Advertisement
E-Paper

দিদির দাওয়াই বিশ্রাম নিন

এ বারের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূল নেত্রীর স্বস্তি ধাক্কা খেয়েছিল উত্তরবঙ্গের তিন জেলা মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর ও দার্জিলিঙে। দার্জিলিং এবং মালদহে একটিও আসন জেতেনি তৃণমূল। আর দক্ষিণ দিনাজপুরে চারটি জেতা আসন খুইয়ে দল জিতেছে মাত্র দু’টি আসনে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৮:১৫
নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: প্রদীপ আদক।

নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: প্রদীপ আদক।

এ বারের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূল নেত্রীর স্বস্তি ধাক্কা খেয়েছিল উত্তরবঙ্গের তিন জেলা মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর ও দার্জিলিঙে। দার্জিলিং এবং মালদহে একটিও আসন জেতেনি তৃণমূল। আর দক্ষিণ দিনাজপুরে চারটি জেতা আসন খুইয়ে দল জিতেছে মাত্র দু’টি আসনে।

নেতাদের ঝগড়াতেই যে এই হাল, ক্ষমতায় এসেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে ভর্ৎসনাও করেছিলেন কাণ্ডারীদের। আর শনিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোরে দলের কর্মিসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘যারা ঝগড়া করেছে, তারা এবার বিশ্রাম নিক।’’ সভার পরে তাই নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা, কোন কোন নেতাকে দলনেত্রী বিশ্রামে পাঠাচ্ছেন? আর কোন নেতারই বা ডাক পড়ছে দলের হাল ধরতে?

উত্তরের বাকি জেলাগুলিতে এবার বিধানসভায় তৃণমূলের ফল গতবারের থেকে ভাল বলেই নেতৃত্বের দাবি। সে কারণে এ দিনের সাংগঠনিক বৈঠকে দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ ও দার্জিলিঙের ব্যাপারে দলনেত্রী কেমন মনোভাব নেন তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। মালদহের নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামাতে প্রায় বছরদুয়েক ধরে ‘বকাঝকা’ করে চলেছেন মমতা।

গত লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে মালদহের হেলিপ্যাডে দাঁড়িয়ে সকলকে শুনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থামানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘কৃষ্ণেন্দু, সাবিত্রী মিলেমিশে কাজ কর।’’ দলনেত্রীর এই সর্তকবার্তায় যে কোনও ফল মেলেনি তা লোকসভা ভোটের ফলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রকে সরিয়ে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেন মোয়াজ্জেম হোসেনকে।

কিন্তু গত ডিসেম্বরে মালদহে পাট্টা বিলির সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ জানিয়ে দেয়, দলের আভ্যন্তরীণ সমীকরণে মোটেই ভারসাম্য আসেনি। কে কার এলাকায় হস্তক্ষেপ করছে তা নিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু-সাবিত্রী। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বিধানসভা ভোটের মাস খানেক আগে থেকে সব সামাল দিতে একের পর এক রাজ্য নেতাদের মালদহে পাঠিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি কোনও।

এ দিন মমতা বলেন, ‘‘জমিদারি মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করা যায় না। এখন তাঁরা বিশ্রামে থাক। গরু পাচার, আফিম পাচারের টাকা ব্যবহার করে ভোটে জিতে যাচ্ছে। তা না রুখে আমাদের নেতা নেত্রীরা একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করতেই ব্যস্ত।’’

একই ছবি দক্ষিণ দিনাজপুরে। ভোটের মাত্র পাঁচদিন আগে গঙ্গারামপুরের নন্দনপুর অঞ্চলে ভোট প্রচারে গিয়ে আক্রান্ত হন তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন রায়। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পেছনে বিপ্লবের ইন্ধনের অভিযোগ তুলে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানান সত্যেনবাবু। ভোটের ঢের আগে থেকেই দুই নেতাকে এক মঞ্চে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।

হরিরামপুর কেন্দ্রে নিজের পরাজয়ের জন্য সত্যেন গোষ্ঠীর নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিপ্লব মিত্র। আবার গঙ্গারামপুরে সত্যেনবাবু তাঁর হারের জন্য বিপ্লববাবু এবং তার অনুগামী নেতাদের কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। তাই আপাতত বিপ্লব মিত্র এবং সত্যেন রায়কে বিশ্রাম দিয়ে, সাংসদ অর্পিতা ঘোষের মাধ্যমে দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের হাল ফেরানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হলভর্তি সকলের সামনে মমতা বলেন, ‘‘বিপ্লব মিত্র আর সত্যেন রায় ঝগড়া করবে? তারজন্য চারটি সিট হারাবো, এটা মানা যায় না।’’

এদিন বৈঠকের পরে গঙ্গারামপুরের বিদায়ী বিধায়ক তথা এবারের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিপ্লববাবুর যদি ১০০ ভাগ দোষ থাকে। তারমধ্যে আমারও ১০ ভাগ দোষ রয়েছে। আমারা দিদিকে সম্মান দিতে পারিনি।’’ অন্যদিকে বিপ্লববাবুর সঙ্গে দু’ বার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

এই দুই জেলার মতো প্রকাশ্যে না এলেও দার্জিলিং জেলাতেও নেতাদের ঝগড়াই ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র জয়গাঁথা রচনা করেছে বলে তৃণমূলের প্রদেশ নেতাদের ব্যাখ্যা। গত বছর শিলিগুড়ি পুরসভায় তৃণমূল বিরোধীদের অলিখিত সমঝোতাই রাজ্য রাজনীতিতে শিলিগুড়ি মডেল হিসেবে পরিচিতি পায়। অলিখিত সেই মডেল এবারের বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস দু’দলের নেতৃত্বের স্বীকৃতি পায়। শিলিগুড়িতে সেই মডেল প্রতিহত করতে তৃণমূল চেষ্টার কসুর করেনি। ভোটের আগে দলের সভাপতি বদল করে। তবু জেলায় শূন্যতেই থেমে থাকতে হয়েছে দলকে। হাত ফস্কে গিয়েছে গতবার জেতা শিলিগুড়ি আসনও।

শিলিগুড়িতে ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করার পর থেকেই দলের কাউন্সিলরদের কয়েকজন রাজ্য নেতাদের কাছে নানা অভিযোগ জানাতে থাকেন, আবার ভাইচুংও তাঁর উষ্মা জানায় দলের নেতাদের। ভোটের আগে থেকেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকে। সমতলের অন্য দুই আসনের প্রার্থী এবং তাঁদের অনুগামীরাও জেলা নেতারা প্রচারে সময় দিচ্ছে না, গোষ্ঠী বিবাদ চাগিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করে। এমনকী গণনার দিন শিলিগুড়ি কলেজ থেকে ভাইচুঙের হার ঘোষণা হওয়ার পরে দলের দুই নেতাদের রাস্তার পাশের এক দোকানে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের ইচ্ছেমতো খাওয়াতে দেখা যায় বলে ভাইচুঙের অনুগামীরা রাজ্য নেতাদের অভিযোগ জানিয়েছে।

দলকে চাঙ্গা করতে দার্জিলিং জেলায় নতুন কমিটি হচ্ছে বলে দাবি নেতাদের। নেতাদের একাংশের দাবি, সব নজির ভেঙে সেই কমিটি বিধানসভাভিত্তিক হবে। সে কারণেই একগুচ্ছ জেলা নেতাদের ‘বিশ্রামে’ যেতে হচ্ছে বলে জল্পনা শোনা যাচ্ছে। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘জেলার ফল নিয়ে দলনেত্রী দুঃখিত। তবে পাহাড়ের ফল তুলনামূলক ভাল। নেত্রীর নির্দেশে আগামী জুলাই মাস থেকে জেলা জুড়ে জনসংযোগের কাজ শুরু করব।’’

এ দিকে দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে দল-চাইলে পদ থেকে ইস্তফা দিতে রাজী হলেন বিপ্লব মিত্র অনুগামী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা, সহকারী সভাধিপতি কালীপদ সরকার ও কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ পাহান। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলনেত্রীর বৈঠকের পরে এ জেলার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক সুব্রত বক্সী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদের ১৩ জন তৃণমূল সদস্যকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেই তাঁরা দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখবেন বলে অঙ্গিকার করার পাশাপাশি দল চাইলে পদ থেকে ইস্তফা দিতে রাজী বলে জানিয়েছেন।

TMC CM Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy