সতর্কবার্তা: ব্যানার লাগিয়ে লিফলেট বিলি করছেন সংস্থার কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
আধুনিক মোবাইল ফোনের দাম কমছে প্রতিদিন। বিনামূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবার আশ্বাস মিলছে সরকারি স্তরে। ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে পৃথিবীটা। দেড় বছরের ছোট্ট মেয়েকে খাওয়ানো নিয়ে নাজেহাল তরুণী মোবাইলে চালিয়ে দেন কার্টুন কিংবা মজার গান। দেখতে দেখতে ছোট্ট খুকু কখন আটকে পড়ে মুঠো-ফোনের জালে খবর পান না তরুণী মা। গান থেকে ফোন, মেসেজ, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, গেম— অনেক মানুষের ভিড়ে মিশে যাওয়ার হাতছানি।
সারা পৃথিবী জুড়েই এখন এই ‘গেম’ আতঙ্ক চলছে। ব্লু-হোয়েল নামে এক অন-লাইন খেলায় চ্যালেঞ্জ দেওয়া হচ্ছে আত্মহত্যার। বিশেষত বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েরা এই খেলায় জড়িয়ে পড়ছে কোনও ভাবে। বেশ কিছু কিশোরের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে গিয়েছে ইতিমধ্যে। তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর ও গড়বেতায় দুই কিশোরের ‘নীল তিমি’ খেলার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তারপরই সচেতনতা প্রচার করতে শুরু করেছেন চাইল্ড লাইন।
সংগঠন সূত্রের খবর, যারা ইতিমধ্য এই খেলা খেলেছে, তাদের বাকিরাও উৎসাহিত হতে পারে। আবার কয়েকটি প্রাণের ঝুঁকি। সে প্রবণতা ঠেকাতেই এই উদ্যোগ। বৃহস্পতিবার থেকেই ঘাটাল-সহ গোটা জেলায় লিফলেট বিলি করা হয়েছে। চলেছে মাইকে প্রচারও। কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করার পাশাপাশি অভিভাবকদেরও চোখ-কান খোলা রাখতে আর্জি জানাচ্ছে চাইল্ড লাইন।
জনবহুল এলাকায়, স্কুল-কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে প্রচার করছেন তারা কর্মীরা। আশেপাশে কেউ অন-লাইন গেম খেলছে খবর পেলেই টোল ফ্রি নম্বরে (১০৯৮) জানানোর কথাও বলা হচ্ছে। ছোটদের অকারণে টাকার জোগান দিতেও বাবা-মাকে নিষেধ করছে চাইল্ড লাইন। এমনকী সন্তানের আচরণে কোনও অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখলে, হাতে কাটা দাগ দেখলে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
তবে শুধু ব্লু-হোয়েলের কথাই নয়। চাইল্ড লাইন প্রচার করছে সার্বিক ভাবে ভার্চুয়াল গেম-এর বিরুদ্ধে। এ ধরনের অন-লাইন চ্যালেঞ্জ গেমের প্রতি আসক্তি কমাতে পোস্টারও লাগানো হচ্ছে।
চাইল্ড লাইনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন অভিভাবকেরাও। ঘাটালের এক ব্যবসায়ীর কথায়, “আমার ছেলেও মোবাইলে গেম খেলে। কিন্তু তার যে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, ভাবিনি। এই প্রচারে আমার মতো অনেকেই সচেতন হবেন।”
চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত বলেন, “আজকাল ব্যাগে বা পকেটে ভরে মোবাইল নিয়ে স্কুলে ঢোকে পড়ুয়ারা। ক্লাসের ফাঁকে বা টিফিনে অন্য খেলা ফেলে মোবাইলেই গেম খেলে প়ড়ুয়ারা।” তার প্রভাব পড়ছে ছোটদের জীবনে। এই প্রবণতার ভয়ঙ্কর দিকটিই তুলে ধরছে চাইল্ড লাইন।
মোবাইল নিয়ে কড়া হচ্ছেন একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষও। দাসপুরের বরুণা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ঘাটালের সমস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছি। দ্রুত প্রধান শিক্ষক এবং পরিচালন কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠকও করব।”
ঘাটালের বসন্তকুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বীণা মান্না বলেন, “আমাদের স্কুলে আগেই নোটিস দেওয়া হয়েছিল মোবাইল না আনার জন্য। আগে বহু মোবাইল বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে। এ বার ফের সতর্ক করা হবে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।’’ প্রার্থনার সময় স্কুলগুলিতে এ নিয়ে প্রচার করতেও তাঁরা উদ্যোগী করা হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy