একদিকে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র দাপট, আর একদিকে ক্রম উদীয়মান বিজেপি। এরই মধ্যে আবার আশার আলো দেখতে শুরু করেছে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক সদস্য পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সাড়ে ছ’বছর পর তাই পূর্ব মেদিনীপুরে শুরু হচ্ছে তাদের জেলা সম্মেলন। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পর এই প্রথম।
৭ ও ৮ মে তমলুকের নিমতৌড়িতে সিটু-র জেলা সম্মেলন। উদ্বোধন করবেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দীপক দাশগুপ্ত। প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন সিটু-র রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী ও সিপিএম নেতা রবীন দেব।
শেষবার জেলা সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে, নন্দকুমারে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর অন্তর জেলা সম্মেলন হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৪ সালে সম্মেলন হয়নি। কারণটা খুব সহজ। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের জমিরক্ষা আন্দোলন ঘিরে জেলায় তৃণমূলের জমি ক্রমশ শক্ত হয়েছে। ফলে শিল্পাঞ্চলেও সিটু-র দাপট কমেছে প্রতি বছর নিয়ম করে। তারপর ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের জেরে হলদিয়ার কারখানাগুলিতে প্রায় রাতারাতি উত্থান ঘটে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের। সিটু-র গড় চলে যায় আইএনটিটিইউসি-র হাতে। দ্রুত কমতে বাম শ্রমিক সংগঠনের সদস্য সংখ্যাও। জেলায় সিটু সদস্য সংখ্যার ৩০ শতাংশই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের।
সিটু-র হিসেব অনুযায়ী, ২০১১ বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত জেলায় তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার। বছর না ঘুরতেই সেই সংখ্যা এক ধাক্কায় কমে দাঁড়ায় ৭৯ হাজার। তারপর থেকে ক্রমাগত কমেছে সদস্য। ২০১২ সালে সদস্য ছিলেন ৭২ হাজার, ২০১৩ সালে তা দাঁড়ায় ৪৬ হাজারে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সেই সংখ্যাটা আরও কমে যায়। কারণ সে বছরই মার্চে লোকসভা ভোটের মুখে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হন লক্ষ্মণ শেঠ, সিটু-র দীর্ঘদিনের জেলা সম্পাদক। বহিষ্কৃত লক্ষ্মণ শেঠের সঙ্গে দল ছাড়েন তাঁর অনুগামী নেতা-কর্মীদের একাংশ।
তবে সে বছরের শেষ থেকেই সিটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বলে নেতৃত্বের দাবি। ২০১৪ সালে জেলায় সিটু’র সদস্য সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫১ হাজারে পৌঁছয়। ২০১৫ সালে তা হয় ৬৬,৬৭৮। আর তারই প্রভাব পড়েছে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে। সে বার হলদিয়া বিধানসভা আসনে তৃণমূলকে হারিয়ে সিপিএম প্রার্থী তাপসী মণ্ডল জয়লাভ করেন। চলতি বছরে শিল্পাঞ্চল-সহ গোটা জেলায় সিটু-র সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার ছাড়াবে বলে নিশ্চিত নেতৃত্ব।
সিটু জেলা সম্পাদক সুব্রত পণ্ডা আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল জোর করে, প্রলোভন দেখিয়ে শ্রমিকদের তাদের দলে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। তবু অনেকেই ফিরছেন।’’ তাঁর দাবি, বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকে প্রকাশ্য কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু সেই পরিস্থিতিও ক্রমশ বদলাচ্ছে। ভয় ভেঙে অনেকেই সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন এখন।
এই অবস্থায় জেলা সিপিএম নেতৃত্ব পাখির চোখ করেছেন হলদিয়া শিল্পাঞ্চলকে। সেখানে ফের সিটু-র শক্তি বৃদ্ধি করাই তাঁদের লক্ষ্য। তবে পথের কাঁটা দু’টি— একদিকে তৃণমূলের দাপট। সেই সঙ্গে রয়েছেন সিটু-র একদা সেনাপতি লক্ষ্মণ শেঠ। তাঁর হাত ধরেই শিল্পাঞ্চলে মাথা তুলছে বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy