একাদশ শ্রেণীর প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা। প্রতীকী চিত্র।
এ-ও যেন এক দুয়োরানি আর সুয়োরানির গল্প।
দু’টি পরীক্ষা। দু’টিই শুরু শেষ একই দিনে। দু’টিরই প্রশ্ন ঠিক করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। দায় তাই দুই পরীক্ষার ক্ষেত্রেই তাদের। অথচ তেমনটা হয় না। উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সংসদ যে দায়িত্ব নেয় তার কি ছিটেফোঁটাও পায় একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা? প্রশ্ন তুলছে প্রশ্নফাঁস। এই প্রশ্নেই ফাঁস হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাউন্সিলের নির্ধারিত কোনও নিয়ম বা সময় বাঁধা নেই।
অভিযোগ, একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র (সেই প্রশ্নপত্রগুলি আদৌ সংসদের প্রশ্নপত্র কি না তা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) পরীক্ষা শুরুর প্রায় চারঘণ্টা আগেই ঘুরছে সমাজমাধ্যমে। গত ১৪ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। একদিন নয়। প্রায় প্রতিদিনই নাকি ঘটছে এমন কাণ্ড। বৃহস্পতিবার ছিল পদার্থবিদ্যা, শিক্ষা, পুষ্টি বিজ্ঞানের পরীক্ষা। নারায়ণগড়ের বাসিন্দা এক শিক্ষক বলেন, ‘‘ছাত্ররা নিজেরাই জানাচ্ছে পরীক্ষার দু’ঘন্টা আগে তাদের হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে পেয়ে যাচ্ছে প্রশ্ন। প্রতিদিন হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থা এই হাল দেখে অবাক হতে হয়।’’ কেশিয়াড়ির খাজরা এলাকার এক অভিভাবক মিতা গিরি বলেন, ‘‘প্রশ্নপত্র প্রতিটি পরীক্ষার আগে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ভাল ছেলেদের দাম কী থাকল! যারা পরিশ্রম করে পড়াশোনা করল। বাংলা, ইংরেজি, জীববিদ্যা, গণিতের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।’’
প্রথমে কাউন্সিলের তৈরি প্রশ্নপত্র থানাতে পৌঁছায়। সেখান থেকে প্রশ্ন যায় ব্লকের মেন ভেনুতে। সেখান থেকে সাব-ভেনুতে যায়। আবার একাদশের প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট স্কুল মেন ভেনু থেকে সংগ্রহ করে। আবার কখনও মেন ভেনুর পক্ষ থেকে স্কুলগুলিতে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের সঙ্গে চলে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু ১০টা থেকে। শেষ হয় ১টায়। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হয় বেলা ২টো থেকে। তাই দু’বার কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র আনতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকায় কোনও কোনও স্কুল একইসঙ্গে দ্বাদশ ও একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র নিয়ে চলে আসছে। আর এটা সম্ভব হচ্ছে একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাউন্সিলের নির্ধারিত কোনও নিয়ম বা সময় বাঁধা না থাকায়। যে সময়ে প্রশ্নপত্র সমাজমাধ্যমে আসছে সেটা মেন ভেনু থেকেই বেরোচ্ছে বলে অনেকের দাবি।কয়েকজন শিক্ষকের বক্তব্য, এক্ষেত্রে কোনও বিদ্যালয়ের প্রশ্ন আনার দায়িত্বে থাকা কোনও শিক্ষক হয়ত এই কাজ করছেন। প্যাকেট খুলে ছবি তুলে এইসব করছেন। যা একেবারেই ঠিক নয়।
কোথাও কি নিয়মে খামতি থেকে যাচ্ছে ? প্রশ্নপত্র ফাঁস তথা বাইরে আসার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পশ্চিম মেদিনীপুরের জয়েন্ট কনভেনার সৌমেন ঘোষ বলেন, ‘‘কাউন্সিলের কাছে এমন খবর নেই। থাকলে আমরা জানতে পারতাম। খামতি হচ্ছে এটা বলব কী করে! আমাদের কাছে তো এমন কোনও রিপোর্ট আসেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy