Advertisement
০২ মে ২০২৪
বহিরাগতদের গুরুত্ব, ক্ষোভের আশঙ্কা তৃণমূলে

জল্পনা জিইয়েই প্রার্থী ঘোষণা

শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ছবিটা এমনই। জেলার গতবারের জয়ী বিধায়কের মধ্যে এ বার টিকিট পাননি শুধু ডেবরার বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি।

প্রার্থী ঘোষণার আগেই সারা দেওয়াল লিখন। মেদিনীপুরে।—নিজস্ব চিত্র।

প্রার্থী ঘোষণার আগেই সারা দেওয়াল লিখন। মেদিনীপুরে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৫
Share: Save:

জল্পনার অবসান হল। আবার নতুন করে জল্পনা তৈরিও হল!

শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ছবিটা এমনই। জেলার গতবারের জয়ী বিধায়কের মধ্যে এ বার টিকিট পাননি শুধু ডেবরার বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি। বাকি সকলেই এ বারও প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ভূমিপুত্রদের সরিয়ে বহিরাগতদের প্রার্থী করায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের দুই বিধায়ক হলদিয়ার শিউলি সাহা ও তমলুকের বিধায়ক তথা জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে তৃণমূল এ বার টিকিট দিয়েছে পশ্চিমে। শিউলিকে কেশপুর আর সৌমেনবাবুকে প্রার্থী করা হয়েছে পিংলায়। মেদিনীপুর থেকে দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নারায়ণগড়ে। অথচ নারায়ণগড়ে গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন স্থানীয় নেতা তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট। খড়্গপুর সদরে স্থানীয় নেতা জহরলাল পাল বা দেবাশিস চৌধুরী নন, প্রার্থী করা হয়েছে রমাপ্রসাদ তেওয়ারিকে। নির্মল ঘোষকে খড়্গপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সবংয়ে। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তীকে মেদিনীপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গড়বেতায়! জেলা সভাপতি দীনেন রায়কে প্রার্থী করা হয়েছে খড়্গপুরে।

এ ভাবে প্রার্থীদের জায়গা বদলের ফলে দলে ক্ষোভ বাড়বে বলেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। আশঙ্কা থাকছে অন্তর্ঘাতেরও। কিন্তু কেন এমনটা করা হল? এ ব্যাপারে দলীয় নেতাদের নানা মত। তৃণমূলের একাংশের যুক্তি, যে সব বিধানসভা কেন্দ্রে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল, সেখানে অন্তর্কলহ দূর করতেই ‘বহিরাগত’দের মাথার উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দলনেত্রী বার্তা দিতে চেয়েছেন, গোষ্ঠীকোন্দল করলে এমনই শাস্তির খাঁড়া নামবে। তবে দলেরই একাংশের যুক্তি, এতে হিতে বিপরীত হবে। বিধানসভা এলাকার সব গোষ্ঠী এক হয়ে ‘বহিরাগত’কে হারাতে ময়দানে নেমে পড়বে। যা ঠেকানো কঠিন হবে। কর্মীরাও হতোদ্যম হবেন। আর এ সবের প্রভাব পড়বে ভোটের ফলে।

তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য এ সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকেরা শৃঙ্খলাপরায়ণ। দলনেত্রী যাঁকে প্রার্থী করবেন তাঁর হয়েই সকলে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।” আর প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার মত, “কোন দল কাকে প্রার্থী করবেন সেটা তাঁদের দলীয় ব্যাপার।” কিন্তু এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বিধায়কদের স্থানান্তর? মানসবাবু বলেন, “এটা ওঁদের (তৃণমূলের) দুই জেলার লড়াই। তবে সৌমেনবাবুর আদি বাড়ি তো পিংলাতে।”

তৃণমূলে কাদের প্রার্থী করা হবে, কাদের হবে না, তা নিয়ে জল্পনা চলছিলই। জেলার অনেক নেতা-নেত্রীই টিকিটের আশায় হন্যে হয়ে ঘুরেছিলেন কলকাতার নেতাদের দরজায় দরজায়। এই দলে যেমন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদ সদস্য, পুরসভার প্রধান ছিলেন, তেমনি ছিলেন জেলা ও ব্লকের নেতারা। এক নেতার কথায়, “সেই সময় দলীয় নেতারা জানিয়েছিলেন কর্মাধ্যক্ষ, সভাধিপতি, পুরপ্রধানদের টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে দলনেত্রীর আপত্তি রয়েছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ ও পুরসভার কাজে সমস্যা দেখা দেবে। কিন্তু জেলাতেই কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষকে তো প্রার্থী করা হল। তাহলে কোন অঙ্কে সূর্য অট্ট, শৈবাল গিরির মতো কর্মাধ্যক্ষরা বাদ গেলেন, তা বুঝতে পারলাম না!” আবার কিছু তৃণমূল নেতার যুক্তি, দলীয় নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগের কারণে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরির প্রার্থীপদ মেলেনি। সেই অভিযোগ থাকলে তো বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোরও টিকিট পাওয়ার কথা নয়!

যুক্তি-তর্কে অনেক হিসেবই মিলছে না। ফলে জিইয়ে থাকছে জল্পনা।

তথ্য: কিংশুক গুপ্ত, সুমন ঘোষ, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

candidate list west midnapore grassroot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE