Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
Patashpur

ভাঙা হাতেই আনাজ  বিক্রি করেন ‘গৃহলক্ষ্মী’

অমর্ষি ব্লক প্রশাসনিক দফতরের অদূরেই কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা পরিমালা গিরি। একটা সময় দুই ছেলে চন্দন এবং মাখনকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাঁর। স্বামী নারায়ণচন্দ্র গিরি মৃত্যু হয়েছিল অসুখে।

পরিমালা গিরি। নিজস্ব চিত্র

পরিমালা গিরি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পটাশপুর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৪১
Share: Save:

একটা সময় ছিল, যখন স্বামী নারায়ণ তাঁকে ভালবেসে ডাকতেন ‘গৃহলক্ষ্মী’ বলে। সে দিনের সেই গৃহলক্ষী আজ বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধা। স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় তিন দশক আগে। সময়ের ফেরে দুই ছেলের কাছে ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বৃদ্ধা মা। কয়েকমাস আগে ডান হাতের কব্জিটা ভেঙে গিয়েছিল। খাবার জোগাড়ের চিন্তা করতে গিয়ে কব্জির চিকিৎসা করার অবকাশ মেলেনি। অগত্যা, ভাঙা হাতেই বাজারে আনাজ বিক্রি করতে তিনি। মেলেনি সরকারি ভাতাও। এত কিছুর পরেও জীবন-লড়াইয়ের হাল ছাড়তে নারাজ পরিমালা গিরি।

অমর্ষি ব্লক প্রশাসনিক দফতরের অদূরেই কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা পরিমালা গিরি। একটা সময় দুই ছেলে চন্দন এবং মাখনকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাঁর। স্বামী নারায়ণচন্দ্র গিরি মৃত্যু হয়েছিল অসুখে। পরে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু একটা সময় সাংসারিক কলহে দুই ছেলে আলাদা হয়ে যান মায়ের থেকে। অন্য দিকে, ছোট মেয়েও স্বামীর সংসার ছেড়ে মায়ের কাছে চলে আসেন। মা ও মেয়ের অন্ন সংস্থানে বৃদ্ধা ছেলেদের কাছে হাত না পেতে বাজারে আনাজ বিক্রি শুরু করেন।

বয়সের ভারে কার্যত নুইয়ে পড়েছে শরীরটা। তবুও ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে রোজ অমর্ষি ও সিংদা-সহ একাধিক বাজারে ঘুরে আনাজ বিক্রি করেন তিনি। গত পাঁচ বছর ধরেই এ ভাবেই চলছে পরিমালার জীবন। কখনও কখনও ছেলেদের কাছে খাওয়ার ডাক পড়ে। সে দিনগুলিকে বাদ দিয়ে আনাজ বিক্রি করেই চলে পরিমালার সংসার। একাধিকবার গ্রাম পঞ্চায়েতে থেকে ব্লকে আবেদন জানিয়েও মেলেনি বিধবা ভাতা। মেলেনি সরকারি আবাস যোজনার ঘরও। কয়েকমাস আগে পড়ে গিয়ে বৃদ্ধার ডান হাতের কব্জিটা ভেঙে গিয়েছিল। দু’বেলা খাবার জোগাড়ের চিন্তার মাঝে কব্জির চিকিৎসা করার সময় পাননি বৃদ্ধা। প্রতিদিন সকালে ভাঙা হাতেই লাঠি নিয়ে একটা থলে এবং কিছু টাকা নিয়ে বাজারে আসেন পরিমালা। সেখানে পাইকারি বাজার থেকে আনাজ কিনে, সেগুলি ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন।

পরিমালা জানালেন, কোনও দিন ১৫০ টাকা, কোনও দিন আবার ২০০ টাকা রোজগার হয়। তা দিয়েই চলে তাঁর সংসার। তাঁর কথায়, ‘‘আবার বাবু ছেলেরা আগে দেখাশোনা করলেও, এখন সে ভাবে দায়িত্ব নেয় না। নিজেই ছোট মেয়েকে নিয়ে আনাজ বিক্রি করে কোনও মতে বেঁচে আছি। যে দিন আনাজ বিক্রি করতে পারি না, সে দিন বাড়িতে পান্তাভাত খেয়ে থাকতে হয়।’’ বৃদ্ধার প্রসঙ্গে পটাশপুর-১ বিডিও পারিজাত রায় বলছিলেন, ‘‘এই বৃদ্ধার বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE