Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩
গাড়ি থামিয়ে জুলুম, পুলিশের বিরুদ্ধে সরব বিজেপিও
extortion

শাসক দলের হয়েই তোলাবাজি!

মুখ্যমন্ত্রীর সতর্ক করার পরেও জনসমক্ষে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে লরি-ট্রাক থেকে পুলিশের টাকা নেওয়ার ছবি রাজ্যের প্রশাসনিক পরিকাঠামোকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানায় দেহাটি সেতুতে চেকিং।নিজস্ব চিত্র।

পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানায় দেহাটি সেতুতে চেকিং।নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
এগরা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১৪
Share: Save:

কয়েক মাস আগেই পূর্ব মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে গাড়ি থেকে তোলা আদায় নিয়ে পুলিশকে সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তা যে নেহাতই কথার কথা ছিল তার প্রমাণ মিলল। গাড়ি থেকে পুলিশের তোলা তোলার গোপন খবর যায় জেলা পুলিশ আধিকারিকদের কাছে। পুলিশ আধিকারিকের পাতা ফাঁদে টাকা সমেত হাতে নাতে ধরা পড়েছেন এগরা থানার তিন পুলিশকর্মী। তোলাবাজির অভিযোগে সাসপেন্ড হয়েছেন এক এএসআই এবং দুই কনস্টেবল।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, জাতীয় সড়ক থেকে রাজ্য সড়কে অবৈধ বালি গাড়ি থেকে উর্দিধারীদের তোলা আদায় নিত্যদিনের ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রীর সতর্ক করার পরেও জনসমক্ষে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে লরি-ট্রাক থেকে পুলিশের টাকা নেওয়ার ছবি রাজ্যের প্রশাসনিক পরিকাঠামোকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যদিও পুলিশের তোলাবাজির একাংশ শাসক দলের তহবিলে জমা হয় বলে বার বারই অভিযোগে সরব হয়েছে একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল। মুখ্যমন্ত্রীর সেই সতর্কতার পর কয়েক মাস পুলিশ সাবধানী থাকলেও ফের জেলার একাধিক থানা এলাকায় বালির ট্রাক, মালবোঝাই লরি থেকে পুলিশের তোলা আদায় শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। আর তারই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন থানা এলাকায় পুলিশের তোলা আদায়ের গোপন খবর পৌঁছে যায় জেলা পুলিশ আধিকারিকদের কাছে।

সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সীমান্ত এলাকার থানাগুলির উপর গোপনে নজর রাখতে শুরু করেন জেলা পুলিশের আধিকারিকরা। বিশেষ করে পটাশপুর, এগরা এবং রামনগর থানার উপর নজরদারি চলে। কারণ এই সব থানা এলাকায় পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ওড়িশা থেকে প্রচুর অবৈধ বালি ও মালের লরি এই জেলায় ঢোকে। প্রতি মাসে রাতে থানা এলাকায় নিরাপত্তার রুটিন পরিদর্শনের দায়িত্ব থাকে জেলা ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিকদের। গত বৃহস্পতিবার রাতে এগরা ও কাঁথি মহকুমার থানাগুলিতে রুটিন পরিদর্শনের দায়িত্বে ছিলেন কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) অরবিন্দ আনন্দ। কিন্তু সেদিনই বিকেলে পুলিশ আধিকারিকের অফিস থেকে থানাগুলিতে ফোন করে অফিসার এলাকা পরিদর্শনে আসবেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

সূত্রের খবর, আধিকারিকের না আসার খবরে নিজেদের মতো করে ডিউটি করছিলেন পুলিশকর্মীরা। রাত দুটো নাগাদ ‘সারপ্রাইজ ভিজিটে’ বের হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। রাতে কাঁথি, মারিশদা ও ভূপতিনগর থানা এলাকায় রাজ্য সড়কে চলে নজরদারি। সেখানে কিছু না পেয়ে পটাশপুর ঘুরে সোজা এগরা-ষড়রং নাকা চেকিং স্থলে হাজির হন তিনি। সেখানে বালির লরি থেকে তোলা তোলার সময় পুলিশ কর্মীদের হাতে নাতে ধরেন পুলিশ আধিকারিক। তোলার টাকা উদ্ধারের পাশাপাশি ধৃতেরা আধিকারিকের কাছে দোষ স্বীকার করে। পরে অভিযুক্ত এক এএসআইৃসহ তিন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়।

Advertisement

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, রাতে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ বা চেকিংয়ের চেয়ে বালির লরি থেকে তোলা আদায়েই বেশি ব্যস্ত তাকে। কারণ সেই টাকা নির্দিষ্ট অনুপাতে পুলিশের কর্তাব্যক্তি থেকে শাসক দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। এগরা-দিঘা সড়কে প্রায়ই বালির লরি নিয়ে যাতায়াত করেন এমন এক লরিচালকের কথায়, ‘‘গাড়ি পিছু প্রত্যেক থানাকে তিনশো টাকা করে দিতে হয়। টাকা না দিলে পুলিশ কেস দিয়ে হয়রানি করে। হয়রানি এড়াতে বাধ্য হয়েই আমরা মতো অনেকেই তোলা দিতে বাধ্য হই।’’

পুলিশের তোলাবাজি নিয়ে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যের পুলিশকে শাসক দলের হয়ে তোলাবাজি করতে হয়। সেই টাকার একটা অংশ শাসকদলের তহবিলে পাঠাতে হয়। ফলে বলির পাঁঠা হতে হচ্ছে পুলিশ কর্মীদের।’’ এগরা-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বরাজ খাড়া বিজেপির অভিযোগ পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপির লোকজনই তোলা বাজির সঙ্গে যুক্ত। তা ছাড়া এ সব পুলিশের নিজস্ব বিষয়। তৃণমূল এই ধরনের কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত নয়।’’

তিন পুলিশ কর্মীর সাসপেন্ড নিয়ে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদব বলেন, ‘‘লরি থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ কর্মীদের নিয়ম মেনে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.