জীর্ণ: কুষ্ঠ হাসপাতালের হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র
খাতায়কলমে সর্বাধিক কুষ্ঠপ্রবণ জেলা এটিই। অথচ এখানকার কুষ্ঠ হাসপাতালটির দশাই শোচনীয়।
সরকারি হিসেব বলছে, রাজ্যে সবচেয়ে বেশি কুষ্ঠরোগী রয়েছেন ঝাড়গ্রাম জেলায়। সেই কারণে এখানে নতুন করে কুষ্ঠরোগী শনাক্তকরণের জন্য সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। অথচ সরকারি অনুদানে চলা কুষ্ঠ নিবারণ প্রকল্পের বেসরকারি ঝাড়গ্রাম কুষ্ঠ হাসপাতালটি বেহাল। কুষ্ঠ নিবারণ প্রকল্পের কর্তার বক্তব্য, বরাদ্দের অভাবে যথাযথ চিকিত্সা পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না কুষ্ঠরোগীদের। তা ছাড়া, জেলায় সরকারি কুষ্ঠ হাসপাতালও নেই। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে যে সব কুষ্ঠরোগী চিহ্নিত হন, তাঁদের মধ্যে গুরুতর রোগীদের এই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায়িত্বে চিকিত্সা করেন। ফলে দশ শয্যার (পুরুষ ওয়ার্ডে পাঁচটি ও মহিলা ওয়ার্ডে পাঁচটি) বেসরকারি হাসপাতালটিই কুষ্ঠরোগীদের ভরসা।
স্থানীয়েরা জানান, হাসপাতালের দোতলা ভবন প্রায় ভূতের বাড়ির মতো। রোগীদের দু’টি ওয়ার্ডে অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেতে অবস্থা। জানালার কাচ ভাঙা। ফিমেল ওয়ার্ডের ছাদ ভগ্নপ্রায়।
সাতের দশকে বেসরকারি উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম কুষ্ঠ নিবারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ঝাড়গ্রাম শহরে এক একরের বেশি জায়গা জুড়ে কুষ্ঠ নিবারণ প্রকল্পের প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, কর্মী আবাসন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ও তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির একটি সংস্থার যৌথ অর্থ সাহায্যে প্রকল্পের কাজ চলত। সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, টানা আড়াই দশকের প্রচেষ্টায় ঝাড়গ্রামের ৮০০-এরও বেশি কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করে মূল স্রোতে ফেরানো সম্ভব হয়। ২০০৫ সালে ভারতকে ‘কুষ্ঠমুক্ত’ ঘোষণা করে কেন্দ্র। ফলে অনুদান কমিয়ে দেয় জার্মান সংস্থা। ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি বরাদ্দ। এর পরেই হাসপাতালটির অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।
কেন্দ্রের সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, দেশে প্রতি ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১০ জন কুষ্ঠ আক্রান্ত। এ রাজ্যেও নতুন করে কুষ্ঠ রোগীর সন্ধান মিলছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে ৩ জন কুষ্ঠ আক্রান্ত। তবে তার পরেও হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। কুষ্ঠ প্রকল্পের কাজ পরিচালনার জন্য ২০১৪ সালে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তারপর মেলেনি বরাদ্দ। হাসপাতালের বহির্বিভাগে সপ্তাহে এক দিন আউটডোরে কুষ্ঠরোগীদের চিকিত্সা হয়। ওষুধপত্র দেওয়া হয়। রয়েছেন এক জন চিকিত্সক। প্রশিক্ষিত নার্স নেই। ১৭ জন কর্মী নামমাত্র সাম্মানিকের বিনিময়ে কাজ করেন। গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরিকাঠামোর অভাবে রোগীরাই থাকতে চান না হাসপাতালে।
ঝাড়গ্রাম কুষ্ঠ নিবারণ প্রকল্পের সম্পাদক সুকুমার পৈড়া বলেন, “অর্থাভাবের কারণে সংস্কারমূলক কাজ ও কুষ্ঠ রোগীদের উন্নত মানের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।” ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝির অবশ্য দাবি, “সরকারি চিকিত্সা ব্যবস্থার মধ্যেই কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করে তোলা যায়। বেসরকারি সংস্থাগুলি সরকারি অনুদানে কেবল কুষ্ঠ নির্মূল প্রচার-অভিযানের কাজ করে।” ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “আমি কুষ্ঠ হাসপাতালটি পরিদর্শন করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy