Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পনেরো দিনেই দিতে হবে মজুরি

দুপুরে শালতোড়ায় জনসভা, বিকেলে বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেমন কাজ চলছে খোঁজ নিলেন, সেই সঙ্গে দিলেন কিছু পরামর্শও।বুধবার বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলেও নজরদারিতে সেই একই ব্যবস্থা নিতে বললেন তিনি। এই জেলার সীমানায় ঝাড়খণ্ড না থাকলেও একসময়কার মাওবাদী নাশকতা ঘটে যাওয়া এলাকাগুলিতে পুলিশের তল্লাশি কেমন চলছে তা নিয়ে বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাওয়ের কাছে খোঁজ নিলেন। সতর্কও করলেন। 

আলোচনা: প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে বুধবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

আলোচনা: প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে বুধবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:১৬
Share: Save:

নজরে জঙ্গল

ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জেলাগুলির সীমানায় আগের দিন ওয়াচ টাওয়ার ও সিসিফ্যামেরা (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) বসিয়ে নজরদারি চালাতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলেও নজরদারিতে সেই একই ব্যবস্থা নিতে বললেন তিনি। এই জেলার সীমানায় ঝাড়খণ্ড না থাকলেও একসময়কার মাওবাদী নাশকতা ঘটে যাওয়া এলাকাগুলিতে পুলিশের তল্লাশি কেমন চলছে তা নিয়ে বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাওয়ের কাছে খোঁজ নিলেন। সতর্কও করলেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সীমানায় ঝাড়খণ্ড নেই বললে হবে না। ঝাড়গ্রাম, ঝিলিমিলি হয়ে বাঁকুড়া আসার পথ ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সীমানা হচ্ছে বাড়ির বারান্দার মতো। সিসিটিভি, ওয়াচটাওয়ার গড়ে নজর রাখুন ওই এলাকায়।”

তবে, একই সঙ্গে উন্নয়নমূলক কাজও মানুষের কাছে ঠিক মতো পৌঁছচ্ছে কি না, তা নিয়েও আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের সচেতন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন দুপুরে শালতোড়ার জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘দেখতে হবে, কেউ যেন না বলেন, চাল পাননি। মানুষ ঠিক মত রেশন পাচ্ছেন কি না, জনপ্রতিনিধিরা রেশন দোকানে নজর রাখুন। খারাপ চাল এলে অভিযোগ করবেন।”

একশো দিন

একশো দিনের প্রকল্পের কাজ করেও টাকা পেতে দেরির নালিশ প্রায়ই ওঠে। শালতোড়ার মমতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “একশো দিনের কাজের টাকা সময় মত দিতে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।” এখনও কতগুলি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই, তা তিনি প্রশাসনিক বৈঠকে লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছে জানতে চান। লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানান, ৩৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রী ওই সব এলাকায় সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘ “একশো দিনের কাজের টাকা ১৫ দিনের মধ্যেই দিতে হবে।”

ধানে নজর

বৃষ্টিপাতের অভাবে জেলার বেশ কিছু এলাকায় খরা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে সব এলাকায় বিকল্প কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান। প্রশাসনিক কর্তারা জানান, ওই সব এলাকায় ডালশস্য চাষ ও একশো দিনের প্রকল্পের কাজ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সমস্ত গরীব মানুষ যাতে একশো দিনের কাজ পান তা দেখতে হবে।” কৃষির সমস্যা জানতে কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারকে এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ফিল্ডে থেকে কাজ করুন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও বীরভূম জেলাগুলির চাষের সমস্যা মেটাতে বিভিন্ন দফতরকে এক সঙ্গে নিয়ে ‘সিনার্জি’র (শিল্প সম্মেলন) মতো বৈঠক করে সমস্যা মেটাতে হবে। আর চাষিদের কোনও সমস্যা হলে বলবেন আমি দেখে নেব।”

স্বাস্থ্য-কথা

জেলার স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন, ওন্দা ব্লকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা জেলার অন্যান্য ব্লকগুলির তুলনায় কম। এরপরেই ওন্দার বিধায়ক অরূপ খানকে তিনি নির্দেশ দেন, বিধায়ক, পুলিশ সুপার, সাংসদ, ওন্দার ওসি সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের বিষয়ে সচেতন হোন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া মেডিক্যালের খোঁজ নেন। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান জানান, স্বাস্থ্যভবনে যে সব দাবিদাওয়া জানানো হয়েছিল, তার বেশির ভাগই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যদিও, বাঁকুড়া মেডিক্যালের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ কম নেই। সে সব কথা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন প্রশাসনেরই কিছু আধিকারিক। তাঁরা জানাচ্ছেন, ইউরোলজি বিভাগ কয়েক মাস ধরে বন্ধ, অস্ত্রোপচারও হচ্ছে না। হাসপাতালে রোগীর তুলনায় শয্যা কম। মেঝেয় ঠাঁই হচ্ছে রোগীদের। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় রোগীর আত্মীয়দের স্ট্রেচার বইতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন সমস্যাগুলি তুলে ধরলেন না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।

জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বাঁকুড়া মেডিক্যালের পরিকাঠামো নিয়ে নানা সমস্যার কথা হাসপাতাল আমাদের জানায়। অথচ মুখ্যমন্ত্রীকে নাগালে পেয়েও তাঁরা বললেন, সব ঠিক আছে!’’ যদিও অধ্যক্ষের দাবি, ‘‘সমস্যাগুলি স্বাস্থ্যভবন জানে। সমাধানের কাজও শুরু হয়েছে। তাই আলাদা করে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তা তুলে ধরার প্রয়োজন ছিল না।’’

আরও কিছু

গ্রামীণ এলাকার রাস্তা নিয়েও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পূর্ত দফতরকে হস্তান্তর করার কাজে গতি আনার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকে বিডিওদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় কেমন কাজ হচ্ছে তা জানতে চান।

অবৈধ বালি খাদান নিয়ে এ দিন বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকেও সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান, সব বালি ঘাটের নিলাম হয়েছে কি না। পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘অবৈধ বালি খাদান চলবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Administrative Meeting Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE