অলিগলির রাস্তায় আবর্জনায় অবরুদ্ধ নর্দমা। নিকাশি নালা উপচে পড়ছে নোংরা জল। সে সব নিয়ে অবশ্য হুঁশ নেই ঘাটাল পুরসভার। মশা মারতে পুরকর্মীরা ব্যস্ত কামান দাগতে! তাতে অবশ্য মশার উপদ্রব কমার কোনও লক্ষণই নেই বলে অভিযোগ!
মশা নিধনে দিন সাতেক আগে ধোঁয়া ছড়ানোর কামান কিনেছে ঘাটাল পুরসভা। তারপর থেকেই পুরকর্মীরা ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে ঘুরে ধোঁয়া ছড়াচ্ছেন। তাতে মশা মরা দূরে থাক, উল্টে শহরে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত শহরের কোন্নগরের এক কলেজ ছাত্রী। শহরের বাসিন্দাদের দাবি, শুধু ধোঁয়া ছড়িয়ে কী হবে। মশা মারতে নিকাশি নালাগুলিও নিয়মিত সাফাই করা প্রয়োজন।
মশা মারতে যে ধোঁয়া তেমন কার্যকর নয়, তা মানছেন জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দফতরের ওই আধিকারিক বলছেন, “বাইরে ধোঁয়া ছড়ালে অনেক সময় মশা বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। তাই ধোঁয়া দেওয়ার পাশাপাশি লার্ভা নষ্ট করতে নিকাশি নালাগুলিতেও মশানাশক তেল স্প্রেও করতে হবে। নিয়মিত আবর্জনা সাফাইও প্রয়োজন।”
বানভাসি ঘাটালে জল নামতেই বাড়তে শুরু করেছে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। সরকারি হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোম— জ্বর নিয়ে প্রতিদিন অনেকে ভর্তি হচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঘাটাল শহরে এখনও পর্যন্ত সত্তর জন জ্বরে আক্রান্ত। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা আরও বেশি। জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকের রক্তে ম্যালোরিয়ার জীবাণুও মিলেছে। ডেঙ্গির উপসর্গ থাকায় সংগ্রহ করা হয়েছে বেশ কয়েকজনের রক্তের নমুনাও। যদিও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলছেন, “জ্বর যেমন হচ্ছে, তেমন সুস্থও হয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।”
যদিও মশা নিধনে শহরের নিকাশি নালাগুলি যে নিয়মিত সাফাই হয় না, ঘাটালের রাস্তায় ঘুরলেই তা চোখে পড়বে। শহরের অধিকাংশ নালায় জমে রয়েছে প্লাস্টিক, খাওয়ার শোলার থালা। কুশপাতা, গোবিন্দপুর, বিবেকানন্দ পল্লি,অরবিন্দপল্লি-কোন্নগরে নালার অবস্থা কম-বেশি একই।
কুশপাতার বাসিন্দা পাপিয়া মালের অভিযোগ, “বানভাসি শহরে জল নামার পর থেকেই পুর-কর্মীদের দেখা মেলেনি। ফলে মশার উৎপাত যেমন বাড়ছে, তেমনই নালার নোংরা জল থেকে দুর্গন্ধও ছাড়ছে।” একই বক্তব্য অরবিন্দ পল্লির বাসিন্দা যুবক হেমন্ত দাসেরও।
তাঁর প্রশ্ন, “পুরসভা মশা মারতে কামান কিনেছে ভাল কথা। তবে নর্দমা পরিষ্কার না করে শুধু ধোঁয়া ছড়িয়ে কি লাভ।” ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘শহর জুড়ে নালা পরিষ্কারের কাজ চলছে।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘বাড়ির আবর্জনা ভ্যাটে না ফেলে অনেকে নালাতেই ফেলে দিচ্ছেন। শহরের বাসিন্দাদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।”