Advertisement
০৬ মে ২০২৪

রকির স্মৃতি আর বিচারের আশা নিয়ে বাঁচেন বাবা-মা

দু’চোখে টলটলে জল। শক্ত চিবুক। বাড়ির একতলার বৈঠকখানায় বাঁধ ভাঙা কান্না আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন নির্মাণ সরঞ্জামের ব্যবসায়ী পবনকুমার অগ্রবাল। শরীরী ভাষায় সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

রকির স্মৃতিতে তৈরি জলসত্র থেকে চলছে সরবত বিলি। —নিজস্ব চিত্র

রকির স্মৃতিতে তৈরি জলসত্র থেকে চলছে সরবত বিলি। —নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত l
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০০:৪৯
Share: Save:

দু’চোখে টলটলে জল। শক্ত চিবুক। বাড়ির একতলার বৈঠকখানায় বাঁধ ভাঙা কান্না আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন নির্মাণ সরঞ্জামের ব্যবসায়ী পবনকুমার অগ্রবাল। শরীরী ভাষায় সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

বাড়ির দোতলায় ঠাকুরঘরে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন পবনবাবুর স্ত্রী সত্যভামাদেবী। ২০১৪ সালের ৬ মে দিনটায় ঝাড়গ্রাম শহরের বলরামডিহি এলাকায় এই বাড়িটি যেন নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছে। এই দিনটিতেই অগ্রবাল দম্পতির একমাত্র ছেলে তরতাজা যুবক সৌরভ ওরফে রকিকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল।

দু’বছর পরেও বিচারের বাণী শোনার অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন রকির স্বজনরা। কিন্তু এখনও সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ আসেনি। তারই অপেক্ষায় ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে রকি হত্যা মামলা।

রকির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বলরামডিহি এলাকায় পথচারীদের ঠান্ডা সরবত খাওয়ানো হয়। রকির মৃত্যুর পরে ‘সৌরভ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর উদ্যোগে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বাড়ির সামনে পথচারীদের ঠান্ডা পানীয় জল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন পবনবাবুরা। এ দিন ঠাণ্ডা জলের পাশাপাশি, পথচারীদের সরবতও খাওয়ানো হয়।

পবনবাবু বলেন, “বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছেলেকে হারিয়েছি। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দেখতে চাই। সর্বোচ্চ আদালতের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে।” রকির মৃত্যুর পরে এখন তাঁর নামাঙ্কিত ট্রাস্ট গড়ে নানা ধরনের সেবামূলক কাজকর্ম করছেন পবনবাবু ও সত্যভামাদেবী। সম্প্রতি পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে বলরামডিহি এলাকার একটি ধর্মশালায় জলপ্রকল্প তৈরি করে দিয়েছেন তাঁরা। বছর দু’য়েক আগে রকির নামে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু হয়েছে। এ দিন ঝাড়গ্রামের নবচেতনা ক্লাবের উদ্যোগে রকির স্মৃতিতে শহরের পাঁচমাথা মোড় এলাকায় পথচারীদের কাঁচা আমের সরবত ও লেবুর সরবত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করানো হয়েছিল।

২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বছর ছাব্বিশের রকি। তিনি বাবার নির্মাণ সরঞ্জামের ব্যবসার দেখভাল করতেন। পরে ২০১৪-র ৬ মে ওড়িশার গঞ্জামের রম্ভা এলাকায় রকির ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। রকিকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগে ধৃত পাঁচ অভিযুক্তের মধ্যে পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মা-সহ চার জন জেলবন্দি রয়েছেন। অশোকের স্ত্রী অন্যতম অভিযুক্ত পুনম শর্মা অবশ্য হাইকোর্টের নির্দেশে শর্তাধীন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

অভিযুক্তরা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ায় বছর দেড়েক হতে চলল ঝাড়গ্রাম দায়রা আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। গ্রীষ্মাবকাশের পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি শুনানি হওয়ার কথা। রকিকে অপহরণের পরে অশোকের দলবল মোটা মুক্তিপণ চেয়ে পবনবাবুকে ফোন করেছিল বলে পুলিশের দাবি। তবে কেন রকিকে খুন করা হয়েছিল সেই প্রশ্নের জবাব আজও অস্পষ্ট।

ঘটনার পরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর রকি’ গ্রুপে আছড়ে পড়েছিল প্রতিবাদ-ধিক্কার। রকির হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল ঝাড়গ্রাম। দু’বছর পরে সেই আবেগ অনেকটাই স্তিমিত।

তবু চোখের জলে ভাটা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rockey murder Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE