Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Weed Smuggling

গাঁজা উদ্ধার কি ভোট এলেই! প্রশ্নে পুলিশ 

জাতীয় সড়কে মূলত মোটরবাইক, লরি, ছোট গাড়িতে গাঁজা পাচার করা হয়। তবে শুধু বালেশ্বর-খড়্গপুর জাতীয় সড়কই নয়, গাঁজা পাচারকারীরা কখনও কখনও রেলপথকেও ব্যবহার করে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বিশ্বসিন্ধু দে
বেলদা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫৩
Share: Save:

ভোট এলে কড়া হয় নাকা তল্লাশি। তখনই ঝুলি থেকে বের হয় গাঁজা। ভোট মিটলে আবার যে কে সেই! গাঁজা চলে যায় নিদিষ্ট গন্তব্যে, নিশ্চিন্তে।

খড়্গপুর-বালেশ্বর ৬০ নম্বর (অধুনা ১৬ নম্বর) জাতীয় সড়ক হল গাঁজা পাচারের সহজ পথ। সামনেই লোকসভা ভোট। এই সময়ে পুলিশের নাকা তল্লাশি চলছে ওই পথে। তাতেই ধরা পড়ছে একের পর এক গাঁজা বোঝাই গাড়ি। তথ্য বলছে, নির্বাচন বিধি চালু হওয়ার পরে ওই জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় ৫৪১ কেজি গাঁজা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। বিজেপির অবশ্য দাবি, এসবই নির্বাচন কমিশনকে দেখানোর জন্য। অন্য সময়ে পুলিশের চোখের সামনেই পাচার হয়ে যায় গাঁজা। এর পিছনে তৃণমূলের ইন্ধন আছে বলেও দাবি তাদের। অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। পুলিশ বলছে, গাঁজা পাচার আটকাতে তারা সারা বছরই সক্রিয় থাকে। গাঁজা-সহ পাচারকারীরা ধরাও পড়ে।

সূত্রের খবর, খড়্গপুর-বালেশ্বর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে বেশ কয়েকটি থানা পেরিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা হয়ে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে যায় বস্তা বস্তা গাঁজা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক হয়ে গাঁজা বোঝাই গাড়ি সোজা বেরিয়ে যায় কলকাতায়। মাদক পাচারের এই রুটে সক্রিয় আন্তঃরাজ্য চক্র। বাংলা ও ওড়িশা দুই রাজ্যের যুবকেরাই মূলত এর সঙ্গে যুক্ত।

জাতীয় সড়কে মূলত মোটরবাইক, লরি, ছোট গাড়িতে গাঁজা পাচার করা হয়। তবে শুধু বালেশ্বর-খড়্গপুর জাতীয় সড়কই নয়, গাঁজা পাচারকারীরা কখনও কখনও রেলপথকেও ব্যবহার করে। ব্যবহার করা হয় গ্রাম্যপথও। ২ এপ্রিল দাঁতন রেল স্টেশন থেকে ১৯ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে রেল পুলিশ। কয়েকদিন আগে খড়্গপুর স্টেশনেও গাঁজা উদ্ধার হয়। ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় বেলদা থানার পুলিশ ও বিশেষ টাস্ক ফোর্সের অভিযানে শ্যামপুরা বাইপাস এলাকায় একটি লরি ও একটি গাড়ি থেকে মেলে প্রায় ৫০০ কেজি গাঁজা। ওই বিশাল পরিমাণ গাঁজা পাচার হচ্ছিল পেঁয়াজের আড়ালে। গ্রেফতার হয় পাঁচজন। যাদের প্রত্যেকের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগণায়। ১৫ এপ্রিল নারায়ণগড় থানা এলাকার বাঁধগোড়াতে দু’টি স্কুটি আটতে মেলে ৪০ কেজি গাঁজা। ধরা পড়ে দু’জন। তাদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলায়। শেষ দু’টি ঘটনাস্থলই বালেশ্বর-খড়্গপুর জাতীয় সড়ক।

ওড়িশা থেকে সড়কপথে বাংলায় ঢুকতে গেলে প্রথমে দাঁতন থানা পেরতে হয়। ঘটনাচক্রে সাধারণ সময়ে তো দূরের কথা, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরেও দাঁতন থানা এলাকায় গাঁজা উদ্ধারের খবর এখনও নেই। কেন? কোন ফাঁক গলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে পাচারকারীরা, সেই প্রশ্নও উঠছে। সূত্রের খবর, নাকা তল্লাশি এড়াতে পাচারকারীরা ওড়িশা থেকে গ্রাম্য পথ ধরে চলে যাচ্ছে বেলদা ও মোহনপুর। সেখান থেকে ছড়িয়ে যায় অন্যত্র। দাঁতন থেকে গাঁজা উদ্ধার না হওয়ার সেটাও কারণ হতে পারে, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের অভিযোগ, "নির্বাচন কমিশনের চাপে পড়ে পুলিশকে এখন দেখাতে হচ্ছে মাদক উদ্ধারে তারা কতটা সক্রিয়। কিন্তু সারা বছর পুলিশের রোজগারের একটা বড় জায়গা এই ব্যবসা। কারা ব্যবসা করে, কোন পথে পাচার হয় সবাই জানে। তাই জন্যই সারা বছর গাঁজা উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা দেখা যায় না।" তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা মানছেন, ‘‘এটা ঠিক যে গাঁজা বা মাদক পাচারে বড় চক্র কাজ করত। তবে গত প্রায় আড়াই বছর এই পাচার অনেক কমেছে। পুলিশও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। ভোটের মুখে মিথ্যা অভিযোগ তুলে হাওয়া ধরতে চাইছে বিজেপি।’’

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে গাঁজা পাচারের নির্দিষ্ট খবর আমাদের কাছে থাকে না। সেই সময়ে ধরা পড়ে না। তবে নাকা সারা বছর চলে। এখন নির্বাচন বিধি থাকায় নাকা আরও সক্রিয়। তাই তল্লাশি বেশি চলছে। গাঁজা ধরাও পড়ছে। ধরা পড়লেই আমরা আইনি পদক্ষেপ করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Belda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE