Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কী করে এল এত অস্ত্র? পাহাড়ে গোয়েন্দা ব্যর্থতা মানলেন মমতা

গত ৮ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী ও বহু মন্ত্রীর উপস্থিতি সত্ত্বেও গোলমাল বাধে দার্জিলিঙে। এর পরেই তড়িঘড়ি পুলিশ সুপার অমিত জাভালগিকে সরিয়ে দিয়েছিল নবান্ন। পরিস্থিতি সামলাতে তিন অভিজ্ঞ আইপিএস অফিসার সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, অজয় নন্দ এবং জাভেদ শামিমকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাহাড়ে পাঠানো হয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০৪:২৫
Share: Save:

দার্জিলিঙে গোলমালের পিছনে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা মেনে নিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার আলিপুরে পুলিশের এক অনুষ্ঠানে দার্জিলিঙের প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইন্টেলিজেন্স ফেলিওর হয়েছিল। ওরা প্রচুর অস্ত্র মজুত করেছিল তা আগে জানা যায়নি। তার জন্য আমরা ব্যবস্থাও নিয়েছি।’’

গত ৮ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী ও বহু মন্ত্রীর উপস্থিতি সত্ত্বেও গোলমাল বাধে দার্জিলিঙে। এর পরেই তড়িঘড়ি পুলিশ সুপার অমিত জাভালগিকে সরিয়ে দিয়েছিল নবান্ন। পরিস্থিতি সামলাতে তিন অভিজ্ঞ আইপিএস অফিসার সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, অজয় নন্দ এবং জাভেদ শামিমকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাহাড়ে পাঠানো হয়। পুলিশকর্তাদের অনেকেই এ দিন বলেন, গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায়েই যে এসপি-কে সরতে হয়েছে, তা বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

৮ তারিখ দার্জিলিং রাজভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রী রিচমন্ড হিলের পথে রওনা দেওয়ার পরেই মারমুখী আন্দোলনে নামে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দার্জিলিঙের রাজভবনে রীতিমতো বন্দি হয়ে পড়েন মন্ত্রীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, মন্ত্রীরা রাজভবনে থাকার সময়ই ভবনের গেট ঝাঁকিয়ে তাণ্ডব চালায় মোর্চা সমর্থকেরা। পরিস্থিতি এমন ছিল যে রাজভবনে ঢুকে মোর্চা সমর্থকেরা মন্ত্রীদেরও হেনস্থা করতে পারত। কয়েক জন মন্ত্রী জানান, পর্যাপ্ত পুলিশও সে সময়ে সেখানে ছিল না।

প্রশাসন সূত্রের খবর, রিচমন্ড হিলে যাতে কোনও গোলমাল না হয় সে জন্য বিরাট পুলিশবাহিনী সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে রাজভবনে বড় মাপের বাহিনী ছিল না।

আরও পড়ুন:বৈঠকে না রাজ্যের, সুর চড়ল মোর্চারও

শেষ পর্যন্ত প্রশাসনকে স্বস্তি দিয়ে মোর্চা সমর্থকেরা হঠাৎই রাজভবনের সামনে থেকে চলে যান। কিন্তু মন্ত্রীদের সমতলে কী ভাবে নামানো হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন পুলিশ কর্তারা। এই সময় এক পুলিশকর্তা মোর্চা শীর্ষনেতৃত্বের কাছে বার্তা পাঠিয়ে বলেন, মন্ত্রীদের নীচে নামানোর কাজে যেন সহযোগিতা করা হয়। বিমল গুরুঙ্গ তাতে সম্মতি দেন। এর পরেই সে দিন সন্ধ্যায় ৫০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে মন্ত্রীরা শিলিগুড়ি নেমে আসেন। তাঁদের গাড়িতে লুকিয়ে নেমে আসেন কয়েক জন তৃণমূল নেতাও।

ফলে পরিস্থিতির পুরো নিয়ন্ত্রণ যে মোর্চার হাতে ছিল, এবং তাদের কর্মসূচির ব্যাপারে যে পুলিশের কাছে কোনও খবর ছিল না, তা বুঝতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়ে তিনি সরিয়ে দেন পুলিশ সুপার ও জিটিএ-র প্রধান সচিবকে।

এ দিন মোর্চাকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘পাহা়ড় শান্তই ছিল। কয়েকটা গুন্ডা মিলে এমন করছে।’’ ঘটনাচক্রে এ দিনই সকালে গুরুঙ্গের বাড়িতে হানা দিয়ে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, মমতার মন্তব্য পুলিশি অভিযানেই সিলমোহর দিল।

৮ তারিখ মোর্চার আন্দোলনে যে জঙ্গিপনা ছিল তা-ও বলতে গিয়ে মমতা জানান, সে দিন দু’ঘণ্টা ধরে ক্রমাগত শেল ফাটানো হয়েছে। মোর্চা সমর্থকেরা ‘মলোটভ ককটেল’ বোমা ছুড়েছে, মহিলা পুলিশকর্মীদের তাড়া করেছে, পুলিশের গাড়ি, জামাকাপড় সব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লড়তে পুলিশের মনোবল বাড়ানোর দাওয়াইও দিয়েছেন তিনি।

সমাজের কাজে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে মোর্চার হামলায় আহত পুলিশকর্মীদের কথা বলেছেন মমতা। সামনের বছর থেকে পুলিশের পদকের আর্থিক পুরস্কারের মূল্যও এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। ‌

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE