Advertisement
E-Paper

কড়াকড়িতেই বাড়তি আয়, বাড়ছে দামও

মজুরি বাড়ার পিছনে রয়েছে পুলিশের কড়াকড়ি। সারাদিন কাজ হলে পুলিশের চোখে পড়বে সহজে। তাই কাজের সময়ে কমিয়ে আনা হয়েছে। আর তাতেই মজুরি বেড়েছে খড়্গপুর মহকুমায়। শ্রমিকরাও বাড়তি দু’পয়সা রোজগারে জীবনপণ করে বাজি বাঁধছেন।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৪
নজরে: দিন কয়েক আগে পুলিশের তল্লাশিতে গুরদলা এলাকায় উদ্ধার হয় শব্দবাজি ও তার মশলা। নিজস্ব চিত্র

নজরে: দিন কয়েক আগে পুলিশের তল্লাশিতে গুরদলা এলাকায় উদ্ধার হয় শব্দবাজি ও তার মশলা। নিজস্ব চিত্র

আগে বাজি কারখানায় সারাদিন কাজ করে মিলত টেনেটুনে ২০০ টাকা। এখন কাজ হচ্ছে ঘণ্টার হিসেবে। ২-৩ ঘণ্টা কাজ করেই মিলছে ৫০০ টাকা।

মজুরি বাড়ার পিছনে রয়েছে পুলিশের কড়াকড়ি। সারাদিন কাজ হলে পুলিশের চোখে পড়বে সহজে। তাই কাজের সময়ে কমিয়ে আনা হয়েছে। আর তাতেই মজুরি বেড়েছে খড়্গপুর মহকুমায়। শ্রমিকরাও বাড়তি দু’পয়সা রোজগারে জীবনপণ করে বাজি বাঁধছেন। মজুরি বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে বাজির দামও।

পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে শব্দবাজি তৈরির কথা বললেই ছেড়ুয়ার সঙ্গেই উঠে আসে বেলদার গুরদলা, বড়মোহনপুর, গোবিন্দপুর গ্রামের নাম। এছাড়াও নারায়ণগড়ের কোতাইগড়, খড়্গপুর গ্রামীনের চাঙ্গুয়াল, দাঁতনের তুরকাতেও বিচ্ছিন্নভাবে নিষিদ্ধ বাজি তৈরি হয়। পিংলাতেও বেশ কয়েকটি বাজি কারখানা ছিল। ২০১৫ সালে সেখানে বিস্ফোরণ হয়। মৃত্যু হয় ১৩ জনের। তারপর থেকে অবশ্য পিংলায় শব্দবাজি সেভাবে তৈরি হয় না। ২০১৩ সালে বড়মোহনপুরের একটি বেআইনি বাজি কারখানাতেও বিস্ফোরণ হয়েছিল। তাতে দু’জনের মৃত্যু হয়। পিংলায় প্রায় বন্ধ হলেও বড়মোহনপুরে এখনও পুরোদমে নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি চলছে। সবগুলি জায়গাই খড়্গপুর মহকুমার অন্তর্গত।

এ বার শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও কড়া হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। মাঝে মাঝেই হচ্ছে তল্লাশি অভিযান। শব্দবাজি তৈরির কারখানাগুলিতেও কাজে বদল এসেছে। গত বছর পর্যন্ত সারাদিন ধরে শব্দবাজি তৈরির কাজ হলেও এ বার কাজ হচ্ছে ঘণ্টা ধরে। গুড়দলা এলাকার এক বাজি শ্রমিকের কথায়, “আগে সারাদিন কাজ করেও ২০০ টাকার বেশি পেতাম না। এখন ঘণ্টা প্রতি ২০০ টাকা পাচ্ছি। এটা তো কিছু দিনের ব্যাপার। তাই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি।’’ বড়মোহনপুরের বাজি কারখানার কারিগর নিরঞ্জন দাসের আবার প্রশ্ন, “কেউ যদি করে খায় তাতে আপনাদের কী? আমাদের জমি নেই তাই আমরা এগুলি করে খাই।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘পুলিশের ঝামেলা’র জন্য এখন তিনি শব্দবাজি তৈরি করছেন না। খড়্গপুর-২ ব্লকের চাঙ্গুয়ালের বাজি কারিগর পুলক পাত্রের বক্তব্য, “একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে গোলমাল হচ্ছে। ধানের নায্য দাম পাওয়াও কঠিন। তাই পেটের টানেই বাজির কাজ করি।”

বিজেপির দাবি, হাতে কাজ না থাকার জন্য শব্দবাজি তৈরির কারখানাগুলিতে ভিড় বাড়ছে। নারায়ণগড়ের বিজেপি নেতা গৌরীশঙ্কর অধিকারীর দাবি, “একশো দিনের কাজের তুলনায় দ্বিগুন টাকা পাওয়ার জন্যই অনেকে ঝুঁকি নিচ্ছেন।” খড়্গপুর-২ ব্লকের চাঙ্গুয়াল এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিজেপির চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “নিষিদ্ধ বাজির কারবারের অন্যতম কারণ কর্মসংস্থানের অভাব। একশো দিনের কাজে তো দিনে ১৯২ টাকা মেলে। তাও ৬০ দিনের বেশি কাজ মেলে না।”

গরিব মানুষ যে কম সময়ে বেশি টাকা রোজগারের হাতছানিতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েও শব্দবাজি তৈরি করছেন সেটা তৃণমূলও মানছে। বড়মোহনপুরের তৃণমূল নেতা বাদল বর্মনের কথায়, “শব্দবাজি তৈরিতে বাধা দিলে বলা হয় প্রতিদিনের কাজের ব্যবস্থা করে দিতে। সেটা তো পারব না।’’ খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি কখনও বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে শ্রমিকদের কীভাবে সরকারি প্রকল্পে আরও কর্মনিশ্চয়তা দেওয়া যায় সেটা দেখব।’’

Firecrackers Kharagpur Administrative Strictness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy