মাটির মায়ের আরাধনা তো চলছেই। সঙ্গে পুজো মানুষেরও!
পুজো বলতে অবশ্য ফুল, চন্দন, অঞ্জলির আচার নয়। পুজো মানে ভক্তিপুজো!
মণ্ডপে করজোড়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অবয়বে একটু যেন কৃশ! মোবাইল বাগিয়ে তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে গিয়ে দর্শনার্থীরা দেখছেন, মহাসচিব একা নন। যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আছেন অদূরে। নিজস্বী তোলার সুযোগ অবাধ!
এমনই কাণ্ড ঘটছে নদিয়ার চাকদহ রেল স্টেশনের পূর্ব পাড়ে, কে বি এম মোড়ে। ‘প্রান্তিক’-এর দুর্গাপুজোর আসরে সেখানে হাজির ফাইবারের মমতা, পার্থ, অভিষেক। রয়েছে ‘সেলফি জোন’। নিজস্বী তুলে জমিয়ে ক্যাপশন করে উদ্যোক্তাদের কাছে জমা দিয়ে বিচারকমণ্ডলীর মন পেলে কপালে পুরস্কারও জুটে যেতে পারে! ষষ্ঠীর বিকালে পুজোর উদ্বোধন করতে এসে বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ তাঁর নেত্রীর ( হোক না ফাইবারের) সঙ্গে নিজস্বীর সুযোগ ছা়ড়েননি। দুই মমতাকে এক ফ্রেমে আবার ধরে রেখেছেন অনেকে।
শুধু নদিয়াই বা কেন? কলকাতার মধ্যে খিদিরপুর ৭৪ পল্লির পুজোতেও মডেল রূপে আছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সঙ্গে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পুজো উদ্বোধনে গিয়ে দু’জনেই নিজেদের মূর্তি দেখেছেন এবং শিল্পকর্মে পুলকিতই হয়েছেন।
তৃণমূলের সংগঠনে পার্থবাবু নদিয়ার পর্যবেক্ষক। সেখানে যে তাঁর এমন ভক্তসমাগম হচ্ছে, কলকাতায় পুজো-উদ্যোক্তা মহাসচিব আগে টেরই পাননি। জানতে পেরে মঙ্গলবার তাঁর সবিস্ময় প্রতিক্রিয়া, ‘‘সে কী! মূর্তি করেছে? এ আবার কী!’’ পরে তাঁর কৌতুকমিশ্রিত সংযোজন, ‘‘এখনই ছবি হয়ে যাই, কেউ কেউ চায় নাকি!’’

উদ্যোক্তারা অবশ্যই তা চান না। ক্লাবের সম্পাদক সৌমিত্র ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, “অনেকেই এঁদের মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কোনও দিন ছবি তোলার সুযোগ পান না। তাঁদের ছবি তোলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ।” তাঁর আরও বক্তব্য, “ছবির সঙ্গে ক্যাপশন লিখে ক্লাবের সেলফি কনটেস্ট পেজে পোস্ট করলে সেরা ৩০ জনকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এখনও পর্যন্ত বেশ ভাল ভাল ক্যাপশন আমরা পেয়েছি। মনে করি, এটাই আমাদের সাফল্য!”
কয়েক বছর ধরেই চাকদহের ওই ক্লাব পুজোয় নজর টানছে। দু’বছর আগেও তারা মুখ্যমন্ত্রীর মডেল তৈরি করেছিল। এ বার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ওড়িশার একটি মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। তবে সে সব ছাপিয়ে গিয়েছেন ফাইবারের ‘মডেল’-রূপী নেতা-নেত্রীরাই। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর দু’টি মডেল তৈরি করেছেন কৃষ্ণনগরের সুবীর পাল। পার্থবাবুর মডেল-শিল্পী চাকদহের সুব্রত বিশ্বাস এবং অভিষেকের অনুপ গোস্বামী।
মণ্ডপ জু়ড়ে মা-মাটি-মানুষের সরকারের নানা সাফল্য ছড়িয়ে। সাফল্যের কারিগরদেরও অবস্থান হাতের কাছেই।
লোক আসছে, ছবি উঠছে, চর্চাও হচ্ছে। তারই মধ্যে তৃণমূলের এক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘ভক্তি ভাল। কিন্তু অতি ভক্তি আবার গোলমেলে ব্যাপার কি না!’’