প্রতিশ্রুতি রাখে নি রাজ্য সরকার। তাই ক্ষোভে ফুঁসছেন সাঁওতালি মাধ্যমের পার্শ্ব শিক্ষকরা। রবিবার ঝাড়গ্রামে সাঁওতালি শিক্ষক সংগঠন ‘খেরওয়াল মাচেৎ মাডোওয়া’র রাজ্য সম্মেলনেও উঠে এল সেই ক্ষোভের প্রসঙ্গ। সম্মেলনে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই তিন জেলার জঙ্গলমহলের ২৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ছিলেন সাঁওতাল সমাজের সর্বভারতীয় সামাজিক নেতারাও।
রবিবার অরণ্যশহরের দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষ রাজ্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুরুতে একটি মিছিল শহর পরিক্রমা করে। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শিক্ষাব্রতী চৈতন্য মুর্মু। সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, সরকারি স্তরে দাবি করা হচ্ছে, জঙ্গলমহল হাসছে। কিন্তু জঙ্গলমহলের সাঁওতালি পার্শ্ব শিক্ষকরা এখন কাঁদছেন! কারণ, তাঁদের কাজের আর কোনও নিশ্চয়তা নেই। বাম আমলে পার্শ্ব শিক্ষকদের কাজের মেয়াদ ষাট বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। তৃণমূলের সরকার ২০১২ সালে তিন বছরের চুক্তির ভিত্তিতে তিন জেলায় সাঁওতালি পার্শ্ব শিক্ষকদের নিয়োগ করেছিল। জঙ্গলমহলের তিন জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকস্তরে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পড়ানোর জন্য মোট ১,০৯৮ জন সাঁওতালি পার্শ্ব শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। গত এপ্রিলে পার্শ্ব শিক্ষকদের তিন বছর কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর মাত্র দু’মাসের জন্য চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হয়। সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন ‘হুল দিবসে’র দিনে। পরবর্তী চুক্তি আদৌ পুনর্নবীকরণ করা হবে কি-না সে বিষয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা। এদিন সম্মেলনে প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, জঙ্গলমহলের সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষাদানের নামে প্রহসন হচ্ছে। প্রশাসনিক আমলাদের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্য পড়ুয়ারা সময় মতো বইপত্র পাচ্ছে না। গত মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছিলেন। ওই সময় ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পার্শ্ব শিক্ষকদের সমস্যা সংক্রান্ত একটি দাবি সনদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরও প্রশাসনিকস্তরে কোনও পদক্ষেপ করা হয় নি বলে সম্মেলনে এ দিন সরব হন প্রতিনিধিরা।
সম্মেলনে তিন জেলার প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, বেশ কিছু সাঁওতালি পার্শ্ব শিক্ষককে বাংলা মাধ্যম স্কুলে নিয়োগ করা হয়েছে। আবার বেশ কিছু সংখ্যক সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে অন্য মাধ্যমের শিক্ষক রয়েছেন। সম্মেলনে দাবি ওঠে সাঁওতালি পার্শ্ব শিক্ষকদের স্থায়ী করে তাঁদের কাজের মেয়াদ অন্য মাধ্যমের পার্শ্ব শিক্ষকদের মতো ষাট বছর পর্যন্ত করতে হবে। আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতা (মাঝি পারগানা মহল) হাবু মুর্মু সম্মেলনে জানিয়ে দেন, অবিলম্বে পার্শ্ব শিক্ষকদের দাবি মানা না হলে তিন জেলার জঙ্গলমহল জুড়ে সমস্ত সাঁওতালি সংগঠনগুলি একযোগে আন্দোলনে নামবে।
‘খেরওয়াল মাচেৎ মাডোওয়া’র রাজ্য সম্পাদক লুদা সরেন বলেন, “অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাঁওতালি মাধ্যমের পার্শ্ব শিক্ষকদের বহাল করা হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হচ্ছে না। আমাদের অনুরোধ, মুখ্যমন্ত্রী সাঁওতালি পার্শ্ব শিক্ষকদের আতঙ্কমুক্ত করুন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy