E-Paper

অতিরিক্ত ফি, প্রশ্ন অডিট রিপোর্টেও

অতিরিক্ত ফি আদায়ে স্কুলের তহবিলে‌ মোটা অঙ্কের টাকা আসে। কেমন? শহর মেদিনীপুরের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বেসরকারি স্কুল তা সে ইংরেজি হোক অথবা বাংলা মাধ্যম— বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ ওঠেই। সেই তালিকায় এখন যোগ হচ্ছে বিভিন্ন সরকার পোষিত স্কুলও। মূল অভিযোগ বাড়তি টাকা নিয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সব জেনেও প্রশাসন নীরব থাকে কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি কোনওভাবেই সমর্থন করা হয় না।

অতিরিক্ত ফি আদায়ে স্কুলের তহবিলে‌ মোটা অঙ্কের টাকা আসে। কেমন? শহর মেদিনীপুরের একটি বালিকা বিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক। অডিট অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২- এই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত ফি হিসেবে স্কুলটি আদায় করেছে ৬০ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ, বছরে ৬ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। ওই ৬০ লক্ষের মধ্যে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে আদায় হয়েছে ২৯ লক্ষ টাকা। অডিট অনুযায়ী, স্কুলটির সবমিলিয়ে ১১টি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে একটি সমবায় ব্যাঙ্কে।

অনিয়ম হচ্ছে জেনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? জেলার এক শিক্ষা আধিকারিকের সাফাই, "অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপই করা হয়।" ওই স্কুলে এ বারও পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সময় ছাত্রীপিছু ৯০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

মেদিনীপুরের আরও একটি সরকার পোষিত স্কুল অতিরিক্ত ফি হিসেবে ৮১০ টাকা নিয়েছে। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের সাফাই, নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে ওই ফি নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তারক্ষীর বেতন প্রভৃতি। একাংশ অভিভাবকের পাল্টা বক্তব্য, সেখানে সিলেবাসে কোথাও বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষার কথা বলা নেই। কম্পিউটার ক্লাস হয়ও না।

একাংশ অভিভাবকের মতে, শিক্ষার অধিকার আইনকে এ ভাবে লঙ্ঘন করেছে যে সব স্কুল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কিন্তু নেবে কে! পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) স্বপন সামন্ত মন্তব্য করতে চাননি। তবে ওই জেলার এক শিক্ষা আধিকারিক বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইন মেনে সব স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ভর্তি নেওয়ার নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কোনও স্কুল অতিরিক্ত ফি নিয়েছে, এমন নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে পদক্ষেপ হবে।’’ শিক্ষা দফতরের গড়বেতা ১ ব্লকের এক পরিদর্শক বলছেন, "ভর্তির নির্দিষ্ট টাকা ২৪০। এর বাইরে বাড়তি টাকা কেউ নিচ্ছে বলে কোনও অভিযোগ নেই। নিলে পদক্ষেপ হবে। নিউ সেট আপ জুনিয়র হাইস্কুলগুলো তো ভর্তি ফি নিচ্ছেই না।" ঝাড়গ্রামের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বর্ধিত হারে ফি নেওয়ার অভিযোগ কেউ করেননি।’’

অনেক অভিভাবক প্রশ্ন করছেন, নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে অভিযোগ করার পরে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার নিশ্চিয়তা কোথায়? গোয়ালতোড়ের এক অভিভাবক বলেন, "ছেলেমেয়ের শিক্ষার স্বার্থে সামান্য বেশি টাকা দিয়ে ভর্তির বিষয়টি অনেকে মেনেই নিচ্ছেন। বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না।" তার মধ্যেও মাঝে মধ্যে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে যায়। গত ডিসেম্বরে ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের একটি সরকার পোষিত স্বশাসিত স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফর্মপূরণের সময় অতিরিক্ত ফি-র প্রতিবাদে পরীক্ষার্থীরা স্কুল গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ হয়েছিল।

অতিরিক্ত ফি নেওয়ার যুক্তি হিসেবে স্কুলের আনুষঙ্গিক বেশ কিছু খরচ চালানোর কথাই বলেছেন অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ। লালগড়ের নেতাই হাইস্কুলে যেমন স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা ৬। গ্রামের ৫ জন অতিথি শিক্ষক হিসেবে পড়াচ্ছেন। স্কুলের টিচার ইনচার্জ দেবাশিস গিরি বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সম্মতি নিয়ে অতিথি শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস হচ্ছে। অভিভাবক ও গ্রাম কমিটির দানে তাঁদের সাম্মানিক দেওয়া হয়।’’ একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আবার মন্তব্য, ‘‘পড়ুয়ারা মিড ডে মিল থেকে স্কুলের পোশাক- জুতো, সবই পায় বিনামূল্যে। তাই স্কুলের পাশে দাঁড়াতে অভিভাবকদেরও এগিয়ে
আসা দরকার!’

শিক্ষক সংগঠনগুলি অবশ্য এই কাজকে সমর্থন করছে না। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতা শুভেন্দু গুঁইন বলেন, ‘‘যে সব স্কুল অতিরিক্ত ফি নিয়েছে, প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’’

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতা অক্ষয় খান বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের উপর এই বোঝা চাপানোকে সমর্থন করি না। স্কুল যাতে ঠিকঠাকভাবে চলে, সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব।’’ (শেষ)

(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy