Advertisement
১৬ মে ২০২৪

পুর-অন্দরেই ক্ষোভ পরিষেবা নিয়ে

ক্ষীরপাই পুরসভার বয়স প্রায় ১৪০ বছর। কিন্তু নাগরিক পরিষেবায় এখনও অনেকখানিই পিছিয়ে এ শহর। উপরন্তু প্রতিদিন বাড়ছে জনবসতি, বা়ড়ছে লোক সমাগম। ফলে শহরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত।

জঞ্জালে ভরেছে শহর। —নিজস্ব চিত্র।

জঞ্জালে ভরেছে শহর। —নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ক্ষীরপাই শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০০:৫১
Share: Save:

ক্ষীরপাই পুরসভার বয়স প্রায় ১৪০ বছর। কিন্তু নাগরিক পরিষেবায় এখনও অনেকখানিই পিছিয়ে এ শহর। উপরন্তু প্রতিদিন বাড়ছে জনবসতি, বা়ড়ছে লোক সমাগম। ফলে শহরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত।

শহরের বুকের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়ক— ঘাটাল-চন্দ্রকোনা ও ক্ষীরপাই-আরামবাগ সড়ক। হাজার লোকের যাতায়াত। হরেক রকম কাজ। কিন্তু নোংরা পরিষ্কারের বিষয়ে কোনও ভাবনা চিন্তাই নেই পুরসভার। রাস্তার উপরই পড়ে থাকে আবর্জনা। তা সে রাজ্য সড়ক হোক বা শহরের ভিতরের ছোট বড় রাস্তা কিংবা বাজার। অবস্থা এমনই যে যান চলাচলেও সমস্যা সৃষ্টি হয়।

ক্ষীরপাই পুরসভা এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ১৭হাজার। এলাকার মানুষ তাঁদের নিত্য দিনের আবর্জনা রাস্তার পাশে ফেলে দিতেই অভ্যস্ত। ফলে প্রত্যেক পাড়াতেই গলির মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়ে গিয়েছে ভ্যাট। দুর্গন্ধে টেঁকা দায়, পথ চলাও দুর্বিপাক। তবু সচেতনতা নেই। বাসিন্দা অবশ্য দোষ দেন পুরসভাকেই।

সে কথা সত্যি বটে। এত বড় পুরসভায় নেই কোনও স্থায়ী ভ্যাট, নেই নিয়মিত আবর্জনা নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থাও। স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছেন মাঝে মধ্যে ট্রাক্টরে করে নোংরা নিয়ে গিয়ে ফেলা হত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি জায়গায়। সেখান থেকে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ওই ওয়ার্ডেটিও ঘন বসতিপূর্ণ। ফলে বাসিন্দারা অভিযোগ ওঠে এ ভাবে নোংরা জমা করা নিয়েও। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সেই ভ্যাটও। আপাতত শহরের বাইরে একটি জমিতেই জমানো হচ্ছে যাবতীয় আবর্জনা।

মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো শহরের নিকাশি নালাগুলি। পুর এলাকা হলেও প্রায় সব নালাই কাঁচা। স্বাভাবিক ভাবে বৃষ্টির বেগ বাড়লেই জল উপচে পড়ে ভাসিয়ে দেয় রাস্তা। এমনই জল জমতে জমতে ঢুকে পড়ে বসত বাড়িতেও। সে জল নামতেও সময় লাগে। ফলে বর্ষা এলেই আতঙ্কে ভোগেন বাসিন্দারা।

সমস্যা যে শুধু শহরের ভিতরের ছোট রাস্তার তা নয়, রাজ্য সড়কেও রয়েছে এই আবর্জনার দাপট। বড় রাস্তার পাশে যে কাঁচা মাটির ফুটপাথ রয়েছে সেখানে জড়ো হয় আবর্জনা। ফলে পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তার উপর দিয়েই হাঁটাচলা করতে। অন্যদিকে যে সব জায়গায় বাজার বসে, সেখানেও সেই একই দশা। সব্জির খোসা বা মাছ মাংসের ছাঁট— বাজারের এক কোণায় জড়ো করেন ব্যবসায়ীরা। তারপর সে সব পরিষ্কার করতে লেগে যায় অনেক সময়। ততক্ষণ দূষিত হতে থাকে শহরের বাতাস। পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পান অবশ্য জানান, স্থায়ী ভ্যাট তৈরি করার বিষয়ে ভাবছেন তাঁরা। শহরের বাইরে একটি পরিত্যক্ত জমি তাঁরা নির্দিষ্ট করেছেন বলে তাঁর দাবি।

পুর পরিষেবার অন্য একটি দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলেন স্থানীয়রা। সেটি হল বাসস্ট্যান্ড। দীর্ঘদিন আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অথচ শহরে মধ্যেই রয়েছে জমি। ক্ষীরপাই পুরসভাটি চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের সদর
েশহরও বটে।

প্রতিদিনই গোটা ব্লক থেকে হাজার হাজার মানুষ শহরে আসেন। বাসস্ট্যান্ড না থাকায় হয়রান হতে হয় সাধারণ মানুষকে। শহরে একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের জন্য দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে দরবার করে আসছেন শহরের বাসিন্দারা।

অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষ বারবার শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এখনও জমি চিহ্নিত করার কাজটুকুও ‌হয়নি। এ বিষয়েও দুর্গাশঙ্করবাবুর আশ্বাস, ‘‘চলতি আর্থিক বর্ষেই বাসস্ট্যান্ডের কাজ যাতে শুরু করা যায়, সে
চেষ্টাই করছি।’’

বাসিন্দাদের অভিযোগ, চৌকান ও হালদারদিঘি থেকে বাস গুলি ছাড়ে এখন। সেখানকার অবস্থা খুবই খারাপ। একটি যাত্রী প্রতিক্ষালয় ছিল, কিন্তু দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে তা এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ সংলগ্ন রাস্তায় কোনও আলোর ব্যবস্থাও নেই, ফলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

municipal service Chandrakona busstand auto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE