Advertisement
E-Paper

অবাধে দাপিয়ে বেড়াল দুষ্কৃতী বাহিনী, সন্ত্রাস-হুমকি-তাণ্ডবের পুরভোট

মাত্র ৭টি পুরসভার ভোট। তাতেও সেই ভোটের নামে প্রহসনের অভিযোগ উঠল। অবাধে দাপিয়ে বেড়াল দুষ্কৃতী বাহিনী। চলল বোমা-গুলি। ধৈর্য হারিয়ে সাধারণ ভোটারেরা প্রতিবাদও করলেন কোথাও কোথাও। সেই প্রতিবাদের সামনের সারিতে থাকলেন মহিলারা। কিন্তু কোনও ভূমিকাই দেখা গেল না নির্বাচন কমিশনের!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ০৩:২৯
সন্ত্রাস: চোপ, ভোট চলছে! ডোমকলে, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বসমক্ষেই পিস্তল হাতে ঘুরল যুবক। রবিবার। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

সন্ত্রাস: চোপ, ভোট চলছে! ডোমকলে, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বসমক্ষেই পিস্তল হাতে ঘুরল যুবক। রবিবার। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।

মাত্র ৭টি পুরসভার ভোট। তাতেও সেই ভোটের নামে প্রহসনের অভিযোগ উঠল। অবাধে দাপিয়ে বেড়াল দুষ্কৃতী বাহিনী। চলল বোমা-গুলি। ধৈর্য হারিয়ে সাধারণ ভোটারেরা প্রতিবাদও করলেন কোথাও কোথাও। সেই প্রতিবাদের সামনের সারিতে থাকলেন মহিলারা। কিন্তু কোনও ভূমিকাই দেখা গেল না নির্বাচন কমিশনের!

পাহাড়ের চারটি ও সমতলের তিনটি পুরসভার ভোট ছিল রবিবার। পাহাড়ের ভোট ছিল তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণ। মানুষ সেখানে চুপচাপ ভোট দিয়েছেন। যা থেকে তৃণমূল এ বার পাহাড়ের রাজনৈতিক বিন্যাসে পরিবর্তন আশা করছে। কিন্তু রায়গঞ্জ, ডোমকল ও পূজালি পুরসভার ভোট উত্তপ্ত হয়েছে দফায় দফায় হিংসার অভিযোগে। ডোমকলে মারধর করা হয়েছে এবিপি আনন্দের সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিককেও। বিরোধীরা সম্মিলিত ভাবে এই ভোটকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে বাতিলের দাবি তুলেছে।

এ দিনের ভোট-চিত্রে দেখা যাচ্ছে, যে সব ওয়ার্ডে বিরোধীদের প্রভাব বেশি, সেখানেই সন্ত্রাস-হুমকি চলেছে বেশি। বিরোধী বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র অভিযোগ, কোনও ওয়ার্ড বিরোধীদের হাতে যেতে দেব না— এই মনোভাব থেকেই সন্ত্রাসের পথে গিয়েছে শাসক দল। তৃণমূলের তরফে পাল্টা বলা হচ্ছে, ‘মানুষের প্রতিরোধে’র নামে গণ্ডগোল বাধিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস নিজেদের অস্তিত্ব বিকিয়ে দিয়েছে বিজেপির কাছে। বিজেপি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তবে তিন বুথে ভোটযন্ত্র ভাঙচুর করবে কেন?’’

আরও পড়ুন...
ভোট লুঠের পাল্টা ইভিএম তুলে আছাড়

বিজেপি-র দিকে শাসক দল আঙুল তুলতে পারছে পূজালি ও রায়গঞ্জের কিছু ঘটনার জন্য। পূজালিতে শাসক দলের বিরুদ্ধে কিছুটা রুখে দাঁড়িয়েছিল গেরুয়া শিবিরই। যদিও কোনও দলীয় পতাকা সেই প্রতিরোধে ছিল না। আর রায়গঞ্জের ৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম ভাঙচুরের জেরে ঘণ্টাদুয়েক ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। খরমুজাঘাট ও কলেজপাড়া এলাকার দু’টি বুথে এক দল উত্তেজিত লোক ঢুকে দু’টি ইভিএম আছড়ে ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। প্রশাসনের কর্তারা দু’টি বুথে নতুন দু’টি ইভিএম নিয়ে গিয়ে বেলা দেড়টা নাগাদ ফের ভোট শুরু করেন। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানির বক্তব্য, ‘‘দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।’’

প্রতিবাদ: নির্বাচন কমিশনার দেখা করবেন না। কমিশনের সামনেই রবিবার
বিক্ষোভ দেখালেন কংগ্রেস এবং বাম প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, ভোট না দিতে না পেরে ক্ষিপ্ত জনতাই ইভিএম ভাঙচুর করেছে। আবার অন্য মহলের দাবি, মানুষের ক্ষোভের কথা বলে বিজেপি-ই ওই কাজ করেছে। যদিও বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা কোথাও কোথাও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে সন্ত্রাস করেছে গেরুয়া শিবিরের বদনাম করার জন্য!

স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধ দেখা গিয়েছে পূজালিতেও। সেখানে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে বোমা ও ওয়ান শটার-সহ দুই দুষ্কৃতীকে ধরে আটকে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা। আবার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বুথ দখল হয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ পৌঁছলে তাদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। বুথ দখলের পরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ভোটারেরা ইট ছোড়েন। জখম হন তিন পুলিশকর্মী। ভোট দিতে না পারায় ওই ওয়ার্ডের একটি বুথেই প্রিসাইডিং অফিসারকে ঘেরাও করে রাখেন মহিলারা। ‘পুলিশ কিছু করবে না। ওরা তৃণমূলের ‘দালাল’— বিভিন্ন বুথের বাইরেই মহিলাদের এ কথা বলতে শোনা গিয়েছে। যা দেখে বিরোধীরা বলছে, সাধারণ মানুষের ধৈর্য এ বার ভাঙতে শুরু করেছে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘মানুষ যত ক্ষণ না প্রতিরোধ করবেন, এই অবস্থা তত ক্ষণ চলবে।’’ তৃণমূলের তরফে ফিরহাদ হাকিম পাল্টা বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলে বিধানসভা ভোট হয়েছিল। তখনও তৃণমূল ২১১ আসন পেয়েছিল। আমাদের সন্ত্রাস দরকার হয় না!’’

violence municipal elections West Bengal TMC BJP CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy