Advertisement
E-Paper

শিক্ষক বাড়ন্ত, ছাত্রছাত্রী শূন্য স্কুল

২০১৮ সালে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমে হয় মাত্র ন’জন। ওই বছরের শেষের দিকে একজন শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৯
বিকড়া জুনিয়র হাইস্কুল। নিজস্ব চিত্র

বিকড়া জুনিয়র হাইস্কুল। নিজস্ব চিত্র

স্কুল ছুটের সংখ্যা কমাতে এবং ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর শিক্ষা গ্রহণকে সুনিশ্চিত করতে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় গড়ে তোলা হয়েছিল বহু জুনিয়র হাইস্কুল। কিন্তু পাঁশকুড়ায় এ রকমই একটি জুনিয়র হাইস্কুল ছেড়ে দিল সকল পড়ুয়া। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় শিক্ষক নেই। তাই তাঁরা সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ছ’বছর আগে সমগ্ৰ শিক্ষা মিশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া ওই সব জুনিয়র হাইস্কুলগুলিতে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। প্রাথমিকভাবে স্কুলগুলিতে অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি এবং হাইস্কুলের শিক্ষকদের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ করে সরকার। ২০১৪ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নতুন তৈরি স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল বলে অভিযোগ। দাবি, স্কুলগুলির একটা বড় অংশ প্রত্যন্ত গ্রামে হওয়ায় নতুন শিক্ষকেরা কাউন্সিলিংয়ের সময় ওই স্কুলগুলি এড়িয়ে যান।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১৫ সালে আপার প্রাইমারি বা উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য সরকার আলাদা ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করে। ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ায় হয়। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলেও নানা মামলার জেরে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত ছিল। সম্প্রতি উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে আদালত ছাড়পত্র দিলেও নিয়োগের ইন্টারভিউ এখনও শুরু হয়নি।

পাঁশকুড়ার মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তফসিলি জাতি অধ্যুষিত চন্দনগেড়িয়া গ্রামে ২০১৩ সালে তৈরি হয়েছিল বিকড়া জুনিয়র হাইস্কুল। প্রথম পর্যায়ে দু’জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ওই বিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হয়। বছর দু’য়েক পর ওই শিক্ষকদের বয়স ৬৫ বছর হলে তাঁদের পরিবর্তে আরও দু’জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করে সরকার। স্কুল সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে চারটি ক্লাসে মোট ৩৯ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। কিন্তু বিষয় ভিত্তিক নতুন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিদ্যালয় থেকে ছাত্রছাত্রীদের সরিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করতে শুরু করেন অভিভাবকরা।

২০১৮ সালে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমে হয় মাত্র ন’জন। ওই বছরের শেষের দিকে একজন শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। স্কুলে পড়ে থাকে মাত্র এক জন শিক্ষক। চলতি বছর স্কুলেতে নতুন করে কোনও ছাত্র ভর্তি তো হয়নি, উল্টে বাকি ন’জন ছাত্রও অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

বিকড়া গ্রামের বাসিন্দা হরিপদ খাঁ বলেন, ‘‘বাড়ির সামনের স্কুলে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করতে কে না চায়? কিন্তু শিক্ষক না থাকলে পড়াবে কে?’’ চন্দনগ্যেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা তথা এক অভিভাবক দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘স্কুলটি ভালই চলত। কিন্তু দু'জন শিক্ষকের পক্ষে স্কুল চালানো কঠিন কাজ। এখন স্কুলে একজন শিক্ষক রয়েছেন। তাই কেউ আর এখানে সন্তানদের ভর্তি করতে চাইছেন না।’’

স্কুলের দুর্দশার কথা কথা স্বীকার করেছেন পাঁশকুড়া উত্তর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক পরিমল নস্কর। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে যে শিক্ষক ওখানে রয়েছেন, তিনিও পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। আমি ওঁকে বুঝিয়েছি, যাতে স্কুলটি চালু থাকে। সমস্যার সমাধানে শীঘ্রই আলোচনায় বসব। বিকল্প শিক্ষক ব্যবস্থা করে স্কুলটিতে ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে উদ্যোগী হব।’’

Education Panskura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy