Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ক্ষুব্ধ মমতা, অন্ডাল নিয়ে তৎপর রাজ্য

এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে এ দিনও জানানো হয়েছে— উড়ান বন্ধের যে ঘোষণা করা হয়েছে, তা বদলানো হচ্ছে না। যে বিমানটি সপ্তাহে তিন দিন অন্ডাল থেকে চালানো হচ্ছিল, তাকে অন্য লাভজনক রুটে নিয়ে সরিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।

বুধবার আপাতত শেষবারের মতো অন্ডাল থেকে উড়ল বিমান। ছবি: বিকাশ মশান

বুধবার আপাতত শেষবারের মতো অন্ডাল থেকে উড়ল বিমান। ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৯:৩৯
Share: Save:

দুর্গাপুরের অন্ডাল থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান চালু রাখতে তৎপর হচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বুধবারের পর উড়ান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়় এয়ার ইন্ডিয়া। যদিও অন্ডাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তুকির নামে প্রতি উড়ানে তাদের কাছে অনেকটাই বাড়তি টাকা নিচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। নির্দিষ্ট যুক্তি দেখিয়ে তারা টাকার পরিমাণ কমাতে বলা মাত্রই সরকারি বিমান সংস্থাটি উড়ান বন্ধের ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, এ ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।

মঙ্গলবারই এয়ার ইন্ডিয়া ঘোষণা করেছে, অন্ডাল থেকে তারা আর বিমান চালাবে না। তাদের এই ঘোষণায় ঘুম ছুটেছে নবান্ন কর্তাদের। কারণ কেবল এয়ার ইন্ডিয়াই সপ্তাহে তিন দিন অন্ডাল হয়ে দিল্লি ও কলকাতার মধ্যে উড়ান চালায়। তারা এই উড়ান তুলে নেওয়ার অর্থ, রাজ্যে দেশের প্রথম বেসরকারি বিমানবন্দরটির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়া। মঙ্গলবারই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হবে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়া সব রুটই তো তুলে নিচ্ছে। এরা চালু করার সময় জানায়, বন্ধ করার সময়ে রাজ্যকে জানায়ও না।’’ ক্ষুব্ধ মমতা মন্তব্য করেন— ইউরোপের একটা বিমানও তো কলকাতাকে দিল না। এর পরে উড়ান তুলে নিয়ে অন্ডাল বিমানবন্দরটিও বন্ধ করে দেওয়া হল। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

বুধবার এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, অন্ডাল নিয়ে শীঘ্রই কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে উড়ানটি বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হবে, ওই রুটে যাত্রী কম হওয়ায় বিমান চলাচল লাভজনক হচ্ছে না। অন্ডাল বিমানবন্দরের মালিক বেঙ্গল এরোট্রপলিস (বিএপিএল)-এর কাছে ভর্তুকি বাবদ এয়ার ইন্ডিয়ার যে কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে, রাজ্য যাতে তাদের সেটা অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে বলে— সে কথাও বলা হবে।

এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে এ দিনও জানানো হয়েছে— উড়ান বন্ধের যে ঘোষণা করা হয়েছে, তা বদলানো হচ্ছে না। যে বিমানটি সপ্তাহে তিন দিন অন্ডাল থেকে চালানো হচ্ছিল, তাকে অন্য লাভজনক রুটে নিয়ে সরিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।

উড়ান তুলে নেওয়ার পিছনে পর্যাপ্ত যাত্রী না-হওয়াই প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। সঙ্গে ভর্তুকি বকেয়া থাকার সমস্যা। তবে এই বিষয়টি নিয়ে মতভেদের কারণ রয়েছে বলে মানছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন উড়ান চালানোর জন্য বিএপিএল-এর থেকে ২২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। এই শর্তেই তারা বড় বিমান চালাতে শুরু করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকটা বেশি টাকাই চেয়েছিল সরকারি বিমান সংস্থাটি। কলকাতা থেকে অন্ডাল ঘুরে দিল্লি যাতায়াতে বিমানটির ওড়ার কথা বড়জোর পাঁচ ঘণ্টা। একটি ‘এয়ারবাস ৩১৯’ বিমান চালাতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ হলে, মোট খরচ পড়া উচিত সাড়ে ১৭ লক্ষ টাকার মতো। কিন্তু টিকিট বিক্রি যা-ই হোক, বিএপিএল-এর কাছে ২২ লক্ষ টাকা করে চেয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।

সূত্রের খবর, অন্ডালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান চালু হয়েছে মাস ছয়েক আগে। এর মধ্যে দু’এক দিন বিমান পুরো ভর্তি হওয়ায় টিকিট বিক্রি করে বিএপিএল ১৮ লক্ষ টাকা পেয়েছে। এর অর্থ, বিমান পুরো ভর্তি থাকলেও ৪ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে বিএপিএল-কে। এবং এই উদাহরণকে সামনে এনেই অন্ডালের মালিক সংস্থাটি প্রশ্ন তুলেছে, বিমান পুরো ভর্তি থাকলেও কেন তাদের ভর্তুকি দিতে হবে? বিএপিএল-এর আরও প্রশ্ন, এমনিতে অন্ডাল থেকে দিল্লি যাতায়াতের জন্য দিনে দু’বার করে যে জ্বালানি ভরা হচ্ছিল, তার জন্য রাজ্য সরকার কোনও কর নিচ্ছিল না। বিমানবন্দরে নামা এবং পার্ক করে রাখার জন্য একটি কর দিতে হয়। বিএপিএল সেই কর-ও মকুব করে দিয়েছিল। তাদের প্রশ্ন, তার পরেও কেন ভর্তুকির অঙ্ক কমানো হবে না?

সূত্রের খবর, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মূলত এ সব নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। ভর্তুকির অঙ্ক কমাতে দাবি জানিয়েছিল বিএপিএল। বিমান সংস্থাটি তাতে রাজি হচ্ছিল না। বিএপিএল-এর অভিযোগ, সমস্যা মেটাতে মঙ্গলবার মুম্বইয়ে যখন তাদের সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তাদের বৈঠক চলছিল, তার মধ্যেই কলকাতায় উড়ান তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেওয়া হয়।

বিএপিএল সূত্র বলছে, গত কয়েক মাসে অন্ডাল থেকে দিল্লি রুটে যত যাত্রী পাওয়া গিয়েছে, তা দেখে বেসরকারি কয়েকটি বিমান সংস্থাও অন্ডাল থেকে উড়ান চালানোর কথা ভাবতে শুরু করেছে। দুর্গাপুর, বর্ধমান ছাড়া পানাগড়, রানিগঞ্জ, আসানসোল এবং ধানবাদ থেকেও বহু যাত্রী অন্ডাল থেকে উড়ানে যাতায়াত করছেন। ‘গো এয়ার’-এর কর্তা কমল কাকানি এ দিন ফোনে জানান, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত না-হলেও এটা ঠিক যে আমাদের সঙ্গে বিএপিএল-এর কয়েক বার কথা হয়েছে।’’ মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে বিএপিএল-এর কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সেটা বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকার পেয়ে যাবে। মূলত, কী শর্তে উড়ান চালু হয়েছিল, গত কয়েক মাসে কত যাত্রী হয়েছে— রিপোর্টে সে সব তথ্যও থাকবে। ভর্তুকির অঙ্ক কমানোর কথাও থাকছে রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট হাতে পেলে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী ও পরে বিমান মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন শুভেন্দুবাবু।

নবান্নের কর্তারা বলছেন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে যদি এয়ার ইন্ডিয়া ও বিএপিএল সমঝোতায় আসতে পারে ভাল। না-হলে কবে আবার অন্ডালের আকাশে বিমান উড়ে আসে— সে দিকে চেয়ে বসে থাকতে হবে বিএপিএল-কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Andal Airport Air India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE