Advertisement
০২ মে ২০২৪

মমতার বাষট্টি-বাণেই কাবু পুনর্নিয়োগ আন্দোলন

দাবি ছিল ৬৫। তবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করে দিয়েই রাজ্য সরকার আপাতত জোড়া পাখি মারল বলে মনে করছে শিক্ষা শিবির।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৪
Share: Save:

দাবি ছিল ৬৫। তবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করে দিয়েই রাজ্য সরকার আপাতত জোড়া পাখি মারল বলে মনে করছে শিক্ষা শিবির। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহলের ব্যাখ্যা:

• শনিবারের শিক্ষা-সম্মেলনে অবসরের বয়স দু’বছর বাড়ানোর ঘোষণাটি পুনর্নিয়োগ বহাল রাখার আন্দোলনকেই কার্যত ঠুঁটো করে দিল।

• অবসরের বয়স দু’বছর বাড়িয়ে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি কিছুটা মিটিয়ে তাঁদের মন জয়ের পথে তরতরিয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দু’টি বিষয় অনেকটাই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। ষাটের বদলে পঁয়ষট্টি বছর পর্যন্ত পড়ানোর সুযোগ পাওয়াটাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল দাবি। সরকার যে এত দিন অবসরের বয়স বাড়ায়নি, তাতে যত ক্ষোভই থাকুক, পুনর্নিয়োগ চালু থাকায় অনেকেই হরেদরে ৬৫ পর্যন্ত চাকরির সুযোগ পেতেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজ্য এখন অবসরের বয়স অন্তত দু’বছর বাড়ানোয় ষাটের পরে দু’বছর থেকে যাওয়াটা নিশ্চিত হয়ে গেল। আবার সরকারের দিক থেকে দেখলে পুনর্নিয়োগ রদের ক্ষতে খুব খানিকটা মলমও লাগিয়ে দেওয়া গেল।

গত নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তা নিয়ে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রতিবাদে মুখর হয় শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন। তার মোকাবিলায় সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বয়স এক ধাক্কায় দু’বছর বাড়িয়ে দিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতর মোক্ষম চাল চেলেছে বলে মনে করছেন শিক্ষক সংগঠনগুলির অনেক নেতাও।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর। কিন্তু এ রাজ্যে এত দিন সেটা ছিল ৬০ বছর। এখানে অবসরের পরে শিক্ষকদের ধাপে ধাপে ৬৫ বছর পর্যন্ত পুনর্নিয়োগের ব্যবস্থা করা হতো। নভেম্বরে সেই প্রক্রিয়াটাই স্থগিত হয়ে যায়।

সরকার ডিসেম্বরে যে-বিতর্কিত শিক্ষা বিল আনতে উদ্যোগী হয়েছিল, তাতে বলা হয়, কোনও শিক্ষককে পুনর্নিয়োগ করতে গেলে রাজ্যের অনুমতি নিতে হবে। অর্থাৎ কোন কোন শিক্ষক পুনর্নিযুক্ত হবেন, সেটা ঠিক করে দেবে সরকারই। সেই বিল পেশ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তার পরেই, শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন ঘোষণার পরে পুনর্নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন আর ধোপে টিকবে না বলেই মনে করছেন শিক্ষক সংগঠনগুলির অনেক নেতা।

উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ঢালাও পুনর্নিয়োগের পদ্ধতি যে আর কোনও ভাবেই ফিরবে না, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল। অবসরের বয়স ৬২ করায় সামগ্রিক ভাবে শিক্ষকদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করা গিয়েছে। বিল পাশ করিয়ে নিজেদের পছন্দের শিক্ষককে ৬৫ বছর পর্যন্ত পুনর্নিয়োগ করার প্রক্রিয়ায় আর কেউ আপত্তি তুলবে না বলেই শিক্ষাকর্তাদের বিশ্বাস।

উচ্চশিক্ষা দফতরের খবর, এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শূন্য পদ পূরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শূন্য শিক্ষক-পদের তালিকা ইতিমধ্যেই চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওই দফতরের এক কর্তা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ২৬০ শিক্ষক-পদ খালি। নভেম্বরে পুনর্নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই তিন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ‘প্রফেসর ইন রেসিডেন্স’ হিসেবে রেখে দেওয়ায় সরকারের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ। শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের শিক্ষা-সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ডেকে কিছু ক্ষণ কথা বলেন। একটি সূত্র জানাচ্ছে, সেই সময় যাদবপুরের শূন্য শিক্ষক-পদ পূরণের বিষয়টি উঠেছিল।

অর্থাৎ অবসরের বয়স বৃদ্ধি থেকে শূন্য পদ পূরণ পর্যন্ত বিভিন্ন দাবির কিছুটা পূরণের আশ্বাস দিয়ে ক্ষোভ তো খানিকটা সামাল দেওয়া হলই। সেই সঙ্গে সরকার আন্দোলনের পথও প্রায় বন্ধ করে দিতে পেরেছে বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ।

কী বলছে শিক্ষক সংগঠন?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় রবিবার জানান, অবসরের বয়স ৬২ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন। ‘‘কিন্তু এর পরে বিল পাশ করিয়ে সরকার পক্ষ যদি ঠিক করে কাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটা কিন্তু হয়ে উঠবে স্বাধিকার হরণেরই নামান্তর,’’ বলেন পার্থপ্রতিমবাবু। ৬২-কে স্বাগত জানাচ্ছে ওয়েবকুটাও। তবে ইউজিসি-র নিয়ম মেনে অবসরের বয়স ৬৫ করার দাবি থেকে তাঁরা সরছেন না বলে জানান ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ। তিনি বলেন, ‘‘পুনর্নিযুক্তদের পুরো ৬৫ বছর কাজ করতে দেওয়ার দাবি থেকেও সরছি না আমরা। কারণ, অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা থাকলে পড়ুয়ারাই উপকৃত হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Teacher's Union
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE