Advertisement
E-Paper

মমতার সভার আগে ঘর সামলাতে বৈঠক

মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। কিন্তু তাঁর সামনেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়বে কি না, তৃণমূল নেতারা তা জানেন না। আগামী ১৫ জুলাই তাঁর শততম প্রশাসনিক সভা করতে বর্ধমানকে বেছে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০৪:১৩

মুখ্যমন্ত্রী আসছেন।

কিন্তু তাঁর সামনেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়বে কি না, তৃণমূল নেতারা তা জানেন না।

আগামী ১৫ জুলাই তাঁর শততম প্রশাসনিক সভা করতে বর্ধমানকে বেছে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু সেখানে তাঁর দলের এমনই অবস্থা যে প্রায় প্রত্যেকটি এলাকায় গোষ্ঠীবাজি সামাল দিতে জেলা নেতৃত্ব হিমশিম। মুখ্যমন্ত্রীর সভার ঠিক আগে যাতে খুনোখুনি-গোলমালে দলের মুখ না পোড়ে, তা নিশ্চিত করতে আজ, শুক্রবার জেলার নেতাদের কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছেন বর্ধমানের দলীয় পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস।

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই ওই নেতাদের ডেকে পাঠিয়েছেন মন্ত্রী। বর্ধমান জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ এক পদাধিকারীর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসছেন। এর মধ্যে যাতে দলে অশান্তি আরও পাকিয়ে না ওঠে, পর্যবেক্ষক সেই বার্তাই দেবেন।’’

কিন্তু তার আগেই যে ঝুলি থেকে ফের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে!

তাঁকে খুন করানোর জন্য দলেরই পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সাদেক শেখ ছ’লাখ টাকা দিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বোমা বাঁধাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ কালনার সুলতানপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুকুর শেখের। বৃহস্পতিবার বোমা বাঁধার সময়ে তা ফেটে এক জন জখম হয়, বাকি দু’জনকে পালানোর সময়ে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সাদেক শেখ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ জানান, দু’জনকেই দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি যে এ রকম অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে এবং দল যে তা সামলাতে প্রায় অপারগ, সম্ভবত তা আঁচ করেই তৃণমূলের গোষ্ঠীবাজি সামাল দিতে সরাসরি বর্ধমানের পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। সেই মতো প্রতিপক্ষ নেতাদের থানায় ডেকে মধ্যস্থতার চেষ্টাও করে পুলিশ। কিন্তু তাতে কাজ কিছু হয়নি। পুলিশ সতর্ক করা সত্ত্বেও গোলমালে জড়িয়ে পড়ছেন তৃণমূল নেতারা। কালনার ওই দুই নেতাকেই এর আগে থানায় ডেকে এনে সতর্ক করেছিল পুলিশ।

শুধু কি কালনা? রায়নায় যে নেতাকে গোটা এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ভার দেওয়া হয়েছিল, বোমা উদ্ধার করতে যাওয়া ওসি-কে মারধরের ঘটনায় তিনিই গ্রেফতার হন। দক্ষিণ দামোদর এলাকায় বালি খাদান নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমেনি। আউশগ্রামে কোন্দল বেড়েই চলেছে। খণ্ডঘোষে তৃণমূলের তিন কর্মী খুনে মূল অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন। বাধ্য হয়ে তাঁকেও বহিষ্কার করতে হয়েছে।

ফলে, কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অরূপবাবু বিশ্বাস তাঁদের কলকাতায় ডেকেছেন, তা জেলা নেতাদের কাছে জলের মতো পরিষ্কার। কয়েক দিন আগেই রায়না, খণ্ডঘোষ ও মাধবডিহি থানার নেতাদের নিয়ে তৃণমূল ভবনে বৈঠক করেছিলেন তিনি। দল সূত্রের খবর, আজ জেলা নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বেশ কিছু কর্মাধ্যক্ষ, ব্লক স্তর ও শাখা সংগঠনের নেতাদের আলিপুরে একটি পরিচিত ক্লাবে ডাকা হয়েছে। স্বপনবাবুই সকালে সকলকে ফোন করে বৈঠকের কথা জানিয়েছেন। তবে বিকেলে ফোনে অরূপবাবু বলেন, “বর্ধমান থেকে কয়েক জন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। সেটাকে কী বৈঠক বলে!’’

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, ভাতার, মেমারি, আউশগ্রাম ও জামালপুরের নেতাদেরই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। বর্ধমান জেলা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী এক নেতার ব্যাখ্যা, “প্রতি দিন যে সব জায়গায় কোন্দল বাড়ছে, সেই সব ব্লকের নেতাদেরই ডাকা হয়েছে।’’ স্বপনবাবু অবশ্য দাবি করেন, “এটা সাধারণ বৈঠক। অন্য কোনও বিষয় নেই।” জামালপুরের বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিকের দাবি, “দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সবার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য অরূপবাবু এই বৈঠক করছেন।”

জেলা বা তৃণমূল ভবনের বদলে কলকাতার ক্লাবে বৈঠক কেন?

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, যাতে এই বৈঠক নিয়ে বেশি হইচই না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। জেলার এক প্রভাবশালী নেতার দাবি, ‘‘এই বৈঠক বর্ধমানে হলে জেলা সভাপতি হেনস্থার মুখে পড়ে যেতেন।” এই দাবির যে কিছুটা সারবত্তা আছে, তার প্রমাণ হাতেনাতেই মিলেছে। এ দিন স্বপনবাবুর সামনেই জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক গোলাম জার্জিস বলেন, “গত তিন বছর ধরে জেলা কমিটির একটিও বৈঠক হয়নি। সে কথা আমি বৈঠকে তুলব।” স্বপনবাবু পাল্টা বলেন, “আমি নিয়মিত জেলা কমিটির বৈঠক করেছি। প্রতিটি মহকুমায় এই বৈঠক হয়েছে। এখন যে কেউ এই অপবাদ দিতে পারে।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের কটাক্ষ, “পুলিশকে দিয়ে গোষ্ঠী-কোন্দল সামাল দেওয়া যায়নি। গোপন বৈঠক করেও দেওয়া যাবে না। ওটা তৃণমূলের রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই অঙ্গ।” অরূপবাবু অবশ্য এ নিয়ে কথা বাড়াতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমি ১৩ জুলাই থেকে তিন দিন বর্ধমানে থাকব। তখন সব প্রশ্নের জবাব দেব।”

সহ-প্রতিবেদন: কেদারনাথ ভট্টাচার্য

Bardhaman Mamata Banerjee Trinamool BJP congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy