Advertisement
১৬ মে ২০২৪

একুশ বছরেও শহর হওয়ার লক্ষণ নেই এগরার

গত লোকসভা নির্বাচনের সময় তমলুক থেকে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছিলেন জল প্রকল্পের, সে কাজ আজও সম্পূর্ণ হয়নি। বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও নলবাহিত জলের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। নামেই পুরসভা। এখনও ৭০ শতাংশ রাস্তা কাঁচা। ২০১৫ সালেও বিদ্যুৎহীন একাধিক ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা। ২১ বছর বয়স হল এগরা পুরসভার। তবুও রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ— নাগরিক পরিকাঠামোয় সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে পারেনি কোনও পুরবোর্ডই।

রাস্তার পাশে নিকাশির হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার পাশে নিকাশির হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক মিশ্র
এগরা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৪
Share: Save:

গত লোকসভা নির্বাচনের সময় তমলুক থেকে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছিলেন জল প্রকল্পের, সে কাজ আজও সম্পূর্ণ হয়নি। বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও নলবাহিত জলের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত।

নামেই পুরসভা। এখনও ৭০ শতাংশ রাস্তা কাঁচা। ২০১৫ সালেও বিদ্যুৎহীন একাধিক ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা। ২১ বছর বয়স হল এগরা পুরসভার। তবুও রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ— নাগরিক পরিকাঠামোয় সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে পারেনি কোনও পুরবোর্ডই। গত বারের নির্বাচনের আগেও ছিল একরাশ প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট ক্ষমতায় আসার পরেও এলাকার উন্নয়নের বেশির ভাগ প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়নি। অভিযোগ অধিকাংশ বাসিন্দাদের।

সে সব কথা যে রীতিমত সত্যি তা স্বীকার করে নিয়েছে পুরসভাও। এলাকার বাসিন্দারা প্রতিবারের মতো এবারেও আশা করেছিলেন ভোটের আগে হয়তো কিছু কাজ হবে। কিন্তু না। ভোটের মরসুম যে একেবারে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। তাই ‘এখন আর নতুন করে কোনও মোরাম রাস্তা পাকা করা যাবে না’, জানিয়ে দিলেন এক পুরকর্মী।

পুরসভা সূত্রের খবর, এগরা পুরসভার মাত্র ৩০ শতাংশ রাস্তা পাকা বা ঢালাই করা। পুরসবার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বনবিহারী পাত্র বলেন, ‘‘পুর এলাকায় মোট ১৪৯ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে সাত রাস্তা কাঁচা মাটির। বাকি ১৪২ কিলোমিটার রাস্তার ৩০ শতাংশ পাকা ও ঢালাই। বাকিটা মোরাম।’’

সেইসঙ্গে যুক্ত হয় যানজটের সমস্যা। পুরসভা এলাকার উপর দিয়ে কাঁথি, রামনগর, বেলদা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। এই সব রাস্তায় যানজট প্রতিদিনের সমস্যা।

শুধু রাস্তা নয়, একই অবস্থা পানীয় জলের। ১৯৯৩ সালে সালে এগরা পুরসভা হলেও এখনও পানীয় জলের সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ আখতার বলেন, ‘‘গত বারের নির্বাচন থেকে শুনে আসছি বাড়িতে জল আসবে। কিন্তু আজও আসেনি। এই কিছু দিন আগে শুরু হয়েছে পাইপ লাইন বসানোর কাজ। বহু কাজ এখনও বাকি।’’ পুরসভা থেকেই জানা গিয়েছেবেশ কিছু এলাকায় মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী পাইপ বসানোর কাজ শেষই হয়নি।

যতটুকু কাজ হয়েছে, সেখানেও বিরোধীরা অভিযোগের আঙুল তুলছে, পাইপ লাইনের কাজটিতে টেন্ডার পদ্ধতি নিয়ম মেনে হয়নি। জেড়থান অঞ্চলের এক তৃণমূল নেতাকে পাইপ বসানোর কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

রাস্তা পানীয় জলের পরে বাসিন্দাদের অভিযোগ বিদ্যুৎ নিয়ে। ২ ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজরাপাড়া, করণপাড়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাঁওতালপাড়া, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোটালপাড়া ও রাউলপাড়া এখনও পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন। অনেক বাসিন্দাই অবশ্য পাশের এলাকা থেকে বিপজ্জনক ভাবে হুকিং করেন। পুরসভার হিসাব অনুযায়ী প্রায় দু’হাজার খুঁটি রয়েছে। কিন্তু ৩০০টি খুঁটিতেই নেই কোনও পথবাতি।

একই ভাবে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাও। বৃষ্টি হলেই বেশ কিছু এলাকা জলে ডুবে থাকে। তার মধ্যে তিন নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। একই অবস্থা ৬, ৮, ১২, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড-সহ প্রায় গোটা শহরেরই। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা বলতে মোটামুটিভাবে উত্তরে ঘাঁটুয়া খাল, দক্ষিণে কুদি খাল, পূর্বে বালিঘাই খাল ও পশ্চিমে নিউ চম্পা খাল।

বিদায়ী পুর প্রধান স্বপন নায়ক অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন পুরবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগ কাজই সম্পূর্ণ করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসে থাকার সময় টাকা পেতাম না। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর টাকা পেয়েছি। বেশিরভাগ কাজই রয়েছে শেষ পর্যায়ে।’’

এ বিষয়ে বিদায়ী বোর্ডের বিরোধী দলনেতা সুব্রত পণ্ডা বলেন ‘‘আমাদের প্রতিবাদে ওরা কান দেয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE