Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্ররোচনার নালিশ, ধৃত বিজেপি নেত্রী

ধৃত বিজেপি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সরকারি চিকিৎসক রিপোর্টে লিখেছিলেন, শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। বিষয়টি মানতে চাননি বিজেপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদিকা রিনা সিংহ।

ঝাড়গ্রাম আদালতে ধৃত বিজেপি নেতা সুখেন্দু পাত্র। নিজস্ব চিত্র।

ঝাড়গ্রাম আদালতে ধৃত বিজেপি নেতা সুখেন্দু পাত্র। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৪৯
Share: Save:

ধৃত বিজেপি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সরকারি চিকিৎসক রিপোর্টে লিখেছিলেন, শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। বিষয়টি মানতে চাননি বিজেপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদিকা রিনা সিংহ। পেশায় আইনজীবী রিনাদেবী প্রতিবাদ জানিয়ে চিকিৎসকের চেঁচিয়ে বলেছিলেন, “সত্যিটা লিখুন। ছেলেগুলো পুলিশের মারের চোটে হাঁটতে পারছে না। কোমরে যে ব্যথা রয়েছে সেটা লিখুন।”

বুধবার সকালে নয়াগ্রাম ব্লকের খড়িকামাথানি গ্রামীণ হাসপাতালে ধৃত ছয় বিজেপি কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলাকালীন রিনাদেবী হইচই শুরু করেন। চিকিৎসককে প্ররোচিত করার অভিযোগে রিনাদেবীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁকে ব্যক্তিগত বন্ডে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরে জঙ্গলমহলে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছে। পুলিশের ভূমিকার সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা।

সোমবার ভোটপর্ব মেটার পরেই নয়াগ্রামের মলম অঞ্চলের তেঁতুলিয়া গ্রামে বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে ফের এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। ঘটনাস্থলে এসে বিজেপি-র লোকজনের হাতে পুলিশ কর্মীরাও আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, বিজেপি-র লোকজন পুলিশের গাড়ির কাচ ভাঙেন। তৃণমূল সমর্থক এক মহিলার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক সুখেন্দু পাত্র-সহ ছয় নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করা হয়। এ ছাড়া পুলিশকে মারধর ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে পৃথক একটি সুয়োমোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) মামলা রুজু করেছে পুলিশ। দু’টি মামলাতে আরও বেশ কিছু বিজেপি নেতা-কর্মীর নাম রয়েছে। তাঁরা পলাতক বলে পুলিশের দাবি।

বুধবার আদালতে তোলার আগে নিয়ম মাফিক ধৃতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য খড়িকামাথানি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল ধৃতদের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান। ওই দলে বিজেপি নেত্রী তথা আইনজীবী রিনাদেবী ও অন্তরীক্ষ সিংহ নামে আরও এক আইনজীবী ছিলেন।

রিনাদেবী বলেন, “অভিযুক্তরা আমাদের বার বার জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার গ্রেফতারের সময় তাঁদের উপর পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা এদিন ‘নো এক্সটার্নাল ইনজুরি’ লেখায় আমি অনুরোধ করেছিলাম, যাতে মেডিক্যাল রিপোর্টে প্রকৃত অবস্থার কথা লেখা হয়। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশ বলল আমি নাকি ডাক্তারকে প্ররোচনা দিয়েছি। আমাকে গ্রেফতার করে পুলিশের গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থেকে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পেয়েছি।” ঝাড়গ্রামের এসপি সুখেন্দু হীরা বলেন, “ধৃত অভিযুক্তদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় ওই মহিলা অহেতুক গোলমাল করছিলেন। শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বেল বণ্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

এদিন সুখেন্দু পাত্র-সহ ৬ বিজেপি নেতা-কর্মীকে ঝাড়গ্রাম দ্বিতীয় এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবী দীপঙ্কর ধর ও অন্তরীক্ষ সিংহ আদালতে দাবি করেন, সাজানো ঘটনায় ওই ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরং পুলিশই অভিযুক্তদের বেধড়ক পিটিয়েছে। ধৃতদের মধ্যে চিকেন পক্সে আক্রান্ত এক প্রসূতি মহিলাও আছেন। ওই মহিলার তিন মাসের সন্তান রয়েছে। তাঁকেও রেহাই দেয়নি পুলিশ। বিচারক অবশ্য জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে ছয় অভিযুক্তকেই ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে পাঠান।

বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “পুলিশ-ক্যাডারদের কাজে লাগিয়ে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস শুরু করেছে তৃণমূল। বাক স্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর পরিণতি ভাল হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP election 2016 police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE