প্রত্যাবর্তন তো বটেই! একেবারে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন!
ভোট-পরবর্তী সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল, রাজ্যে আবার মসনদে ফিরতে চলেছে তৃণমূল। শুক্রবার সকাল থেকে ভোটযন্ত্র খুলতেই ফিরে আসার পথে হইহই করে এগিয়ে গেল শাসক দল। বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাওয়া প্রবণতা অনুযায়ী, রাজ্যের মোট ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০৭টিতেই এগিয়ে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বাম-কংগ্রেসের জোট এগিয়ে ৭৮টি আসনে। বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৬টি কেন্দ্রে। অন্যান্য দল এগিয়ে তিনটিতে।
সরকারে ফিরে আসার দৌড়ে তৃণমূলের এমন সাফল্য এ রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভিনব নয় ঠিকই। এর আগে বামফ্রন্ট সরকার ১৯৭৭ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে পরবর্তী দু’টি নির্বাচনে তারা আসন আরও বাড়িয়ে নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল। কিন্তু তৃণমূলের জমানার পাঁচ বছরে সারদা-কাণ্ড বা ভোটের মুখে নারদ-পর্ব, উড়ালপুল বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ধরলে এতটা প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া কোনও নতুন সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়নি। সামলাতে হয়নি দুর্নীতির এত ভূরি ভূরি অভিযোগ। তার পরেও মমতার এমন বিপুল সাফল্য চোখধাঁধানো বৈকি! এর পাশাপাশিই তৃণমূল নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জ্যোতি বসুরা লড়তেন বামফ্রন্ট হিসাবে। একসঙ্গে কিছু বাম দলকে নিয়ে। তৃণমূল এ বার লড়েছে একাই। একক ক্ষমতায় তাই এমন সাফল্য বাড়তি স্বস্তির কারণ।
প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল পেয়েছে ৪৬.১% ভোট। বাম-কংগ্রেসের জোট পেয়েছে ৩৬.৭%। বিজেপি-র দখলে রয়েছে এখনও পর্যন্ত ১০.৪% ভোট। অন্যান্য দলের ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ১০%। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দু’বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে আরও ৮% ভোট বেশি পেয়েছে শাসক দল। আবার সেই নির্বাচনের নিরিখে বাম ও কংগ্রেসের ভোট যোগ করলে যে অঙ্ক দাঁড়ায়, মিলিত ভাবে জোট সেখানে পৌঁছতে পারেনি। সেই কারণেই জোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গণনার দিন সকাল থেকেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কেরলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ-কে হারিয়ে যে দিন ক্ষমতায় ফিরছে বামেদের নেতৃত্বে এলডিএফ, সে দিনই বাংলায় শোচনীয় পরাজয় ঝড় তুলে দিয়েছে বাম শিবিরের অন্দরেও। কেরলকে অভিনন্দন জানিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট যেমন মন্তব্য করেছেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে এই জোট নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে।’’ সিপিএমের মধ্যে কারাট-শিবির আগাগোড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার বিরুদ্ধে ছিল। বঙ্গে বাম বিপর্যয়ের ইঙ্গিত তাদের হাতিয়ারে নতুন করে শান দিতে সাহায্য করছে!
আরও উল্লেখযোগ্য তথ্য, লোকসভার তুলনায় ৭% ভোট হারালেও বিজেপি কিন্তু প্রায়ে সাড়ে ১০% ভোট ধরে রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র ভবানীপুর-সহ বেশ কিছু আসনে তারা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। প্রাথমিক হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের নানা প্রান্তেই ভাল পরিমাণে ভোট পাচ্ছে বিজেপি। সরকার গড়ার আশা যাদের নেই, তেমন একটি দলের বিধানসভা ভোটে এমন পারফরম্যান্স যথেষ্ট চমকপ্রদ বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন। লোকসভা নির্বাচনে বামেদের ঘর ভেঙে বিজেপি-র বাক্সে গিয়েছিল বেশ কিছু ভোট। বিজেপি এ বার সেই ভোটের অনেকটাই ধরে রাখতে পারায় আখেরে সুবিধা হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy