Advertisement
২১ মে ২০২৪

হাতিরা বন্ধু, বার্তা জঙ্গলমহলের নাটকে

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বনমহোৎসবের অনুষ্ঠানে এ বার হাজির হচ্ছে ‘ফুলমণি ও তার বন্ধুরা’। তারা জানাবে জঙ্গল-জনপদে মানুষের সঙ্গেই হাতিদের চিরাচরিত সহাবস্থানের কাহিনি।

নাটকের একটি অংশ। নিজস্ব চিত্র।

নাটকের একটি অংশ। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বনমহোৎসবের অনুষ্ঠানে এ বার হাজির হচ্ছে ‘ফুলমণি ও তার বন্ধুরা’। তারা জানাবে জঙ্গল-জনপদে মানুষের সঙ্গেই হাতিদের চিরাচরিত সহাবস্থানের কাহিনি। সংঘাতের পরিবর্তে দেওয়া হবে বনসৃজন ও সহনশীলতার বার্তা। বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে সচেতনতার লক্ষ্যে বছর খানেক আগে এই পুতুল নাটিকাটির প্রযোজনা করেছে ঝাড়গ্রামের ‘কুরকুট’ নাটকের দল।

জঙ্গলমহলে ক্রমাগত হাতির হামলায় একের পর এক এলাকাবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় রীতিমতো চিন্তিত বন দফতর। হাতি নিয়ে বেসামাল বন দফতরের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি জঙ্গলমহল ও উত্তবঙ্গ সফরে গিয়ে সরাসরি বন দফতরের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরই ‘দুষ্টু’ হাতিদের ধরার জন্য বন দফতরের প্রশাসনিকস্তরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে বাঁকুড়ায় একটি হাতিকে গুলি করে মারা হয়েছে। আর একটি হাতিকে ধরে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি হাতিকে ‘রোগ’ ঘোষণা করা হয়েছে। চায়না নামের ওই হাতিটিকে ধরা না গেলে গুলি করে মারার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দিয়েছে রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখা।

কিন্তু বাঁকুড়ার অভিযানের পর ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে হাতিকে মেরে কতটা সমস্যার সমাধান সম্ভব? বন কর্মীদের একাংশ বলছেন, নগরায়নের ফলে, হাতিদের এলাকায় হাত পড়েছে মানুষের। সেই কারণেই শুরু হয়েছে সংঘাত। আর তার জেরেই বুনো হাতির হানায় ফি-বছর ফসল ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহাণির পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। হাতিদের পরিবারের সদস্য সংখ্যাও বাড়ছে। অন্য দিকে, কমছে জঙ্গলের পরিসর। ফলে, বন্যপ্রাণ ও মানুষের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠছে। জেলার বনকর্তাদের বক্তব্য, হাতি সম্পর্কে সচেতন হলে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যায়। সেই কারণেই এবার জনসচেতনতার লক্ষ্যে পুতুল নাটককে হাতিয়ার করা হয়েছে।

এই পুতুল নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘ফুলমণি’ নামের একটি হাতি। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় জঙ্গল গাঁয়ের বালক মহুলের। কিন্তু মহুলের গ্রামের জঙ্গল-মাফিয়া আপ্পান ও তার দলবল নির্বিচারে জঙ্গলের গাছ কেটে পাচার করে দেয়। টান পড়ে ফুলমণিদের স্বাভাবিক বাসস্থান ও বিচরণভূমিতে। শুরু হয় মানুষ ও বন্যপ্রাণের সংঘাত। মহুলের গ্রামে হামলা চালায় ফুলমণির দলের হাতিরা। গ্রামবাসীর পাল্টা তাড়া খেয়ে এলাকা ছাড়ে হাতির পাল। মহুল-ফুলমণির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বন্ধুবিচ্ছেদের যন্ত্রণায় অসুস্থ হয়ে পড়ে মহুল। অবশেষে, ফুলমণিদের জন্য সবুজায়নে হাত লাগান গ্রামবাসী। আপ্পানের শাস্তি হয়, জীবনে যত গাছ কেটেছে, তার দ্বিগুণ গাছ লাগাতে হবে তাকে। ঘন সবুজ জঙ্গলে একদিন ফিরে আসে ফুলমণি ও তার পরিবার। দুই বন্ধুর মিলন হয়।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই পুতুল নাটকটিকেই বনমহোৎসবের অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত করা হচ্ছে। ১৪ জুলাই ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের বেলতলায়, ১৮ জুলাই রূপনারায়ণ বন বিভাগের রামগড়ে এবং ২০ জুলাই মেদিনীপুর বন বিভাগের আয়োজনে মেদিনীপুরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে জেলা স্তরের অনুষ্ঠানে পুতুল নাটকটি দেখানো হবে। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “পুতুল নাটকটি দিয়ে জন-সচেতনতার কাজটি আরও সহজ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Campaign elephants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE