তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে কিষান মান্ডি। কেশপুরে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে জেলায় আটকে অনেক প্রকল্পের কাজ।
বুধবার বর্ধমানে শততম প্রশাসনিক সভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত চার বছরে বেশ কয়েকবার পশ্চিম মেদিনীপুরেও এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে বেশ কিছু নির্দেশও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশগুলোর একটি তালিকাও তৈরি হয়। দেখতে দেখতে একের পর এক মাস ঘুরেছে। অথচ, অনেক কাজেরই অগ্রগতি হয়েছে নামমাত্র।
কেমন? ২০১২ সালের ৮ অগস্ট জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, সব ব্লকে কিষান বাজার ও হিমঘর তৈরি হবে। পরবর্তী সময়ে ২৯টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ১০টি ব্লকে কিষান বাজার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত একটিও চালু হয়নি। সাতটির কাজ শেষ হয়েছে। তিনটির কাজ শীঘ্রই শেষ হওয়ার কথা। ওই বছরেরই ১২ জানুয়ারি জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করেন, গোয়ালতোড়ে এক হাজার একর জমিতে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তোলা হবে। জঙ্গলমহলে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। দু’টোর কোনওটাই হয়নি। গোয়ালতোড়ে শিল্পতালুকের জন্য শুধুমাত্র জমি দেখা হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, খড়্গপুর গ্রামীণের নিমপুরায় আইটি পার্ক হবে। পরবর্তী সময়ে জমি চিহ্নিত হলেও কাজ আর বিশেষ এগোয়নি।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই জেলা সফরে এসে কেলেঘাই- কপালেশ্বরী প্রকল্পে কাজের মন্থর অগ্রগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজে গতি আনার নির্দেশ দেন। কাজে অবশ্য গতি আসেনি। মেদিনীপুর মেডিক্যালে বার্ন ইউনিট খোলার নির্দেশ দেন। কাজ চলছে। তবে এখনও ওই ইউনিট চালু হয়নি। পরিস্থিতি দেখে শাসক দলের সমালোচনায় সরব বিরোধীদলগুলি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী বছরে তিন- চারবার আমাদের জেলায় আসেন। তবে, জেলায় এসে তিনি যে সব প্রতিশ্রুতি- ফিরিস্তি দিয়ে যান, তা কার্যকর হয় না। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। মানুষও বিরক্ত।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, মানুষ কাজও দেখতে চান।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যে কাজগুলো করতে বলে গিয়েছিলেন, সেই কাজগুলো হলে জেলার মানুষ হিসেবে খুশিই হতাম। কিন্তু, বহু প্রকল্পের কাজই তো থমকে!”
কী বলছে শাসক দল? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “কুত্সা- অপপ্রচার করা ছাড়া ওদের তো কোনও কাজ নেই! মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জেলায় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। শিক্ষা- স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই নানা কাজ হচ্ছে। রাজ্য সরকার এমনিতেই ঋণে জর্জরিত। তারমধ্যেই সব কাজ চলছে।” তাঁর কথায়, “সব কাজ তো আর এক- দু’মাসের মধ্যে হয়ে যাবে না। বড় কাজ এগোতে কিছু সময় লাগে!”
গত চার বছরে জেলা সফরে এসে আর কী কী নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী?
প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার নির্দেশ দেন তিনি। শয্যা সংখ্যা অবশ্য বাড়েনি। এই সময়ের মধ্যে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। আনন্দপুর থানার নতুন ভবন নির্মাণের কথা জানিয়েছিলেন। এই থানাটি এখনও ভাড়া বাড়িতে চলে। নতুন ভবন তৈরির জন্য আগেই জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। তবে কাজ শুরু হয়নি। জেলার সমস্ত থানায় ‘ডাটা ব্যাঙ্ক’ তৈরির উপর জোর দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রেও কাজের গতি মন্থর। মেদিনীপুর শহরে ফুটপাত তৈরির কথা জানান। দীর্ঘ টালবাহানার পর সম্প্রতি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এ বার কাজ শুরু হওয়ার কথা।
জেলার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কের শাখা খোলারও নির্দেশ দেন তিনি। অবশ্য এখনও সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরেও কেন বেশ কিছু কাজ থমকে রয়েছে? প্রশাসনেরই এক সূত্রের খবর, কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে। খোদ জেলা পরিষদের মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দলেরই এক সূত্রে খবর, এই সময়ের মধ্যে একাধিকবার জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বৈঠকে একাংশ জেলা পরিষদ সদস্যই জেলা পরিষদের কাজকর্ম নিয়ে সরব হন।
বছর ঘুরলে বিধানসভা নির্বাচন। এ বার কি প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসবে? সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণবাবুর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কার্যকর না হলে তার জবাব তো মানুষই চাইবেই!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy