Advertisement
E-Paper

মিড-ডে মিল কর্মীদের মজুরি মিলবে ব্যাঙ্কে

সরকারি প্রকল্পের মজুরি প্রদান। পদ্ধতি কার্যত এক। কিন্তু কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজ হলে রাজ্য সরকারের আপত্তি। রাজ্যের মিড-ডে মিল হলে কেন্দ্রের রাস্তাতেই হাঁটা!

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪

সরকারি প্রকল্পের মজুরি প্রদান। পদ্ধতি কার্যত এক। কিন্তু কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজ হলে রাজ্য সরকারের আপত্তি। রাজ্যের মিড-ডে মিল হলে কেন্দ্রের রাস্তাতেই হাঁটা!

একশো দিনের কাজ প্রকল্পে উপভোক্তা তথা শ্রমিকদের মজুরির টাকা সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে প্রবল আপত্তি তুলেছে রাজ্য। কিন্তু এখানে মিড-ডে মিল কর্মীদের (রাঁধুনি এবং সহকারী) মজুরির ক্ষেত্রে সেই একই পথে হাঁটছে রাজ্য। হাওড়া জেলা দিয়ে সেই পথচলা শুরুও হয়ে গেল বৃহস্পতিবার থেকে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মিড-ডে মিল কর্মীদের মজুরির টাকা নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই টাকা সরাসরি কর্মীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাবে। জেলা প্রশাসনগুলিই সেই টাকা পাঠাবে। হাওড়ার পরে অন্য জেলাতেও এই পদ্ধতি চালু করা হবে। ওই টাকা বর্তমানে ব্লক অফিসের মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে আসে। তাঁরাই টাকা বিলি করেন।

একশো দিনের প্রকল্পের মজুরি নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল, এ ভাবে রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো লঙ্ঘন করছে মোদী সরকার। কিন্তু কেন্দ্র সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা পৌঁছে দেওয়ার পিছনে তিনটি মৌলিক কারণ দেখিয়েছে। এক, মজুরির টাকা যেন শ্রমিকেরা তাড়াতাড়ি পান। দুই, প্রকল্প খাতে খরচের প্রক্রিয়ায় যেন স্বচ্ছতা থাকে। এবং তিন, সরকারের অর্থের অপচয় যাতে না হয়।

আশ্চর্য, মিড-ডে মিলের টাকা কর্মীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো নিয়েও কার্যত একই যুক্তি দিচ্ছে রাজ্যও! প্রশাসন জানিয়েছে, ওই টাকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ছাড়াও দেরি করা, স্বচ্ছতা না-থাকা, কিছু স্কুলের ‘কমিশন’ কেটে নেওয়ার মতো অভিযোগ আসছিল। তাই নয়া সিদ্ধান্ত। রাজ্যের মিড-ডে মিল প্রকল্প অধিকর্তা এন এন বর্মনের দাবি, ১০০ দিনের প্রকল্প নিয়ে নয়া সিদ্ধান্তের অনেক আগেই মিড-ডে মিল কর্মীদের মজুরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দু’টি প্রকল্প এক নয়। তিনি বলেন, ‘‘সব জেলাকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছিল। হাওড়া শুরু করল। বাকি জেলাগুলিকেও দ্রুত নতুন পদ্ধতিকে কার্যকর করতে বলা হবে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, হাওড়া সদর এলাকার স্কুলগুলি অবশ্য নতুন পদ্ধতির আওতায় আসছে না। জেলার গ্রামীণ এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার স্কুল রয়েছে। এই স্কুলগুলির মিড-ডে মিল তৈরির জন্য খাতায়-কলমে কাজ করেন ৯৩০০ কর্মী। তাঁদের জন্যই নতুন নিয়ম। ইতিমধ্যে ওই কর্মীদের সম্পর্কে তথ্য-ভাণ্ডার (ডেটা-ব্যাঙ্ক) গড়ে তোলা হয়েছে। তার মধ্যে থাকছে স্কুলের নাম, কর্মীদের নাম, তাঁদের ব্যাঙ্কের আইএফসি কোড, অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং মাসে ক’দিন কাজ করেছেন তার নির্দিষ্ট হিসাব। তবে, মিড-ডে মিলের কাঁচামাল বা জ্বালানির খরচ আগের মতোই স্কুল কর্তৃপক্ষকেই দেওয়া হবে।

জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস জানান, আগের ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে মিড-ডে মিলের কর্মীরা দৈনিক মজুরির টাকা সম্পূর্ণ পেতেন না। নগদ টাকা তাঁদের হাতে যাওয়ায় আগে ‘কমিশন’ কাটা হতো। অনেক সময় স্কুলে ৪ জন রাঁধুনি কাজ করলে দেখানো হতো ১৪ জন। এতে প্রশাসনের অতিরিক্ত খরচ হতো। নতুন ব্যবস্থার এই অনিয়মের সুযোগ নেই। নতুন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন স্কুল এবং মিড-ডে মিল কর্মীরাও। উদয়নারায়ণপুরের পাঁচারুল শ্রীহরি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু পোড়ে বলেন, ‘‘এটা ভাল সিদ্ধান্ত। এতে আমাদের চাপ কমল। সময়মতো টাকা না আসার জন্য আমাদের যে সমস্যা হতো, সেটা আর সহ্য করতে হবে না।’’ বাগনান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাস্করচন্দ্র আদক বলেন, ‘‘এতে কাজে স্বচ্ছতা আসবে।’’ জয়পুরের চিংড়াজোল নারায়ণী গার্লস হাইস্কুলে মিড ডে মিল রান্নার কাজ করেন মিঠু মান্না। তিনি বলেন, ‘‘টাকার জন্য আর ঘুরতে হবে না। সময়ে টাকা পাব। হিসেব রাখতেও সুবিধা হবে।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রাজর্ষি মিত্র জানান, মিড-ডে মিল স্বাস্থ্যসম্মত করতে স্কুলগুলিতে ধাপে ধাপে কাঠের জ্বালানি বন্ধ করে এলপিজি সিলিন্ডার সরবরাহ করা হবে। প্রথম ধাপে ডিসেম্বরে ৬৭০টি স্কুলে ওই সিলিন্ডার পাঠানো শুরু হবে। এ ছাড়া স্কুলগুলিতে ১ কুইন্ট্যাল চাল রাখার মতো একটি করে ড্রাম এবং অগ্নি নির্বাপণের জন্য এখন থেকে একটি করে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রও বরাদ্দ করা হচ্ছে।

Midday meal workers Wages Banks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy