জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে সমাধিস্থল। সোহম গুহর তোলা ছবি।
বছর কয়েক আগেও বিশেষ অনুষ্ঠানে এখানে আসতেন পরিজনরা। মানুষের সেই আনাগোনা এখন অতীত। জঙ্গল, বটগাছে ঢেকে গিয়েছে প্রিয়জনের সমাধি। এমনকী দিন কয়েক আগেই যে অল সোলস ডে পেরিয়ে গেল, সেদিনও মৃত প্রিয়জনদের স্মৃতিচারণ করতে আসেননি কেউই। এমনই অবস্থা খেজুরির শতাব্দী প্রাচীন ইউরোপীয় গোরস্থানের।
স্থানীয় সূত্র বলছে, শতাব্দী প্রাচীন এই গোরস্থানেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন ইংরেজ দুহিতা এমেলিয়া ম্যাক্সওয়েল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দিনাজপুরের তৎকালীন জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট এডওয়ার্ড ম্যাক্সওয়েল তাঁর স্ত্রী এমেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে খেজুরিতে এসেছিলেন। ১৮২২ সালের ২৬ জুলাই খেজুরিতেই এমেলিয়ার মৃত্যু হয়। ম্যাক্সওয়েলসাহেব স্ত্রীর মৃতদেহ খেজুরির গোরস্থানেই কবর দেন। তাঁর কবরস্থানের সমাধি ফলকে খোদাই রয়েছে, ‘‘হোয়েন সরো উইপস ওভার ভার্চুস স্যাক্রেড ডাস্ট, আওয়ার টিয়ারস বিকাম আস অ্যান্ড আওয়ার গ্রিফ ইজ জাস্ট।” সেই লেখাগুলোতেও জমে গিয়েছে ধুলো।
খেজুরির ইতিহাসকার মহেন্দ্রনাথ করণ তাঁর “হিজলির মসঅন্দ-ই-আলা” গ্রন্থে সমাধিক্ষেত্রে মোট ত্রেত্রিশটি সমাধির কথা জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে খোদাই করা লিপি যুক্ত সমাধিস্থল ছিল ২১টি। দিন কয়েক আগে কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেল, ২১টি সমাধির উপর থেকেই খোওয়া গিয়েছে ফলক। অথচ এই গোরস্থানেই ছিল ভারতের প্রথম ডাকঘর, খেজুরির পোস্টমাস্টার জে বোটেলহো, তাঁর স্ত্রী মেরি ও পুত্র ইউজিন বোটেলহোর সমাধি। ‘খেজুরির একাল সেকাল’ বইতে প্রাবন্ধিক প্রবালকান্তি হাজরা লিখেছেন, ‘‘প্রায় ৩৯ শতক জায়গার উপর এই গোরস্থানে বতর্মানে একটিও স্মৃতিস্তম্ভ নেই। গোরস্থানের প্রায় সব ফলক বিভিন্ন লোকে খুলে নিয়ে যাচ্ছে। কবরগুলির উপর ইঁট-চুন-সুরকির গাঁথুনির অবশেষ বিদ্যমান।”
পাঁচিল ঘেরা সেই ভগ্নস্তূপ এখন আগাছায় ভর্তি। সংরক্ষণের অভাবে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে কবরস্থানটি। খেজুরি ইতিহাস সংরক্ষণ সমিতির সম্পাদক পার্থসারথী দাসের কথায়, ‘‘অতীত ইতিহাসের সাক্ষী এই ইউরোপিয়ান গোরস্থানটি সংরক্ষণের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলে একাধিক বার দরবার করেও ফল মেলেনি। যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তাও রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগও চোখে পড়েনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy