শীতেও ম্যালেরিয়ার প্রকোপে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়িতে এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত গোটা জেলায় যেখানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮২৪, সেখানে শুধু বেলপাহাড়িতেই এই সংখ্যাটা ২২৭ জন! এই ২২৭ জনের মধ্যে আবার ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন ১৪১ জন। জেলায় এখনও পর্যন্ত ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৪৩০ জন।
দিন কয়েক আগেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বছর বারোর লক্ষ্মীরাম মাণ্ডির। তার বাড়ি বেলপাহাড়ির করকরায়। কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বেলপাহাড়িতে যান স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। সব দিক খতিয়ে দেখা হয়। বেলপাহাড়িতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপের কথা মানছেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। তিনি বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকায় এ বার ম্যালেরিয়ার প্রকোপ একটু বেশি। মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার সব রকম চেষ্টা চলছে।”
জেলার গড়বেতা-১, গড়বেতা-২, নারায়ণগড়, জামবনি, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকেও ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যায় জেলার অন্য ব্লককে পিছনে ফেলেছে বিনপুর-২ ব্লক (বেলপাহাড়ি)। কেন বেলপাহাড়িতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি? জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, “বেলপাহাড়ির বেশ কিছু এলাকায় পাহাড়ি ঝর্না রয়েছে। জলাশয়ও রয়েছে। এ সব মশার আদর্শ জায়গা।” তিনি বলেন, “বেলপাহাড়ির ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোয় গিয়ে দেখা গিয়েছে, অনেকে মশারি ব্যবহার করেন না। এলাকার পরিবেশও খুব পরিষ্কার নয়। যেখানে-সেখানে জল জমে রয়েছে। জমে থাকা জলই মশার আঁতুর ঘর। ফলে, খুব সহজেই মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারছে।”
সাধারণত, জঙ্গলমহলের জেলায় যেখানে ম্যালেরিয়ায় বছরে গড়ে ২-৩ জনের মৃত্যু হয়, সেখানে এ বছর এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের! ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর এই পরিসংখ্যানে উদ্বিগ্ন জেলার একাংশ স্বাস্থ্যকর্তাও। কেন এই পরিস্থিতি? জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার স্বীকারোক্তি, “জ্বর হলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া উচিত। সচেতনতার অভাবে অনেকে তা করেন না।’’ জেলার আর এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “পশ্চিম মেদিনীপুরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের মৃত্যুর সংখ্যা ২০১১ সালে একজন, ২০১২ সালে দু’জন, ২০১৩ সালে একজন ছিল। সেখানে ২০১৪ সাল থেকে মৃতের সংখ্যাটা বাড়তে শুরু করেছে। এটাই উদ্বেগের!”