কোথাও অপরিচ্ছন্ন জলাধার আবার কোথাও নিকাশি নালার পাশেই পানীয় জলের কল। বীরসিংহ গ্রামীণ হাসপাতাল
উন্নতি হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থার!
ব্লক হাসপাতাল গ্রামীণে উন্নীত হয়েছে, মহকুমা হাসপাতাল জেলা হাসপাতালের গুরুত্ব পেয়েছে, গ্রামীণ হাসপাতাল সুপার স্পেশ্যালিটি হয়েছে। কিন্তু সামান্য পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই হাসপাতালগুলিতে। জেলার ১৯টি গ্রামীণ হাসপাতালেরই হাল কমবেশি এক রকম।
চলতি বছরেই ঘাটালে বীরসিংহ বিদ্যাসাগর ব্লক হাসপাতালটি গ্রামীণে উন্নীত হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ সাহায্যে তিন কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে ৩০ শয্যার নতুন ভবন। প্রতিদিন নিয়ম করে ১৫-২০ জন করে রোগী ভর্তি হন। বহিবির্ভাগেও আসেন গড়ে ৩০০-৩৫০ জন। অথচ, রোগীদের জন্য পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। হাসপাতাল কর্মীরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের জন্য একটি, বৈঠক ঘরে একটি এবং হাসপাতালের ভিতর রোগীদের জন্য একটি পানীয় জল পরিস্রুত করার যন্ত্র রয়েছে। সেখান থেকে কিছু রোগী জল নেন। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীই ভরসা করেন সিমেন্টের তৈরি পুরোন জালধারের উপর।
কেন?
রোগীদের অভিযোগ, সব সময় ওই পরিস্রুত করা যন্ত্রে জল পড়ে না। বেশির ভাগ সময়ই জল পড়ে সরু হয়ে। অনেকে আবার জানেনই না কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় ওই যন্ত্র। অথচ সিমেন্টের জলাধারটিও নিয়ম করে পরিষ্কার করেন না কর্তৃপক্ষ। চারপাশও গাছ-গাছালিতে ভর্তি। হেলদোল নেই কারও।
একই ছবি ক্ষীরপাই বা সোনাখালি, কেশপুর, দাসপুর, গড়বেতা— প্রায় সব গ্রামীণ হাসপাতালে। সোনাখালি গ্রামীণ হাসপাতালে এক কর্মীর কথায়, ‘‘এখানে ২৫-৩০ জন করে রোগী ভর্তি থাকেন। কিন্তু রোগীরা ব্যবহার করেন পুরোন জলাধারের জলই। সেই জলাধার প্রায় সাফ করা হয়ই না।’’ গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘চিকিৎসক ও কর্মীদের জন্য আলাদা ভাবে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে সব হাসপাতালেই। কিন্তু আমার কুড়ি বছরের চিকিৎসক জীবনে কোথাও রোগীদের জন্য পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।’’ অথচ, এই সব হাসপাতালগুলিতেই রোগীদের চাপ বেশি। সব গ্রামীণ হাসপাতালেই এখন সাধারণ প্রসবও হয়। সদ্যোজাত এবং মায়েদের জল ফুটিয়ে খাওয়ানোর নির্দেশ দেন চিকিৎসকেরা।
তেষ্টা মেটাতে জল নিতে হয় এই কল থেকেই। ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল আরও খারাপ। গড়বেতার সন্ধিপুর, চন্দ্রকোনার ভগবন্তপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ অনান্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রয়েছে একটি মাত্র নলকূপ। দীর্ঘদিনের সংস্কার না-হওয়ায় তার জল ঘোলা। সন্ধিপুর গ্রামের অলোক মণ্ডল, কবিতা সরকারেরা বলেন, “বহির্বিভাগে এমনিতেই লম্বা লাইন পড়ে। ফলে তেষ্টা পেলে নলকূপের জল খেয়েই আবার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ি। কী করব?’’
অভিযোগ স্বীকারও করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তিনি বলেন, ‘‘জেলার সমস্ত স্তরের হাসপাতালেই পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার। বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনেও জানানো হয়েছে।’’
ক্ষমতায় আসার পরই স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধীরে ধীরে সুপার স্পেশ্যালিটি থেকে অনান্য হাসপাতালে বিল্ডিং থেকে চিকিৎসক নিয়োগও হচ্ছে।এখন দেখার পযার্প্ত ভাবে সমস্ত স্তরের হাসপাতালে পরিশ্রুত পানীয় জলের সরবরাহ করার বিষয়ে কতটা উদ্যোগী হবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বব্যাঙ্ক বা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ সাহায্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল ফিরতে শুরু করেছে। ঝা চকচকে ভবন তৈরি হচ্ছে। কিন্তু রোগীদের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের যথেষ্ট উদ্যোগ নেই অভিযোগ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আসলে এখন চিকিৎসার মান, চিকিৎসক-নার্সের অভাব প্রভৃতি নিয়েই বেশি চর্চা হয়। পানীয় জলের মতো সামান্য বিষয়ে কেউ নজর দেন না।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy