প্রেরণা রাণা এবং তনুশ্রী সাহু। নিজস্ব চিত্র
এগারো বছর বয়সে ক্যানসারের জন্য বাম পায়ের গোড়ালির ওপর থেকে কিছুটা অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছে। তখন সে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। লড়াই শুরু তখন থেকেই। সঙ্গী ছিল অভাবও। ইংরেজি ছাড়া অন্য বিষয়ে কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। বাবাই পড়াশোনা দেখতেন। মাধ্যমিকে সে পেয়েছে ৬৪৮।
বেলদা থানার রানিসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের খটনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রেরণা রাণার সামনে আরও বড় লড়াই। প্রেরণা বলছে, ‘‘প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট হতো। হাঁটতে পারতাম না। বাবা সাইকেলে করে স্কুলে ও অন্য জায়গায় নিয়ে যেত। বন্ধুরা খেলত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম।’’ এখনও ভাল মতো হাঁটতে পারে না প্রেরণা। ছোটা কিংবা খেলাধুলো তো দূর-অস্ত। ধীরে ধীরে সাইকেল ধরেছে। আগে স্কুল থেকে দূরে কুঙরদা গ্রামে থাকত তারা। মেয়ের অসুবিধার জন্যে স্কুল নহপাড় বিদ্যাসাগর বিদ্যাভবনে চলে আসেন প্রেরণার বাবা গুরুপ্রসাদ রাণা।
চিকিৎসক হয়ে বাবার পাশে দাঁড়ানোই প্রেরণার ইচ্ছা। বিজ্ঞান বিভাগে বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমি স্কুলে পড়বে সে। প্রেরণার কথায়, ‘‘প্রতিবন্ধকতা কিছুই নয়। মনের জোরই আসল।’’ সেই ইচ্ছে দেখে গুরুপ্রসাদবাবু আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘‘মেয়েকে প্রায় ছ’বার কেমো দিতে হয়েছে। সামান্য রোজগার। অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। তবু মেয়ের চেষ্টার সঙ্গে যতদূর এগোতে পারা যায় আর কী।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘মেয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠলে তবেই আমাদের সাফল্য।’’
স্বপ্ন সফল করার পথে দীর্ঘ লড়াই তনুশ্রী সাহুরও। জন্মের সময়ই তার মা মারা গিয়েছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর অসুস্থ থাকার পর গত বছর টেস্ট পরীক্ষার আগে বাবা নিমাই সাহুও মারা গিয়েছেন। অযোধ্যাপুরে মামাবাড়িতে দাদু-দিদিমার কাছেই বড় হয়ে ওঠা। মনের জোরকে হাতিয়ার করেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের গোকুলপুর মদনমোহন শিক্ষা নিকেতনের ছাত্রী তনুশ্রী। মাধ্যমিকে সে পেয়েছে ৬৩৭। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। তাই সে মেদিনীপুর শহরে বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ বালিকা ভবনে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই তার স্বপ্ন। তনুশ্রীর দাদু বনমালি দুয়ারি বলছিলেন, ‘‘ও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে। তাই ওকে ভাল স্কুলে ভর্তি করলাম। বাড়িতে চাষবাসের উপর নির্ভর করেই সংসার চলে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যত কষ্টই হোক ওর স্বপ্ন সার্থক করার চেষ্টা করব। কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে ওর স্বপ্ন সফল করার পথে কোনও বাধা থাকবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy