চিল্কিগড় রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে নাটক মহড়া। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
কারও নাট্যোত্সবের আয়োজন অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
কেউ পারিশ্রমিক নিচ্ছেন চেক-এ।
কেউ খুচরো টাকায় হল ভাড়া করতে না-পেরে প্রচীন রাজবাড়ির বারান্দায় নাটকের মহড়া দিচ্ছেন।
কেউ আবার স্পনসর খোয়ানোর আশঙ্কায় পুরনো নোটেই সাহায্য নিচ্ছেন।
নোট বাতিলের জেরে এভাবেই অশনি সঙ্কেত দেখছে ঝাড়গ্রামের নাটকের দলগুলি। নোট সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে সংস্কৃতির আঙিনাতেও।
ডিসেম্বরের গোড়ায় কীভাবে নাট্যোত্সব করবেন, সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে ‘কুরকুট’ দলের পরিচালক উপল পাহাড়ির। উপলবাবুদের আসন্ন ন্যট্যোত্সবের জন্য যাঁরা অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই শুভানুধ্যায়ীরা এখন আর ফোন ধরছেন না। উপলবাবু জানালেন, আগামী ১১ ডিসেম্বর সংস্থার উদ্যোগে নাট্যোত্সবের আয়োজন করা হয়েছে। উত্সবে নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য স্থানীয় ও বাইরের একাধিক নাটকের দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উপলবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “এই পরিস্থিতিতে হয়তো উত্সব বাতিল করতে হবে।”
সংস্কৃতি জগতের অন্দরের খবর, সাধারণত শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, চিকিত্সক ও বিশিষ্টজনদের একাংশ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে পুজো-পার্বণ সব ধরনের অনুষ্ঠানেই টাকা করেন। এসব ক্ষেত্রে তাঁদের নাম অবশ্য প্রকাশ্যে আসে না। তবে এর ফলে, রোজগারের উদ্বৃত্ত অংশ খরচ করে পরম নিশ্চিন্তবোধ করেন তাঁরা। কিন্তু শহরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ওই সব বিত্তবানরা কালো-সাদার গেরোয় নাকানি চোবানি খাচ্ছেন। স্পনসররাই এখন ঘোর সঙ্কটে। একাংশ স্পনসর অবশ্য গোপনে অচল নোটে সাহায্য করছেন।
ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি প্রযোজিত শিশুদের পুতুল নাটক ‘টুনটুনা টুনটুন’-এর প্রদর্শন চলছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিক্রিয়েশন ক্লাবে পুতুল নাটকটির শো ছিল। নাটকটির মঞ্চস্থ করার জন্য পাথেয়-খরচ কোর-ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে আর্ট অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষকে মিটিয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ঝাড়গ্রামের ‘এসো নাটক করি’ সংস্থার অভিষেক বর্মনের ইচ্ছে ছিল, একটি বড় ঘর ভাড়া নিয়ে কর্মশালা ভিত্তিক একটি নাটকের নির্মাণ ও মহড়ার কাজ করবেন। নোটের গেরোয় ইচ্ছে বাদ সেধেছে। অভিষেকের কথায়, “বাড়ির মালিক একশোর নোটে ভাড়া চাইছেন। এখন জামবনি ব্লকের চিল্কিগড় রাজবাড়ির বারান্দায় নাটকের নির্মাণ ও মহড়ার কাজ করছি।”
ঝাড়গ্রামের সবচেয়ে পুরনো নাটকের দল আনন্দন-এর বার্ষিক ১৯ তম ‘নাট্যমেলা’ হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক সঞ্জীব সরকার বলেন, “দু’জন স্পনসর পুরনো পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোটে সাহায্য করেছেন। কিন্তু সবাই যদি এভাবে সাহায্য করেন, তাহলে এত খুচরো করাব কোথায়?” ‘ঝাড়গ্রাম কথাকৃতি’ নাটকের দলটি অবশ্য এই পরিস্থিতিতে বুঝে শুনে পদক্ষেপ করছে। অজস্র মঞ্চসফল নাটক রয়েছে সংস্থার ঝুলিতে। কথাকৃতির কর্ণধার বিশিষ্ট নাট্যকর্মী কুন্তল পাল “এ বার অনেক উদ্যোক্তা অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিয়েছেন। সঙ্কটের সময়ে আমরাও চেক মারফত পারিশ্রমিক নিতে সম্মত হচ্ছি।” কথাকৃতির নাট্যকর্মী দেবলীনা দাশগুপ্ত পাল বলেন, “সংস্কৃতির আঙিনাতেও যে এই সমস্যার প্রভাব পড়বে, এমনটা ভাবিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy