Advertisement
১৮ মে ২০২৪
TMC

21st July TMC Rally: নিজের টাকায় একুশের সভায়

মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এ জেলা থেকে সমাবেশে যাবেন। বাসই ভাড়া করা হয়েছে ৬০০-র মতো।

কলকাতার পথে। বুধবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর স্টেশনে।

কলকাতার পথে। বুধবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ০৬:০৯
Share: Save:

ফেলো কড়ি যাও একুশের সভায়। বাইশের একুশের সভা ভরাতে এই নীতিই নিয়েছে তৃণমূল।

দু’বছর পর এ বার সশরীরে একুশে জুলাইয়ের সভা। ২০২২ সালে তাই এই সভা ঘিরে বাড়তি উন্মাদনা শাসক শিবিরে। পূর্বসূরীদের মতো কৌটো পেতে তহবিল সংগ্রহের সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নয় তৃণমূল। কর্মী, সমর্থকদের কাছ থেকে দশ পয়সাও চাঁদা তোলা বারণ। ‘গৌরী সেন’দের কাছ থেকে দূরত্ব রাখতে বলেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তা হলে একুশের সভায় যাওয়ার খরচ আসবে কোথা থেকে? তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রকারন্তে সর্বস্তরে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করেই যেতে হবে একুশের সভায়।

মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এ জেলা থেকে সমাবেশে যাবেন। বাসই ভাড়া করা হয়েছে ৬০০-র মতো। ছোট গাড়ি ৩ হাজার মতো। অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল নেতাদের দাবি, জেলা থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ সমাবেশে যাবেন। তবে বাস করা হয়েছে ১৩০ টি। ছোট গাড়ি দু’শোর কাছাকাছি। কর্মী ও লোকজনের একটা বড় অংশ ট্রেনে যাবেন। কী ভাবে বাস ভাড়া করা হল? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা ও দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার দাবি, ‘‘কর্মীরা নিজেদের উদ্যোগেই বাস ভাড়া করেছেন।’’ দেবনাথ জুড়ছেন, ‘‘জেলা থেকে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ব্লক ও অঞ্চল স্তরের নেতৃত্বকে নিজেদের উদ্যোগে যানবাহনের সংস্থান করতে বলা হয়েছিল। কারও কাছে হাত পাতা হয়নি। সকলে নিজেদের উদ্যোগেই সাধ্যমতো ব্যবস্থা করেছেন।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সন্দীপ সিংহেরও দাবি, ‘‘কর্মীরা নিজেরা চাঁদা দিয়েই বাসের ভাড়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে সমর্থকেরাও নিজেরা চাঁদা দিয়েছেন।’’

কোনওভাবেই একুশে জুলাইয়ের নাম করে কারও থেকে চাঁদা নেওয়া যাবে না। যদি ১০ পয়সাও চাঁদা নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে— দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, কোনওভাবেই যাতে চাঁদা নিয়ে ‘জুলুমবাজি’ না হয়, সে দিকে অত্যন্ত সতর্ক নজর রেখেই এই বার্তা দিয়েছিলেন অভিষেক। সুজয় ও দেবনাথ বলছেন, ‘‘একুশে জুলাইয়ের নাম করে কোনওভাবেই চাঁদা তোলা যাবে না-এই বার্তা দলের নীচুতলা পর্যন্ত পৌঁছনো হয়েছিল।’’

বাসভাড়া, জলযোগের খরচ দেদার। তা ছাড়া খরচ তো শুধু সভার দিন নয়, তার আগেও হয়। প্রস্ততিসভা, প্রচারে খরচ কম হয় না। মেদিনীপুরেও চুটিয়ে পথসভা হয়েছে ‘শহিদ সমাবেশে’র সমর্থনে। পোস্টার, ফ্লেক্সে প্রচারও হয়েছে। অতটা না হলেও ঝাড়গ্রাম জেলাতেও একুশে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের সমর্থনে পথসভা, জমকালো মিছিল হয়েছে। এক-একটি পথসভায় কেমন খরচ হয়? দুই জেলার একাধিক তৃণমূলকর্মী জানাচ্ছেন, খুব কম করে হলেও নূন্যতম ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কেমন? এক কর্মী শোনাচ্ছেন, প্যান্ডেল, চেয়ার, টেবিল ভাড়া করতেই তো ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বাদে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করতে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। মঞ্চের ‘ব্যাকড্রপের ফ্লেক্স’ তৈরি করাতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়। শুধু মেদিনীপুরে একশোরও বেশি পথসভা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা জেলাতেও সব মিলিয়ে একশোর বেশি পথসভা ও মিছিল হয়েছে। জঙ্গলমহলের এক প্রবীণ তৃণমূল নেতার সরস মন্তব্য, ‘‘অঞ্চলের নেতারা পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন। ব্লকের নেতারা পঞ্চায়েত সমিতি চালাচ্ছেন। শহরের নেতারা পুরসভা চালাচ্ছেন। জেলার নেতারা জেলা পরিষদ চালাচ্ছে‌ন। ঠিকাদাররাও তো সব দলেরই লোকজন। চাঁদা তোলার দরকারটা কী! একুশের আবেগের কাছে অর্থ তুচ্ছ।’’

(সহ প্রতিবেদন: বরুণ দে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC 21st July TMC Rally midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE