Advertisement
০৪ মে ২০২৪

খরচ ছাঁটাইয়ের লক্ষ্য নিয়ে জল্পনা

অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশ  এই সরকারি সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দু’টি কারণই দেখছেন। তাঁদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, ২০০৬ সালে সরকারি কর্মীদের বেতন কমিশন ঘোষণার আগে-পরে বামফ্রন্ট সরকার ব্যয়সঙ্কোচ করেছিল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫৩
Share: Save:

রাজ্যে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন সাত বছর আগে। এই প্রথম ব্যয়সঙ্কোচ নীতি ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সরকারি মহলে যেটাকে বলা হচ্ছে ‘আর্থিক এমবার্গো’। প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন, যে-সব ক্ষেত্রে ব্যয়সঙ্কোচের কথা বলা হয়েছে, তাতে আদৌ মোটা টাকা বাঁচানো যাবে কি? যদি না-যায়, তা হলে ব্যয়সঙ্কোচের নীতি কেন?

অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশ এই সরকারি সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দু’টি কারণই দেখছেন। তাঁদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, ২০০৬ সালে সরকারি কর্মীদের বেতন কমিশন ঘোষণার আগে-পরে বামফ্রন্ট সরকার ব্যয়সঙ্কোচ করেছিল। এবং সেটা চলেছিল বেশ কয়েক বছর। বাম অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের সময়ে বেশ কয়েক বার ব্যয়সঙ্কোচের নীতি গ্রহণ করে নানান ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মমতার আমলে অবশ্য সরকার এই প্রথম অর্থসঙ্কটের কথা মেনে নিয়ে খরচ কমাতে কোমর বাঁধছে।

নবান্নের একাংশের বক্তব্য, ২০১৭-’১৮ সালের বাজেটে ১৯ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা রাজকোষ-ঘাটতির কথা বলা হয়েছিল। প্রাথমিক ফলাফলে বছর শেষে সেই ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার কোটি। যদিও এখন অডিট পর্ব সাঙ্গ হয়নি। বাজেটে তিন লক্ষ টাকার রাজস্ব-ঘাটতির কথা ছিল। বছরের শেষে সেটা হয়েছে ১০ হাজার ৯০৬ কোটি। অর্থকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছরের এই ফলাফলই মাথাব্যথার মূল কারণ। কারণ, গত বছর করের টাকার যা প্রাপ্য ছিল, কেন্দ্রের কাছ থেকে তার চেয়ে ছ’হাজার কোটি টাকা কম এসেছে। কেন্দ্রীয় অনুদানও ১০ হাজার কোটি কম মিলেছে। এই দুই ক্ষেত্রে আয় কমলেও পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাতের খরচ কমানো যায়নি।

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা, তাতে এ বারেও কর বাবদ কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকার পুরোটা পাওয়ার আশা কম। কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে কম মিলতে পারে কেন্দ্রীয় অনুদানও। তার উপরে রয়েছে বছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা ঋণশোধের দায়। এই অবস্থায় খরচ কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, রাজ্যের নিজস্ব আয় খুব বাড়বে, তেমন আশা কম,’’ বলছেন নবান্নের ওই কর্তা।

অর্থকর্তাদের একাংশ মনে করেন, উপায় একটাই এবং সেটা হচ্ছে পরিকল্পনা-বহির্ভূত খরচ কমানো। কিন্তু এই খাতের টাকায় বেতন, পেনশন আর ঋণের সুদ মেটানো হবে। এর বাইরে পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাতের খরচ কমাতে পারলে ফলপ্রসূ হবে ব্যয়সঙ্কোচ নীতি। তবে মেলা-খেলার খরচ, কর্মী-অফিসারদের যাতায়াতের খরচ, গাড়ি, বা বাতানুকূল যন্ত্রের খরচ কমিয়ে বিপুল টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ কম।

তা হলে এমন নির্দেশিকা কেন?

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, আসলে সর্বত্র খরচ কমানোর বাতাবরণ তৈরি করা জরুরি। সেই চেষ্টাই হচ্ছে। নিয়োগ এক প্রকার বন্ধ রাখলে বাড়তি খরচ হবে না। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, সরকারি কর্মীদের মধ্যে বেতন কমিশনের দাবি জোরদার হচ্ছে। সেই প্রত্যাশার মুখে সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি যে মোটেই ভাল নয়, তা জানিয়ে রাখাই শ্রেয় মনে করছে নবান্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE