিতে রাজ্যের প্রতিনিধিও আছেন। তাদের যুক্তি, ধারণক্ষমতার বেশি জল রাখলে জলাধারগুলি সঙ্কটে পড়তে পারে। তাই টইটম্বুর অবস্থায় বাঁধ বাঁচাতেই খানিকটা জল ছেড়ে দিতে হয়। তবে একান্ত বাধ্য না-হলে জল ছাড়া হয় না।

অনেক সময়েই সেই জলে ভেসে যায় লোকালয়। অর্থাৎ বাঁধ বাঁচাতে যে-জল ছাড়া হল, তাতে বিপন্ন হল জনজীবন। বাঁধ আর লোকালয়ের সুরক্ষা নিয়ে এই টানাপড়েনের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে উদ্যোগী হয়েছে ডিভিসি। তারা পরিকল্পনা করেছে, চার পাশের পাড় উঁচু করে মাইথন জলাধারের ধারণক্ষমতা অনেকটা বাড়ানো হবে। সংস্থা সূত্রের খবর, এখন মাইথন জলাধারের গভীরতা ৪৯৫ ফুট। এটাকে আরও অন্তত পাঁচ ফুট বাড়ানো হবে। তা হলেই অতিরিক্ত এক লক্ষ ২০ হাজার একর ফুট অতিরিক্ত জল ধরে রাখা যাবে। এর ফলে তিন-চার দিন ভারী বৃষ্টি হলেও জল ছাড়তে হবে না।

ডিভিসি-র এক কর্তা জানান, ৪৯৫ ফুট গভীরতার জলাধারকে কী ভাবে ৫০০ ফুটে নিয়ে যাওয়া যায়, তা দেখতে সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা শুরু হবে শীঘ্রই। সমীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় জল কমিশন (সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন বা সিডব্লিউসি) ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে। কমিশনের এক দল প্রতিনিধি সম্প্রতি মাইথন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেছেন। কখন, কী ভাবে সমীক্ষা শুরু করা যাবে, কত টাকা লাগবে, কোনও জমি আদৌ অধিগ্রহণ করতে হবে কি না— এই সব বিষয় যাচাই করে চলতি মাসেই ডিভিসি-কে প্রাথমিক রিপোর্ট দেবে কমিশন।

মাইথন জলাধারে এখন আড়াই থেকে তিন লক্ষ একর ফুট জল ধরে রাখা যায়। অভিযোগ, পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় ডিভিসি-র পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারের জল ধারণক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে। সেই জন্য এক দিন ভারী বৃষ্টি হলেই জল ছাড়তে শুরু করে ডিভিসি। রাজ্য তাই বরাবর এই জলাধার সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে রাজ্য।

পলি তুলে জলাধার সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে না কেন?

ডিভিসি-র বক্তব্য, পলি তুলে কোনও জলাধারের সমস্যার সমাধান করা যায়নি। তা ছাড়া পলি তোলার খরচ যা, তাতে নতুন একটি জলাধার তৈরি করে ফেলা সম্ভব। সমস্যা আরও আছে। পলি তুলে আশেপাশে ফেললে বর্ষার জলে সেই পলি ধুয়ে আবার জলাধারেই পড়বে। সেই জন্যই জলাধারের চার পাশের পাড় আরও উঁচু করে জলধারণের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে আগে মাইথনে এই কাজ করতে পারলে লাভ বেশি। তাই আগে মাইথনই। এখনই অন্য জলাধারের কথা ভাবা হচ্ছে না।

নদী-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, শুধু যে ডিভিসি-র জলাধারগুলির গভীরতা কমেছে, তা তো নয়। রাজ্যের নিম্ন দামোদর উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নদীনালার গভীরতাও কমে গিয়েছে। মজে গিয়েছে বহু নদীনালা। সেখানে গড়ে উঠেছে বসতি। তাই পা়ঞ্চেত বা মাইথন সামান্য জল ছাড়লেই নিম্ন দামোদর উপত্যকার নাভিশ্বাস ওঠে। তাঁদের নিদান, ডিভিসি-র পাশাপাশি নদী সংস্কারে হাত দিতে হবে রাজ্যকেও।

মাইথন বাঁধের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের বলপাহাড়িতে নতুন একটি জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ডিভিসি। প্রস্তাবিত জলাধারের ডিপিআর বা সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা। দুই সরকারই রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে।

DVC Maithon dam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy