Advertisement
০২ মে ২০২৪

মর্গে লাশের স্তূপ, দুর্গন্ধে টেকা দায়

ঘাটাল শহরের দু’নম্বর ওয়ার্ডের ময়রাপুকুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া জনবহুল এলাকায় রয়েছে এই মর্গ। মহকুমার তিনটি থানা এলাকায় দুর্ঘটনায় বা অস্বাভাবিক ভাবে কারও মৃত্যু হলে মৃতদেহ এই মর্গে এনেই রাখা হয়। মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেলে দেহ হস্তান্তর করে দেওয়া হয় মৃতের পরিজনেদের হাতে।

দুষ্কর: মর্গের সামনে নাকে চাপা দিয়ে যাতায়ত করতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

দুষ্কর: মর্গের সামনে নাকে চাপা দিয়ে যাতায়ত করতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

মর্গে জমছে বেওয়ারিশ লাশের স্তূপ। সংরক্ষণ দূরের কথা, মর্গে নেই সামান্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও। দুর্গন্ধে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের মর্গ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের টেকা দায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, দূষণ ছড়ানোর কথা জানানো হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুরসভার হুঁশ নেই।

ঘাটাল শহরের দু’নম্বর ওয়ার্ডের ময়রাপুকুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া জনবহুল এলাকায় রয়েছে এই মর্গ। মহকুমার তিনটি থানা এলাকায় দুর্ঘটনায় বা অস্বাভাবিক ভাবে কারও মৃত্যু হলে মৃতদেহ এই মর্গে এনেই রাখা হয়। মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেলে দেহ হস্তান্তর করে দেওয়া হয় মৃতের পরিজনেদের হাতে। সমস্যা হয় বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ দিনের পর দিন পরে থাকে মর্গে।

পুলিশ ও হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফি মাসে গড়ে দু’তিনটি করে দাবিহীন দেহ মর্গে জমা হয়। মর্গে দেহগুলি সংরক্ষণ করে রাখার বন্দোবস্তই নেই বলে অভিযোগ। মর্গের পঞ্চাশ ফুট দূরত্বের মধ্যেই রয়েছে একাধিক বাড়ি। সামনেই রয়েছে বাসস্ট্যান্ড, অসংখ্য দোকান। মর্গে থাকা মৃতদেহের দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস ওঠে এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে দেহ সংরক্ষণের করার দাবি জানানো হলেও ভ্রূক্ষেপ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

প্রশাসন সূত্রে খবর, মর্গ সাধারণত দু’ধরনের হয়। একটি পুলিশ মর্গ, অন্যটি হাসপাতাল মর্গ। ঘাটালে পুলিশ মর্গ নেই। হাসপাতাল মর্গেই মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়। আর দাবিহীন দেহ বা সন্দেহজনক কোনও দেহ থাকলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মৃতদেহগুলি রাখা হয় মর্গেই। সরকারি নিয়মানুযায়ী, যে কোনও বেওয়ারিশ বা দাবিহীন দেহ অন্তত পক্ষে সাতদিন রাখতেই হবে। কোনও কোনও দেহ সাতদিনের বেশিও রাখা থাকে। সেই সব দেহ ভাল ভাবে সংরক্ষণ করে রাখার নিয়ম। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে দেহগুলি রাখা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর দেহগুলি নির্জন এলকায় সরকারি জমিতেই পুঁতে দেওয়া হয়। কোনও কোনও দেহ পুড়িয়েও দেওয়া হয়।

যদিও ঘাটালের মর্গের পরিকাঠামো উন্নয়নে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। এমনকী মর্গ নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে চিকিৎসকেরা নাকে রুমাল বেঁধে এসে ময়না তদন্ত করেই বেরিয়ে যান। অভিযোগ, সমস্যার কথা জানলেও ঘাটাল পুরসভাও নীরব। হাসপাতাল না পুলিশ- মর্গে কে সংস্কার করবে তাই নিয়েই চলে টানাপোড়েন।

ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষের সাফাই, “এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনও দায় নেই। মর্গ তো হাসপাতালের দেখার কথা। পুরসভা কী করবে?” যদিও সমস্যার কথা স্বীকার করছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তিনি বলেন, “দ্রুত মর্গটি সংস্কার করা হবে। স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে।” ঘাটাল হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায়ও বলছেন, “হাসপাতাল চত্বরে একটি আধুনিক মর্গ তৈরি হচ্ছে। সেখানে ছ’টি দেহ সংরক্ষণ করা যাবে। দ্রুত তা চালু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE