Advertisement
E-Paper

ডিএম-দের মোদী-মুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যেতেই দিলেন না মমতা!

সন্ধ্যা সাতটায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সাতশো জেলাশাসকের সামনে বক্তৃতা দেন নরেন্দ্র মোদী। এখানেও উপলক্ষ ভারত ছাড়ো আন্দোলন। লক্ষ্য পরের পাঁচ বছরে কোন ‘নিউ ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন তিনি দেখেন, তা সবিস্তার জানানো।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৮
পরামর্শ: মেদিনীপুরে বিজেপি বিরোধী লাগাতার আন্দোলনের সূচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী ও মুকুল রায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

পরামর্শ: মেদিনীপুরে বিজেপি বিরোধী লাগাতার আন্দোলনের সূচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী ও মুকুল রায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বিজেপির বিরুদ্ধে জেহাদ অব্যাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বুধবার মেদিনীপুরের সভা থেকে বিজেপি-কে ভারত-ছাড়া করার ডাক দিলেন মমতা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সভায় যেতে দিলেন না রাজ্যের ২৩টি জেলার জেলাশাসককে।

এ দিন সন্ধ্যা সাতটায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সাতশো জেলাশাসকের সামনে বক্তৃতা দেন নরেন্দ্র মোদী। এখানেও উপলক্ষ ভারত ছাড়ো আন্দোলন। লক্ষ্য পরের পাঁচ বছরে কোন ‘নিউ ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন তিনি দেখেন, তা সবিস্তার জানানো।

কিন্তু নীতি আয়োগ আয়োজিত ‘মন্থন’ নামের এই বৈঠকে রাজ্যের জেলাশাসকদের যোগ দেওয়ার অনুমতি দেননি মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের খবর, আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত বেশ কয়েক বার চিঠি লিখে এ রাজ্যের জেলাশাসক ও সিনিয়র অফিসারদের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার কথা জানান। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন ডিএম’দের এই ভাষণ শোনার কোনও প্রয়োজন নেই। শিষ্টাচারের স্বার্থে সিনিয়র আমলাদের কেউ কেউ যোগ দিলেই হবে।

আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে মমতা সরকারের টানাপড়েন এই প্রথম নয়। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন ডিএম’রা রাজ্যের অফিসার। তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এবং রাজ্যের নীতি মেনেই কাজ করা উচিত।’’ ওই কর্তার বক্তব্য, এর আগেও রাজ্যকে এড়িয়ে কেন্দ্র আমলাদের প্রভাবিত করতে চেয়েছে। নতুন আমলারা কাজে যোগ দেওয়ার আগে কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবাদ করেছেন যে ভাবে আমলাদের সঙ্গে কেন্দ্র সরাসরি যোগাযোগ করছে তারও। প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের ভাষণকেও আমলাদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা বলেই মনে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: বিজেপিকে আটকাতে ডাক দিদির

শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য, সিনিয়র আইএএস অফিসার দেবাশিস সেন, রাজীব সিংহ, নবীন প্রকাশ, পারভেজ সিদ্দিকি নবান্নে বসে প্রায় দেড় ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনেন। যদিও মুখ্যসচিবও এই ভিডিও কনফারেন্সে থাকবেন কি না তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দোলাচল ছিল।

ভিডিও কনফারেন্সের আগে নীতি আয়োগের অফিসাররা বারবার জেলাশাসকদের ফোন করেন, কিন্তু তাঁদের কেউই মোদী-মুখো হননি। যদিও গোটা ঘটনাক্রমে তাঁদের অনেকেই বিব্রত। ওই জেলাশাসকদের বক্তব্য, তাঁরা সর্বভারতীয় সার্ভিসের অফিসার। তাঁদের টিকি বাঁধা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেই। ফলে এ দিনের ভিডিও কনফারেন্সে যোগ না দেওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। আবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে বৈঠকে যাওয়াও সম্ভব ছিল না তাঁদের পক্ষে।

জেলাশাসকদের উদ্দেশে মোদী এ দিন বলেছেন, ‘‘১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তার ঠিক পাঁচ বছর পর দেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল। আজ যদি আমরা সকলে মিলে সঙ্কল্প নিই, তা হলে ঠিক পাঁচ বছর পর ২০২২ সালে নতুন ভারত গড়া সম্ভব।’’ কী ভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তা-ও জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জেলাশাসকদের বলেন, ‘‘শুধু অফিসে বসে ফাইলে মুখ গুঁজে থাকবেন না। গরিব মানুষের বাড়িতে যান। দেখুন তাঁরা কী ভাবে আছেন। তা হলে বুঝতে পারবেন যে কাজ অফিসে বসে করছেন তার সুফল গরিব মানুষ কতটা পাচ্ছেন।’’

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও টানা ৯১ দিনের ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে দলিত পরিবারে গিয়ে পাত পাড়ছেন। এ বার প্রধানমন্ত্রী জেলাশাসকদেরও গরিব-ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।

পাশাপাশি, জিএসটি থেকে সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প, দুর্নীতি দমন থেকে ডি়জিট্যাল ইন্ডিয়া-র প্রসারে জেলাশাসকরাই যে সবচেয়ে বড় মাধ্যম তা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের মোদী বলেন, ‘‘জানবেন এটা ভগবানের আশীর্বাদ। তাই প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করতে পারছেন। এই পরিশ্রম বিফলে যাবে না।’’

Narendra Modi Mamata Banerjee নরেন্দ্র মোদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy