Advertisement
০২ মে ২০২৪

প্রশ্ন ছুড়ে উত্তরও দিলেন ‘দিদিমণি’

বাঁশের ঘেরাটোপের মধ্যে স্কুল ইউনিফর্ম পড়া একদঙ্গল মেয়ে। অদূরে সবুজ পাড় আর ঘিয়ে রঙের তাঁতের শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। চশমা চোখে চেনা ড্রেস কোডের বড়দিমণি। একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন ছাত্রীদের দিকে।

শেষ বিকেল। সিউড়ির চাঁদমারি মাঠে সভা শেষ করে উড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপ্টার। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

শেষ বিকেল। সিউড়ির চাঁদমারি মাঠে সভা শেষ করে উড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপ্টার। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:২৫
Share: Save:

বাঁশের ঘেরাটোপের মধ্যে স্কুল ইউনিফর্ম পড়া একদঙ্গল মেয়ে। অদূরে সবুজ পাড় আর ঘিয়ে রঙের তাঁতের শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। চশমা চোখে চেনা ড্রেস কোডের বড়দিমণি।

একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ছাত্রীদের দিকে। ছাত্রীরা হতবাক! কেউ লজ্জায় মুখ ঢাকছে! কেউ কেউ উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে, নিজেরা মুখ চাওয়াতেই ব্যস্ত। তাতে অবশ্য সবুজ পার ঘিয়ে রঙের তাঁতের শাড়ির খুব একটা কিছু এসেও গেল না। বরং তিনি নতুন, নতুন প্রশ্ন করলেন। আর উত্তর আসার অপেক্ষা না করেই, নিজেই বলে দিলেন উত্তর।

প্রশ্ন কর্তা স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আর ছাত্রীরা ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের এক এক জন সাইকেল প্রাপক। এত কাছে ‘দিদিমণি’-কে পেয়ে আপ্লুত তারা। সারাক্ষণ তুলনা টানার ফিসফিসানি । ভিড়ে কান পেতে লাভপুর গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা দাস, আমোদপুর গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী অনুরাধা মণ্ডলদের বলতে শোনা গেল, “দ্যাখ দ্যাখ, মুখ্যমন্ত্রীকে ঠিক যেন বড়দিমণির মতো লাগছে!’’

শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, ময়ূরেশ্বরের আশাকর্মী লতিকা দাস, লাভপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুপ্রিয়া মণ্ডলদেরও একই অভিব্যাক্তি। তাঁরা বলেন, “সবাই দিদি বলে, কিন্তু যা রাশ ভারী দেখলাম। আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলার ছিল, ভয়ে বলতেই পারলাম না। তবে যে আশঙ্কার কথা বলতে এসছিলাম, দিদি নিজেই তারা জবাব দিয়েছেন। কেন্দ্র সহায়তা বন্ধ করলেও, আমাদের চাকরি যাবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”

বৃহস্পতিবার সিউড়ির চাঁদমারি ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা এভাবেই জমে ওঠে। বক্তৃতার মাঝেই, উপস্থিত ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, আজকে দিনটা ক্ষুদিরাম বসুকে বিশেষ করে মনে রাখার দিন। কেন বলত? ছাত্রীদের কাছে অবশ্য জবাব আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীই বলেদেন, আজ শহিদের জন্মদিন। এর পর একে একে ‘কোন দেশেতে তরুলতা’, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ থেকে শুরু করে জাতীয় সঙ্গীত কার লেখা তা জিজ্ঞাসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে পরেই উত্তরও বলে দেন তিনি।


সভার মাঝেই মমতা-কেষ্ট শলা। —নিজস্ব চিত্র

জেলায় মমতা আসেন বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ চাঁদমারি মাঠে এসে নামেন মমতা। সভাস্থল দেখার পর পুলিশলাইনে যান। সেখান থেকে সিউড়ি বিদ্যুৎ নিগমের বাংলোয় ওঠেন। কিছুক্ষণ কাটিয়ে পাথরচাপুড়ি। সেখান থেকে বক্রেশ্বর অভিমুখে গাড়ি ঘোরান। কিন্তু মাঝ পথে কড়িধ্যায় অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমেও যান। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফের বিদ্যুৎ নিগমের বাংলোয় ফেরেন। বৃহস্পতিবার সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর দুটোয়। কিন্তু মমতা সভায় আসেন সাড়ে বারোটা নাগাদ। তখন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকরা সভায় ঢুকছেন। তারই মাঝে শুরু হয় সবুজ সাথী প্রকল্পে ৭০জন ছাত্রীর হাতে সাইকেল বিলি।

এ দিনের সভায়, অন্যান্যদের মধ্যে হাজির ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার মেয়ের শোভন চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ শতাব্দী রায়, জেলার দুই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। শুরুতে সঞ্চালক মঞ্চে উপস্থিত জনেদের মধ্যে বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরার নাম ঘোষণা করলেও, এ দিন অবশ্য তাঁকে মঞ্চে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীও মঞ্চে উপস্থিতদের সম্ভাষণ করলেও, তাঁর গলায় একবারও উচ্চারিত হয়নি অনুপমবাবুর নাম।

একবারও প্রসঙ্গ ওঠেনি সিউড়ির সাসপেন্ড দলীয় বিধায়ক স্বপন কান্তি ঘোষের নামও। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চন্দ্রনাথ সিংহকে ‘চন্দ্রশেখর’ বলে উল্লেখ করেন। এ দিনের মঞ্চ থেকে তিনি জেলা তথা রাজ্য প্রশাসনের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। ৩২টি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং ৩৫টি প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন। উন্নয়নের জন্য ঢালাও শংসাপত্র দেন জেলাপ্রশাসনকে। বিশেষত, তারাপীঠের উন্নয়নের ব্যাপারে জেলা শাসক এবং বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাথর চাপুড়ি, দাতাবাবার মাজার এলাকা এবং জয়দেব মেলার উন্নয়নের ঘোষণাও করেন। এবারের জয়দেব মেলায় আসার কথাও বলেন। জানান, ‘‘দেউচায় ভারতের সব থেকে বড় কয়লা খনি হবে। বহু যুবকের কর্মসংস্থান হবে। কেন্দ্র পাঁচটি রাজ্যকে নিয়ে ওই প্রকল্প গড়তে চাইছে। কিন্তু, আমরা বলেছি দায়িত্বটা আমাদের দিন। কারণ একজন নড়লে আরেক জন নড়তে চায় না। তাতে প্রকল্পের দেরি হবে। অন্ডাল থেকে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ তৈরি হবে। তাতে এ জেলার মানুষকে কলকাতায় গিয়ে প্লেন ধরতে হবে না।’’ এ দিন মমতা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ডায়ালিসিস সেন্টারের কথাও উল্লেখ করেন। সভা থেকেই চালু করেন, ৪টি এসবিএসটিসি বাস।

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কংগ্রেস এবং সিপিএমের মধ্যে একসময়ে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল। সেই জন্যই কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার, রাজ্যের প্রাক্তন সিপিএম সরকারকে দেদার ঋণ দিয়ে গিয়েছে। এক এক জনের ঘাড়ে প্রায় তিরিশ হাজার টাকার দেনা চাপিয়ে দিয়েছে সিপিএম। এই প্রসঙ্গেই, বিরোধীদের কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন মমতা। বলেন, “বছরে চল্লিশ হাজার কোটি টাকা আয় হয়। তার মধ্যে ঋণ শোধ করতেই চলে যায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। সীমিত এই টাকার মধ্য দিয়েই আমি দেড় হাজার কোটি টাকা দিয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালাচ্ছি। চারিদিকে উন্নয়ন হচ্ছে। বিরোধীরা করে দেখিয়ে দিক। কথা দিচ্ছি, আমি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে দিয়ে চলে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mamata bandyopadhyay administrative meeting suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE