শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও ধর্মেন্দ্র প্রধান। রবিবার স্বাতী চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন হলেও সরকারি প্রকল্পের সূচনায় কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভাল লেগেছিল কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের। আশা ছিল, উন্নয়নের প্রশ্নে রবিবার একই মঞ্চে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের অনুষ্ঠানেও তাঁর ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন ‘মমতাদি’। কিন্তু তিনি না আসায় এবং মন্ত্রিসভার অন্য কাউকেও না পাঠানোয় হতাশার মোড়কে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ধর্মেন্দ্র।
বছরখানেক আগে নজরুল মঞ্চে তিনটি সামাজিক প্রকল্পের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের আরও কয়েক জন মন্ত্রীও ছিলেন। এ বারের অনুষ্ঠানে গরহাজিরার প্রসঙ্গে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য তিনি যে যেতে পারবেন না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন উদ্যোক্তাদের। আর খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, তিনি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণই পাননি।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে দেশের বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের মহিলাদের কম খরচে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার প্রকল্পটির (প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা) উদ্বোধন করেছেন মোদী। এ রাজ্যে এ দিন সেই প্রকল্প শুরু হল। সেই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ধর্মেন্দ্র ও বাবুল ছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এস এস অহলুওয়ালিয়া এবং বিধায়ক তথা বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নাম ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এবং দিলীপবাবু থাকলেও রাজ্যের তরফে মন্ত্রীদের কেউ অনুষ্ঠানে যাননি। ভাষণে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘সে দিন এই মঞ্চে মমতাদিও ছিলেন। দূর থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং ওঁকে একসঙ্গে দেখে ভালো লেগেছিল। রাজনৈতিক দল আলাদা হলেও গরিবের জন্য দুই নেতা এককাট্টা ছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখানে আসার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আমার অফিসারদের পাঠিয়েছিলাম। মোদীজি’র স্বপ্ন সত্যি করতে আজ উনি থাকলে ভাল হত। না হলে মন্ত্রিসভার কাউকে পাঠালেও ভাল লাগত। কিন্তু আমি হতাশ। কেউই এলেন না!’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, রাজনীতিতে বিবাদ হতেই পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের গরিব মায়েদের ঘরে খুশি এলে তা নিয়ে রাজনীতি হওয়া উচিত নয়। পরে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘আমি আমার দুঃখের কথা বলেছি।’’ যদিও নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথাই ছিল না।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল পরে বলেন, ‘‘সকলে একসঙ্গে কাজ করলে তবেই ট্রেন ঠিক গন্তব্যে পৌঁছবে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু, শোভনবাবুকে বলা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে উনি ব্যক্তিগত ভাবে চিঠি দিয়েছিলেন। যাঁরা এই প্রকল্পের সুযোগ পাবেন, তাঁদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে রাজ্যেরও একটা দায়িত্ব থাকে। তাই তাঁরা থাকলে ভাল হত।’’ অবশ্য শেষে পরিস্থিতি খানিকটা হালকা করতেই বাবুলের সহাস্য উক্তি, ‘‘আমরা ওঁদের বেনিফিট অফ ডাউট দিচ্ছি!’’
এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা তো আমন্ত্রণই পাইনি! কেন্দ্রীয় সরকারি কোনও প্রকল্প নিয়ে রাজ্যে অনুষ্ঠান হলে রাজ্যকে জানানো সৌজন্য। কিন্তু ওঁরা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের অবস্থানকে কোনও গুরুত্বই দেন না!’’ জ্যোতিপ্রিয়বাবুর সংযোজন, ‘‘আমন্ত্রণ পেলে যেতাম কি না, ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু আমন্ত্রণ পাইনি।’’ শোভনদেববাবুর বক্তব্য, ‘‘ইন্ডিয়ান অয়েলের অফিসার আমাকে যে দিন এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন, সে দিনই আমি তাঁকে বলেছিলাম, আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে ওই দিন কলকাতার বাইরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা। দেড় মাস আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy