লঙ্কা তুলতে ব্যস্ত খুদে পড়ুয়ারা। মুর্শিদাবাদের রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র
হেমন্তের ভেজা আলপথে খুদে খুদে পায়ের ছাপ। সাতসকালে ঝুড়িটা উল্টে মাথায় রেখে ওরা হাঁটতে থাকে। গন্তব্য সেই মুলুকে যেখানে লাল-সবুজের সহজ সহাবস্থান!
তার পরেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। খেত থেকে কে কত বেশি লঙ্কা তুলতে পারে! কচি হাতগুলো বোঁটা ভাঙে চটপট।
—‘আমার দু’কেজি হয়ে গেল রে! তোর?’
—‘তিন। আজ কিন্তু আট পার করবই!’
আঙুল জ্বালা করে। ঝাঁঝের চোটে হাঁচি হয় অনর্গল। বছর আটেকের রিয়া মণ্ডল, ন’বছরের পিঙ্কি খাতুনেরা বলছে, ‘‘জানো তো, পাঁচ কেজি লঙ্কা তুললেই চল্লিশ টাকা। আমরা তো এক দিনে আট-দশ কেজিও লঙ্কা তুলতে পারি। টিফিনের পাঁচ-দশ টাকা নিজের কাছে রেখে বাকিটা বাড়িতে দিয়ে দিই।’’
মুর্শিদাবাদের রানিনগর, ইসলামপুর কিংবা ডোমকলে এ বড় চেনা ছবি। লঙ্কাখেতের মালিক, অভিভাবক বা এলাকার লোকজনও এতে দোষের কিছু দেখেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘ওদের দিয়ে কম পয়সায় কাজটা হয়ে যাচ্ছে। ঘরেও উপরি কিছু টাকা আসছে।’’ আর চতুর্থ শ্রেণির মাবিয়া মণ্ডল, পিঙ্কি খাতুনরা বলছে, ‘‘সারা বছরই তো স্কুলে যাই। শুধু এই সময়ে মাঝেমধ্যে কামাই হয়।’’
তবে সম্প্রতি বিষয়টি নজরে আসার পরে উদ্বিগ্ন সীমান্তের বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, কাঁচা পয়সার লোভে পড়ুয়াদের অনেকেই সময় মতো স্কুলে আসছে না। স্কুল কামাইও হচ্ছে। অভিভাবকেরা সচেতন না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।
সমস্যা যে শুরু হয়েছে, তা মালুম হয় লঙ্কাখেতে গেলেই। ঘড়িতে দশটা বেজে গেলেও হুঁশ নেই। স্কুলের ঘণ্টা শুনেও কেউ কেউ বলছে, ‘‘থাক, আজ স্কুলে যাব না। আর কিছু লঙ্কা তুলতে পারলেই দশ কেজি হয়ে যাবে!’’
চর বাশগাঁড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আলমগির শেখ বলছেন, ‘‘ইদানীং ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই স্কুলে আসছে দেরি করে। দেরির কারণ জানতে চাইলে উত্তর মিলছে, ‘লঙ্কা তুলতে গিয়েছিলাম, স্যর।’ আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলছি।’’ রানিনগরের চর দৌলতপুর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অমিতকুমার দাশের অভিজ্ঞতা, ‘‘মাঠের মধ্যে দিয়ে স্কুল যাওয়ার পথে আমিও দেখেছি বহু বাচ্চা স্কুলের সময়ে লঙ্কা তুলছে। তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাটাই বেশি।’’ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) নীহারকান্তি ভট্টাচার্যও। তিনি বলছেন, ‘‘ওই এলাকার এসআইকে বলব শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy