রবিবার পাঞ্চেত বাঁধে স্থানীয়দের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র
ভিড় থেকে কথাগুলো ভেসে আসতেই হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক কিশোরী চেঁচিয়ে বলছে, ‘‘দিদি, আপনাকে কিছু বলতে চাই।’’
সময়: রবিবার বিকেল ৫টা। স্থান: পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ায় ডিভিসি-র পাঞ্চেত জলাধারের ব্যারাজ। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ভিড়ের কাছে যেতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে শুনতে হল গ্রামে জল নেই, হাসপাতাল নেই, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা। সব শুনে পাশে থাকা পুরুলিয়ার জেলাশাসককে সমস্যাগুলি দেখতে নির্দেশ দিয়ে ফের হাঁটা শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী। একটু পরেই পরেই আবার তাঁর নির্দেশে ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত এবং পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার। মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রামের মুখপাত্র হয়ে যে স্কুলছাত্রী সমস্যাগুলি জানিয়েছিল, তার সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বললেন দুই পুলিশ কর্তা।
মমতা পরে বলেন, ‘‘কপোর্রেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর)-র আওতায় এ সব কাজ করার কথা ডিভিসি-র। তবে, সেজন্য অপেক্ষা করে থাকলে চলবে না। বিশেষ করে জলসঙ্কট যেখানে তীব্র। আমি প্রশাসনকে বলেছি, এলাকাগুলি চিহ্নিত করে দ্রুত কাজ শুরু করতে। মানুষ আগে জলটা তো পাক!’’
আজ, সোমবার পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন বৈঠক করবেন। আসানসোলের কাল্লায় একটি অনুষ্ঠান সেরে ৩টে নাগাদ তিনি চলে আসেন নিতুড়িয়া ব্লকের গড়পঞ্চকোট পাহাড়ের বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্রে। খানিক বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে তিনি যান পঞ্চকোটের অদূরেই পাঞ্চেত জলাধারে। সঙ্গে কলকাতার মেয়র শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, আইজি, পুরুলিয়া ও বর্ধমানের জেলাশাসক-সহ পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। খবরটা জেনে মমতা সেখানে পৌঁছনোর আগেই ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গাড়ি থেকে নেমে ব্যারাজের এক ধার দিয়ে সপার্ষদ হাঁটতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাঞ্চেতের প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার মুখে স্থানীয় মহেশ নদী গ্রামের লোকজন কিছুটা চেঁচিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের সমস্যার কথা বলতে শুরু করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে আসতেই তাঁর সামনে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে ধরে ওই গ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় লালপুর স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুন্তী রজক।
পাঞ্চেত জলাধারের ঠিক পাশেই ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই গ্রামের সব চেয়ে বেশি সমস্যা পানীয় জলের। কুন্তী বলে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে জলের সমস্যার কথা জানিয়েছি। একটা মাত্র নলকূপই আমাদের ভরসা। গরমের সময়ে জলসঙ্কট মারাত্মক আকার নিয়েছে। নলকূপ খারাপ হলে সেই পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল এনে খেতে হয়।” মহেশনদী গ্রামের অদূরেই ইন্দো-জার্মান জল প্রকল্প থাকলেও তাঁদের গ্রাম ওই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে সেই কথাও জানানো হয়েছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের। স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং গ্রামের রাস্তাঘাট নিয়েও গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন সমস্যাগুলি দেখার জন্য। কুন্তীর কথায়, ‘‘ডিএম সাহেব তাঁরা ফোন নম্বর দিয়ে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরেই তাঁকে সমস্যাগুলি জানাতে। উনি সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ মমতা নিজেও ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, আজ, পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকেও তিনি এই বিষয়টি তুলবেন। যত দ্রুত সম্ভব ওই সব এলাকার সমস্যাগুলি বিশেষ করে জলসঙ্কট মেটানোর নির্দেশ দেবেন প্রশাসনকে।
ডিভিসি-র তরফে পাঞ্চেতের প্রকল্প আধিকারিক সুবোধকুমার গুপ্ত অবশ্য দাবি করেছেন, ওই গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে তাঁরা কিছু কাজ ইতিমধ্যেই করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy