মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন রাজ্যের ব্লকে ব্লকে আইটিআই কলেজ গড়ে তুলতে চান তিনি। এতে কম খরচে কর্মমুখী পড়াশোনার সুযোগ পাবেন উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণরা। প্রথম পর্যায়ে ক্ষমতায় আসার পরেও তিনি জোর দিয়েছিলেন কারিগরী শিক্ষায়।
কিন্তু এ রাজ্যেই ছবিটা সম্পূর্ণ বিপরীত।
উদ্বোধনের পাঁচ বছর পরেও চালু করা যায়নি বীরসিংহের আইটিআই কলেজটি। অথচ, ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষেই পঠনপাঠন চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল এখানে। মাঝখানে ক্ষমতার পালাবদলের পর কারিগরি শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় ‘মডিউলার এমপ্লয়েবিলিটি স্কিল’। কিন্তু তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কবে ফের চালু হবে, জানেনই না কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বাম আমলেই প্রস্তাবিত এই কলেজ তৈরিতে উদ্যোগী ছিলেন বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির প্রাক্তন কাযর্করী সভাপতি বিমান বসু। বিদ্যাসাগরের জন্মভিটে বীরসিংহ গ্রামে একটি সরকারি আইটিআই কলেজের তৈরির অনুমোদন দেয় কারিগরি দফতরও। ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর কলেজের শিলান্যাস হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শিলান্যাসের দেড় বছরের মধ্যে কলেজ ভবন, হস্টেল-সহ যাবতীয় কাজও শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চালু করা হয়নি পঠনপাঠন। অভিযোগ, নতুন ভবনটি প্রায় বছর খানেক পড়েছিল অবহেলায়।
২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ কলেজটির উদ্বোধন করেন। কিন্তু প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি। তার কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে ক্ষমতার বদল ঘটে। তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর দোলই ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় ‘মডিউলার এমপ্লয়েবিলিটি স্কিল’-এর উদ্বোধন করেন। একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে দুই থেকে ছ’মাসের ওই কোর্সটির ক্লাস চলছিল বীরসিংহ আইটিআই কলজেই। কিন্তু অক্টোবর ২০১৫ থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই পাঠক্রমটিও।
কারিগরি শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, জেলার বেকার যুবকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যেই এই কলেজটি তৈরি হয়েছিল। প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকারি চাকরির আবেদনও করা যায়। আবার চাইলে নিজেরাও স্বাধীন ভাবে আয়ের পথ খুঁজে নিতে পারেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যাসাগরের গ্রামেই বীরসিংহ হাইস্কুলের দান করা তিন একর জমির উপর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কলেজ তৈরি হয়েছে। রয়েছে আধুনিক হস্টেলও। সে সব এখন নষ্ট হতে চলেছে। কলেজ ভবনের ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ে, খসে পড়ছে পলেস্তরা। পঠনপাঠন হয় না, তবু রয়েছেন স্থায়ী অধ্যক্ষ এবং দু’জন কর্মীও নিয়োগ হয়েছে। এমনকী অস্থায়ী কর্মীও রয়েছেন ছ’জন। বহু যন্ত্রপাতিও এসে গিয়েছে। সে সবও পড়ে রয়েছে, ব্যবহার হয় না। কলেজ চত্বরে গরু চরে।
ওই কলেজের অধ্যক্ষ প্রতাপ সাহার দাবি, “ওই কোর্সটি বন্ধ হয়ে গেলেও চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই আইটিআইয়ের পঠন পাঠন চালু হবে। পিপিপি মডেলে কলেজটি চালু করার উদ্যোগ চলছে। বিষ্ণুপুরের একটি বেসরকারি আইটিআই কলেজ বরাত পেয়েছে।” নতুন করে পিপিপি মডেলে কলেজ চালু করার বিষয়ে ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “পিপিপি মডেলেও চালু হলেও তো কোনও ক্ষতি নেই। কেননা, তাতে পঠন পাঠনের তো কোনও ঘাটতি থাকবে না। কলেজটি দ্রুত চালু করার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কমার্ধ্যক্ষ বিকাশ করও আশাবাদী, “সামনের অগস্ট থেকেই আইটিআইয়ের পঠনপাঠন শুরু হবে। আমরা সব রকম চেষ্টা করছি।”
স্থানীয় এক বাসিন্দার আক্ষেপ, “বাম সরকার কথা দিয়েও কলেজ চালু করেনি। ভেবেছিলাম তৃণমূল আমলে হয়তো তা হবে। কিন্তু পাঁচ বছর পরেও সরকারেরও কোনও হুঁশ নেই।” হতাশ ওই গ্রামেরই যুবকেরাও। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সামান্য কিছু ব্যবসা করেন এক যুবক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে আইটিআই কলেজ তৈরির কথা ঘোষণা করছেন। কিন্তু আমাদের গ্রামে সরকারি খরচে কলেজ তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। সে দিকে কারও নজর নেই। ওটা চালু হলেই তো অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।”
প্রাথমিক ভাবে ওই কলেজে ৩৩০ জন কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এক বছর বা দু’বছরের ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক মোটর ভেইকেল, মেকানিক রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং, সার্ভেয়ার, ফিজিওথেরাপি-সহ নানা কোর্সে নামমাত্র খরচে পড়া যাবে। কলেজ চালু না-হওয়ায় বীরসিংহের বাসিন্দারা হতাশ। তাঁরা আশা করেছিলেন কলেজ চালু হলে গ্রামেরও খানিকটা উন্নতি হবে। এলাকায় ছেলেমেয়েরা যেমন পড়তে পারবেন, তেমনই অন্য এলাকার পড়ুয়ারা গ্রামে এলে আথর্সামাজিক চেহারাটাও পাল্টাবে। কিন্তু কবে? সেটাই প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy