Advertisement
০৩ মে ২০২৪

দূরত্ব কমাবে নতুন জেলা

ফের ভাঙছে মেদিনীপুর। পূর্ব-পশ্চিমের পরে এ বার আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় নতুন জেলা ঝাড়গ্রাম। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আইন-আদালত, জেলা ভাঙলে পরিষেবা সহজে মেলার কথা। মেদিনীপুরের বিশিষ্টজনেরা কী চোখে দেখছেন এই জেলা ভাগকে— তাঁদের কথা তাঁদেরই কলমে।

সৌমী ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৫
Share: Save:

বাবা পেশায় আইনজীবী ছিলেন। আমি তখন স্কুলে পড়ি। বাঁশপাহাড়ির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রথমণি মাণ্ডি নামে এক মক্কেল এলেন বাবার কাছে। পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ জানাতে চান তিনি। কিন্তু জেলার সুরক্ষা আধিকারিকের কাছে এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে হয়, সেটা রথমণির জানা ছিল না। ওই আধিকারিক বসেন মেদিনীপুরে জেলাশাসকের কার্যালয়ে। আঁচলে মুড়ি বেধে বাঁশপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ১২০ কিমি রাস্তা উজিয়ে মেদিনীপুরে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন ওই মহিলা।

এতদিন জেলা সদরের দূরত্বের জন্য জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসী মানুষরা সমস্যায় পড়তেন। গত কয়েক বছরে নিজের কর্মজীবনেও রথমণির মতো বহু মক্কেলের ক্লান্ত মুখের আক্ষেপ শুনে মনে হতো, ঝাড়গ্রাম আলাদা জেলা হলে বেশ হয়! ভৌগোলিক পরিবেশ, জনগোষ্ঠী, ভাষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ঝাড়গ্রামের পৃথক সত্ত্বা রয়েছে। এখানে বসবাসকারী আদিবাসী-মূলবাসী মানুষজনের স্বার্থে পৃথক জেলা গঠনের সিদ্ধান্তটি যথাযথ। এ জন্য আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

ঝাড়গ্রাম বিচারবিভাগীয় জেলার (জুডিশিয়্যাল ডিস্ট্রিক্ট) পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হলে ঝাড়গ্রামে জেলা আদালতের পরিষেবা পাবেন বিচারপ্রার্থীরা। দূরত্বের হয়রানির হাত থেকেও মিলবে রেহাই। আগে ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৯টি থানার শিশু নির্যাতন বিরোধী আইনের (পকসো) মামলাগুলি মেদিনীপুর আদালতে শুনানি হত। সম্প্রতি হাজিরা ও মামলার শুনানি ঝাড়গ্রাম আদালতেই হচ্ছে।

সরকারি অর্থ তছরুপের মামলা, ক্রেতা সুরক্ষা আইনের মামলা, জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের মামলা, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের মামলা, আদিবাসীদের জমি-কেনা বেচা সংক্রান্ত মামালাগুলি জেলা আদালত এবং জেলা বিচারকের এক্তিয়ারভুক্ত। ঝাড়গ্রাম বিচার বিভাগীয় জেলা হওয়ার পরে এই সমস্ত বিষয়ের মামলাগুলি ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতের এক্তিয়ারে আসবে। ফলে জঙ্গলমহলের দূরদূরান্তের বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবেন।

ফৌজদারি মামলায় আগাম জামিনের আবেদন জানাতে হয় জেলা আদালতে। এতদিন মক্কেলদের মেদিনীপুর জেলা আদালতে গিয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে আগাম জামিনের আবেদন করতে হতো। এই সমস্যাও মিটবে বলেই আশা। বিচার বিভাগীয় জেলা হলে স্বামী-স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা সংক্রান্ত সমঝোতা কেন্দ্রটিও ঝাড়গ্রামে হবে।

১৯২২ সালে ইংরেজ শাসকের হাত ধরে ঝাড়গ্রাম মহকুমার পথচলা শুরু হয়েছিল। বিশ্ব বাংলার আকাশে এ বার নতুন জ্যোতিষ্ক হল পৃথক জেলা ঝাড়গ্রাম।

লেখক ঝাড়গ্রাম আদালতের আইনজীবী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE