Advertisement
১৯ মে ২০২৪
শ্লথ শিল্পায়নকে কটাক্ষ বিরোধীর
Private Cement Factory

ছ’শো কোটির সিমেন্ট কারখানা জঙ্গলসুন্দরীতে

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে শিল্পায়নকে ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

নিতুড়িয়ায় সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধনে বড় পর্দায় মুখ্যমন্ত্রী।

নিতুড়িয়ায় সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধনে বড় পর্দায় মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৪
Share: Save:

রঘুনাথপুরের ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’ শিল্পনগরীতে একটি বেসরকারি সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতা থেকে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে কারখানার উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধনের পরে বক্তব্যে ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’তে জমি ব্যাঙ্কের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীতে আমরা বড় শিল্প করিডর তৈরি করেছি। ৭২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। সেখানেই শ্রী সিমেন্ট সাড়ে ছ’শো কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বড় মাপের কারখানার গড়েছে।” কারখানার অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো থেকে শুরু করে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, দুই বিধায়ক ও প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা।

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে শিল্পায়নকে ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রঘুনাথপুর মহকুমার তিন ব্লক—নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লককে নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ১ ও ২’। পরে ২০২১-র ফ্রেবুয়ারিতে রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লক সহ নিতুড়িয়াকে নিয়ে রাজ্য সরকার তৈরি করেছে ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’।

তবে রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রঘুনাথপুরে এই দ্বিতীয় কোনও বড় মাপের কারখানার সূচনা হল। এর আগে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাঁতুড়িতে একটি ইস্পাত কারখানার উদ্বোধন করেছিলেন। এ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে বিরোধীদের বক্তব্য, রঘুনাথপুরে শিল্পতালুক গড়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পরেই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে শুধু কাগজে-কলমে রয়ে গিয়েছে শিল্পতালুক। বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, “বাম আমলে রঘুনাথপুরে শিল্পতালুক গড়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শিল্প হয়নি। এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, নতুন সরকার শিল্প করবে। তবে গত ১২ বছরে মাত্র একটি কারখানারই উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে যে দল শিল্প তাড়িয়ে ক্ষমতায় আসে, তাদের কাছে শিল্পায়নের আশা করাটাই ভুল।”

অভিযোগ মানতে নারাজ মন্ত্রী মলয় বলেন, “সমালোচকেরা অনেক কথাই বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে নিতুড়িয়ার এই সিমেন্ট কারখানায় প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিই বদলে যাবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ারও দাবি, বিরোধীরা ভুলে যাচ্ছেন যে, রঘুনাথপুরেই ছ’শো একর জমিতে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সুসংহত ইস্পাত কারখানা গড়তে শুরু করেছে একটি ইস্পাত সংস্থা। আরও কিছু শিল্প সংস্থা রঘুনাথপুরে বড় মাপের শিল্প গড়তে রাজ্যের কাছে জমি চেয়েছে। জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীতে শিল্পের নবজোয়ার শুরু হয়েছে।

ঘটনা হল, মাত্র ১৬ মাসের মধ্যে বড় মাপের সিমেন্ট কারখানা তৈরির পেছনে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অন্যতম কারণ বলে মনে করছে ওই শিল্প সংস্থা। কারখানা গড়তে শাসকদল ও প্রশাসনের সহযোগিতার প্রসঙ্গও তুলছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, বছর কয়েক আগে ওই সিমেন্ট সংস্থা নিতুড়িয়ার দীঘা পঞ্চায়েত এলাকায় পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কারখানার জন্য জমি পরিদর্শন করেছিলেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জমি কেনে সংস্থাটি। ১৬ মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়।

সংস্থার ‘ক্লাস্টার হেড’ মনোজকুমার শ্রীবাস্তবের দাবি, “কারখানার নির্মাণকাজে শ্রমিকদের সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল। ওই পর্বে দুর্ঘটনায় কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হয়নি।” তাঁর সংযোজন, “কারখানার ৪৫০ জন কর্মীর মধ্যে ৯২ শতাংশ স্থানীয় বা রাজ্যের বাসিন্দা।” সিমেন্ট উৎপাদনে দেশের অন্যতম নামী এই সংস্থা রাজ্যে এই প্রথম কোনও কারখানা তৈরি করল, যেখানে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনও
শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nituria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE